২০২০ সালে করোনা মহামারির শুরুতে চট্টগ্রামে আইসিইউ শয্যার অভাবে অনেক রোগী সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান। এরপর প্রয়োজনের তাগিদে ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে বিশেষায়িত করোনা চিকিৎসার জন্য ১০টি আইসিইউ শয্যা স্থাপন করা হয়। পরে সংখ্যা বাড়িয়ে ১৮টি করা হয়। এরপর দু বছরেরও অধিক সময় ধরে মহামারী মোকাবেলায় এই হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরে এই হাসপাতালের ওপর রোগীদের আস্থাও বৃদ্ধি পায়।
বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও করোনার প্রকোপ বাড়ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলো এরই মধ্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অবস্থা পূর্বের ন্যায় হয়ে পড়েছে। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ১৮টি শয্যার মধ্যে কেবল ১টি আইসিইউ শয্যার ভেন্টিলেটর সচল রয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশির ভাগ শয্যা ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে আটটি শয্যায় রোগী ভর্তি করা গেলেও ভেন্টিলেটর সচল রয়েছে মাত্র একটিতে। সেটিও মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে পড়ে। অন্যগুলোর সঙ্গে কেবল অক্সিজেন সংযোগ থাকলেও জীবন রক্ষাকারী পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়ার মতো ব্যবস্থা নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মেরামতযোগ্য ভেন্টিলেটর ও যন্ত্রপাতির বিষয়ে অনেক আগেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এত দিন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এখন সংক্রমণ বাড়ার পর পাঁচটি শয্যা সচল করার চেষ্টা চলছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আকরাম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আইসিইউ শয্যাগুলো পরিদর্শন করে দেখা হচ্ছে কোনগুলো সচল করা যায়। মেরামতের জন্য অধিদপ্তর থেকে লোক আসবেন। পাশাপাশি আইসিইউ চালাতে নতুন করে জনবল প্রয়োজন। কারণ, আগের অনেকে এখন নেই।
করোনা চিকিৎসায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অক্সিজেন সরবরাহ। ২০২০ সালে এখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করা হয়, যা এখনো সচল রয়েছে। তবে হাইড্রো নজেল ক্যানুলা ও অন্যান্য সরঞ্জাম নতুন করে লাগতে পারে।
এখন সবচেয়ে বড় সংকট জনবল। ২০২০ সালে করোনা ইউনিটের জন্য যে ২২ জন চিকিৎসক সংযুক্তি পেয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে বদলি করা হয়। এরপর আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
বর্তমানে ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের সংখ্যা থাকার কথা ১৭৭জন (২০২৪ সালের কাঠামো অনুযায়ী)। কিন্তু কর্মরত আছেন মাত্র ৪২ জন। এর মধ্যে চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ ২০টি।
জেনারেল হাসপাতালটি কভিড ডেডিকেটেড করা হয়েছিল। এখন আবার সেভাবেই হাসপাতালটিকে সক্ষম করে তোলা দরকার। সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা একটি বড় ব্যাধি। এটি দূর করে চিকিৎসাকেন্দ্রকে সময়োপযোগী করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।
জেনারেল হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়াতে হবে
করোনার প্রকোপ