জেনারেল হাসপাতালে আইসিইউ সেবা যেন বন্ধ না হয়

২০২০ সালের মার্চ থেকে বাংলাদেশে কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সে সময় সরকারিভাবে ২৫০ শয্যার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে সম্পূর্ণ কভিড বিশেষায়িত হাসপাতালে পরিণত করা হয়। এর পর থেকে চট্টগ্রামের করোনা রোগীদের সেখানে ভর্তি করা হচ্ছিল। কিন্তু সে সময় আইসিইউ সুবিধা না থাকায় সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। আইসিইউ না থাকায় বাঁচানো যায়নি অনেককে। ওই বছরের জুনে ১০টি আইসিইউ শয্যা হাসপাতালটিতে বসানো হয়।

পরের বছর ২০২১ সালের এপ্রিলে আরও আটটি আইসিইউ শয্যা হাসপাতালটিকে দেওয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে। সব মিলিয়ে ১৮টি আইসিইউ শয্যা দাঁড়ায় হাসপাতালটিতে। কিন্তু রোগীর চাপ সামাল দেওয়ার মতো হাসপাতালটিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক তখনো ছিল না। সে পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোভিড-১৯ জেনারেল শয্যা ও আইসিইউ ওয়ার্ডের রোগীদের সামাল দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকদের সংযুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয় জেনারেল হাসপাতালে।
মহামারীর সে ভয়াবহ দিনগুলোতে জেনারেল হাসপাতাল অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছিল, প্রচুর রোগীর আস্থা অর্জন করেছিল। হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, কোভিডের আগে এই হাসপাতালে গড়ে রোগী থাকতেন ৭০ থেকে ৮০ জন। কিন্তু কোভিডের সময় থেকে জেনারেল হাসপাতালে রোগী বেড়ে যায়। এখন দিনে গড়ে ১৫০ পর্যন্ত রোগী ভর্তি থাকেন। বহির্বিভাগে সেবা নেন প্রতিদিন সহস্রাধিক রোগী।

কিন্তু সে জেনারেল হাসপাতালটিতে আবার অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯-এর সময় এই হাসপাতালে সংযুক্তিতে আসা ২২ জন চিকিৎসককে একসঙ্গে বদলি করায় এই অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বদলি আদেশের পর ইতিমধ্যে তাঁরা নতুন কর্মস্থলে চলে গেছেন। এ কারণে ২৪ ঘণ্টা আইসিইউ সেবা দেওয়ার মতো চিকিৎসকের সংকট দেখা দেয় হাসপাতালটিতে। একসঙ্গে এত চিকিৎসক চলে যাওয়ায় হাসপাতালের আইসিইউ ছাড়া অন্যান্য বিভাগগুলোতে সন্তোষজনক সেবা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক মো. আবদুল মান্নান প্বলেন, ‘ ২২ জন চিকিৎসক একসঙ্গে চলে যাওয়ায় এখানে সেবার ব্যাঘাত ঘটছে স্বাভাবিকভাবেই। আমরা চিকিৎসক চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছি। যে পরিমাণ চিকিৎসক বর্তমানে রয়েছেন, তা দিয়ে ২৪ ঘণ্টার আইসিইউ সেবাদান অসম্ভব হয়ে পড়েছে।’
বিত্তবানদের জন্য অনেক সুবিধা আছে কিন্তু বিত্তহীনদের অবলম্বন সরকারি হাসপাতালগুলো। ফলে চট্টগ্রাম জেলাসহ আশেপাশের কয়েকটি জেলার সাধারণ মানুষের অবলম্বন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতাল। এখন সেখানে যদি চিকিৎসক সংকটের কারণে চিকিৎসা না হয় তাহলে তারা যাবে কোথায়? আইসিইউ-এর মতো ব্যয়বহুল চিকিৎসা তারা করাবে কোথায়?