জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় সংলাপ চলছে

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শুরু হয়েছে সর্বদলীয় রাজনৈতিক সংলাপ। ছবি: সংগৃহীত

সুপ্রভাত ডেস্ক »

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শুরু হয়েছে সর্বদলীয় রাজনৈতিক সংলাপ।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় এই সংলাপ শুরু হয়। সেখানে যোগ দিয়েছেন রাজনৈতিক দল ও অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির নেতারা।

নির্ধারিত সময়ের আগেই ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রবেশ করেন তারা। বিএনপির এক সদস্যের প্রতিনিধি দলে উপস্থিত রয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দীন আহমেদ। জামায়াতের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
 
এছাড়া গণতন্ত্রমঞ্চ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি ও অন্যান্য দলের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত হয়েছেন। সংলাপে জুলাই ঘোষণাপত্রে কী থাকবে এবং তা প্রকাশের দিন নির্ধারণ করা হবে। আলোচনা শুরুর আগে রাজনৈতিক নেতারা নিজ নিজ দলের পক্ষে নিজস্ব মতামত দেয়ার কথা জানান।
 
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।
 
গত ২৯ ডিসেম্বর ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনা হয়। এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানান, ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দেয়া হবে। সংগঠনের নেতারা ঘোষণাপত্রে দুটি মৌলিক বিষয়ের উল্লেখ করেন। তাতে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ হিসেবে আখ্যায়িত করে এর ‘কবর’ রচনা করা এবং ‘নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে’ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করার কথা থাকবে।
 
এ নিয়ে ৩০ ডিসেম্বর রাতে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার মধ্যে রাত পৌনে ৯টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।
 
সরকারের এ ঘোষণার পর ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করা হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে রাজধানীর বাংলামটরে বৈঠকে বসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা।
 
সেখানে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে শহীদ মিনারে তাদের পক্ষ থেকে ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভোলিউশন’ আসার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ তৈরির ঘোষণা দেয়ায় সেটাকে তারা সাধুবাদ জানাচ্ছেন। কেননা রাজনৈতিক দলগুলোসহ আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের আন্দোলনে অংশ নেয়া সব পক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে সরকার এটা করলে তা স্থায়ী হবে।
 
পরে ঘোষণাপত্র নয়, ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ পালন করার ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
 
সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, তবে ওই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে।
 
এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গত ৯ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যেহেতু সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাই ১৫ জানুয়ারির পর কিছু সময় বাড়তে পারে। তবে খুব বেশি দেরি হবে না।
সবশেষ গতকাল বুধবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে সর্বদলীয় বৈঠকের সময় ও স্থানের কথা জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঘোষণাপত্রের ওপর একটি সর্বদলীয় বৈঠকের করবে। এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি দলিল প্রণীত হওয়ার কথা