জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতেন সালমান ও আনিসুল

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতেন সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক। ট্রাইব্যুনালে এ তথ্য জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি উল্লেখ করেন, তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্দেশে ২৮৬টি মিথ্যা মামলায় সাড়ে চার লাখ ছাত্র-জনতাকে আসামি করা হয়েছিল।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ শুনানি হয়। অপর সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কারফিউ দিয়ে গণহত্যায় উসকানির দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে এদিন শুনানি হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে আসামি করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এসবের ওপর শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর।

প্রথমেই সালমান ও আনিসুলের ব্যক্তিগত দায় পড়ে শোনান তাজুল ইসলাম। একপর্যায়ে তাদের একটি ফোনালাপ বাজিয়ে শোনানো হয়। ফোনালাপটি ২০২৪ সালের ১৯ জুলাইয়ের। এরপরই সুনির্দিষ্ট পাঁচটি অভিযোগ আলাদা আলাদা পড়েন তিনি।

প্রথমত, চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন দমনে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতেন সালমান ও আনিসুল। এর পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯ জুলাই ফোনে কথা বলেন তারা। তাদের কথোপকথনের একপর্যায়ে শোনা যায়— ওদের শেষ করে দেওয়া। অর্থাৎ ‘আজ রাতেই কারফিউ জারির মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের শেষ করে দিতে হবে’ বলে জানান সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

এরই ধারাবাহিকতায় ২২ জুলাই ব্যবসায়ীদের নিয়ে গণভবনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন সালমান এফ রহমান। ওই বৈঠকে জীবন দিয়ে হলেও হাসিনার পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যেই আইনমন্ত্রীর নির্দেশে ২৮৬টি মিথ্যা মামলা করা হয়। যেখানে সাড়ে চার লাখ ছাত্র-জনতাকে আসামি করা হয়েছিল। তাদের এমন ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র ও প্ররোচনায় প্রাণ দিয়েছেন বহু ছাত্র-জনতা। তবু নির্যাতন বন্ধে কোনও ব্যবস্থা নেননি তারা।

দ্বিতীয়ত, সালমান-আনিসুলের জ্ঞাত অনুসারে ২৩ জুলাই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। অর্থাৎ তাদের প্ররোচনা-উসকানিতে মিরপুরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় বাহিনী।

তৃতীয়ত, মারণাস্ত্র ব্যবহারে প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র করেছিলেন এই দুই প্রভাবশালী। তাদের উসকানি ও সহায়তায় ২৮ জুলাই মিরপুর-১০ এ আক্তারুজ্জামানকে জীবন দিতে হয়। আহত হন আরও অনেকে।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, কারফিউ জারির মাধ্যমে মারণাস্ত্র ব্যবহারে উসকানি-প্ররোচনায় ৪ আগস্ট মিরপুর-১ এ আকাশ, সেতু, আলভীসহ ১২ জনকে হত্যা করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

পাঁচ নম্বরে বলা হয়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঠেকাতে পরিকল্পনা করেন সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক। তাদের নির্দেশে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের হামলায় মিরপুর-২, ১০ ও ১৩ নম্বরে আল-আমিন, আশরাফুল, সাব্বির, রিতাসহ ১৬ জন হত্যার শিকার হন।

ব্যাপকমাত্রা ও পদ্ধতিগত অপরাধ করেছেন সালমান ও আনিসুল। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই গঠনের জন্য আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পরে আসামিপক্ষে শুনানির জন্য সময় চান সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। তার আবেদন মঞ্জুর করে সালমান-আনিসুলের পক্ষে শুনানির জন্য আগামী ৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।