বাসস »
বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইকোনমিক পার্টনারশীপ এগ্রিমেন্ট (ইপিএ) নেগোসিয়েশন প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু ইপিএ নেগোসিয়েশন এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এসময় বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) পর্যায় থেকে উত্তরণের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার সুবিধা হারাবে। এমতাবস্থায় ২০২৬ সালের পরও যেন শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া যায়-এমন প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশ জাপানের সঙ্গে ইপিএ স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে আজ উভয় দেশের মধ্যে ইপিএ নেগোসিয়েশন এর সূচনা হলো।
ইপিএ নেগোসিয়েশন এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাপানের সঙ্গে ইপিএ স্বাক্ষর বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়া মসৃন করবে। ইপিএর মাধ্যমে উভয় দেশের পারস্পারিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন,স্বাধীনতার পর থেকে জাপান বাংলাদেশের স্ট্রাটেজিক উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে সহযোগিতা করে আসছে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে যে সহযোগিতা পেয়ে আসছে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরেও সেই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাপান সরকারের সহযোগিতার প্রশংসা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাপানের সহযোগিতায় মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের কাজ শেষ হতে যাচ্ছে। ঢাকায় মেট্রোরেল ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। এসব অবকাঠামো উন্নয়ন বলে দেয় জাপান বাংলাদেশের কতটা বিশ্বস্ত বন্ধু।
অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, ইপিএ চুক্তি কেবল শুল্ক কমানোর মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে না, পাশাপাশি কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতি ও বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ঘটাবে।
তিনি বলেন, ইপিএ নেগোসিশেনে পণ্য ও সেবার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কাস্টমস প্রক্রিয়া, পণ্যের মেধাস্বত্ত্ব, ট্রেড ফ্যাসিলেটেশনসহ বিভিন্ন বিষয় স্থান পাবে।
জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যেকার ইপিএ চুক্তি এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিকাশে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, ২০২৬ সালের আগে জাপানের সঙ্গে ইপিএ স্বাক্ষর না হলে সেদেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৮ শতাংশ হারে শুল্ক গুণতে হবে। সেজন্য বাংলাদেশ ইপিএ স্বাক্ষরের লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এবারের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনকালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরেও যেন শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখা হয় বাংলাদেশ সকল দেশকে সেই অনুরোধ করেছে।
তিনি বলেন, জাপানের সঙ্গে ইপিএ করার পর সেদেশের সরকার বিবেচনা করবে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিবে কিনা। তবে বন্ধুপ্রতিম জাপান সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা রয়েছে।
উল্লেখ্য, জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে ইপিএ স্বাক্ষরের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে যৌথ সমীক্ষা চালানো হয়েছে এবং সমীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। সমীক্ষার ভিত্তিতে উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণে ১৭টি সেক্টরকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ট্রেড নেগোসিয়েটিং কমিটি খুব শীঘ্রই নেগোসিয়েশন সভায় মিলিত হবেন।