মে-জুন মাস হচ্ছে সাগরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম। প্রজনন নিরাপদ ও প্রজননের পর রেণু মাছের বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ৬৫ দিন গভীর সমুদ্রে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে টাস্কফোর্স কমিটির সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের জন্য নিবন্ধিত প্রতিটি জেলে পরিবারকে ৮৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
এদিকে দুই মাসের বেশি সময় সাগরে মাছ ধরা বন্ধের ঘোষণায় উপকূলের জেলেরা পরিবার পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
অনেক জেলে জানান, বছর জুড়ে ছিল ইলিশের আকাল। এতে জেলে ও ট্রলার মালিকরা ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। তার ওপর আজ থেকে সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন প্রকৃত জেলেদের সরকারি খাদ্য সহায়তা বাড়ানোর দাবি জানান তারা। জেলে ইউনুস মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে ট্রলার নিয়ে ঘাটে ফিরে এসেছি। এ বছর সাগরে মাছের আকাল ছিল। যতবার গভীর সাগরে মাছ ধরতে গেছি, ততবারই লোকসান গুনতে হয়েছে। এনজিওর লোন নিয়ে মানসিক দুশ্চিন্তায় আছি। আর মহাজনের দাদনের টাকা কেমনে পরিশোধ করব?’ আরেক জেলে ইয়াসিন মিয়া বলেন, ‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের মাত্র ৮৬ কেজি চাল দেওয়া হবে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। এই চালে কিছুই হবে না। সরকারের কাছে প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।’
জেলেরা জানান, বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে বিভিন্ন ধাপে ১৪৭ দিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় লাখো জেলে ও ব্যবসায়ীর মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে। জেলেরা যে সরকারি প্রণোদনা পান তা অপ্রতুল। ফলে তাদের জীবন কাটে চরম দুর্দশা এবং হতাশায়। মা ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ-এপ্রিল ৬০ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ না হতেই আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপকূলীয় জেলেরা। এই ১৪৭ দিন ছাড়াও ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা শিকারের ওপরেও রয়েছে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা। ধাপে ধাপে নিষেধাজ্ঞার ফলে বছরে অল্প যে সময় মাছ শিকারের সুযোগ পাচ্ছেন তা থেকে নিজেদের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরছেই না, বরং ঋণগ্রস্ত হচ্ছে অধিকাংশ জেলেরা ।
অন্যদিকে মৎস্যজীবীদের দাবি, বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞার সুযোগে ভারতীয় ট্রলারগুলো বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ আহরণ করে। তারা ভারত ও বাংলাদেশে একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি করে আসছেন। এ বিষয়ে অবশ্য বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, সাগরে নিষেধাজ্ঞায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এক মাসের পার্থক্য। ভারতের নিষেধাজ্ঞা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, এই সময়ে ভারতীয় জেলেদের বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ নিধনের আশঙ্কা নেই।
জেলেদের জীবনমান ঠিক রাখতে সমস্যাগুলোর গভীরে যাওয়া দরকার। বছরের প্রায় অর্ধেক সময় যদি সরকারি রিলিফের ওপর ভর করে বসে খেতে হয় তাহলে কারো পক্ষেই দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। একেতো অপর্যাপ্ত রিলিফ তার ওপর আছে নানা প্রকার অনিয়ম। এরমধ্যে কোনো জনগোষ্ঠীর জীবনমান থাকার কথা নয়। এক্ষেত্রে সরকারকে জেলেদের জীবন-জীবিকা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। বছরের একটি বড় সময় তাদের বসিয়ে না খাইয়ে তাদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের উপায় খুজতে হবে। আর কত? মূল জনগোষ্ঠীর জীবনমানের কাছাকাছি তো আনতে হবে তাদের।
এ মুহূর্তের সংবাদ