জানো নাকি?

মরিচখেকো মাছ

মাছ মরিচ খাচ্ছে- এমন একটি দৃশ্য কল্পনা করেছ কখনও? একটি পুকুরের মালিক জানিয়েছেন, তিনি প্রতিদিন তাঁর পুকুরের মাছগুলোকে নানা ধরনের ৫ হাজার কেজি মরিচ খাওয়ান। তাঁর দাবি, এতে মাছগুলো দেখতে আরও চকচকে হয় এবং স্বাদেও ভালো লাগে।
এই পুকুরটি চীনের হুনান প্রদেশের চাংশায় অবস্থিত। এই এলাকা চীনের ঝাল খাবারের জন্য বিখ্যাত। সম্প্রতি এই পুকুরের মাছকে মরিচ খাওয়ানোর ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে এটি ভাইরাল হয়ে যায়।
পুকুরটি দেখভাল করেন ৪০ বছর বয়সী মাছচাষি জিয়াং শেং ও তাঁর স্কুলজীবনের বন্ধু কুয়াং কে।
কুয়াং বলেন, পুকুরটির আয়তন প্রায় ১০ একর। আর এখানে ২ হাজারের বেশি মাছ আছে। এসব মাছকে নিয়মিত নানা ধরনের মরিচ খাওয়ানো হয়।
পুকুরের মালিক বলেন, ‘আমরা দিনে প্রায় ৫ হাজার কেজি মরিচ খাওয়াই। মানুষের খাওয়ার মতো একই মরিচই মাছকে খাওয়ানো যায়। এই মরিচের মধ্যে লম্বা ও ছোট দানাদার মরিচ রয়েছে। এই মরিচ খাওয়ার পর মাছের শরীরের গঠন আরও সুন্দর হয়, স্বাদ উন্নত হয়। আর আঁশগুলো ঝকঝকে সোনালি রঙের মতো দেখায়।’
কুয়াং আরও বলেন, ‘শুরুর দিকে মাছ মরিচ খেতে চাইত না। কিন্তু যখন ঘাস আর মরিচ একসঙ্গে দিই, তারা ঘাস না খেয়ে মরিচই খেতে পছন্দ করছে। আমরা ঝাল খেলে পানি খাই। তারা তো পানিতেই থাকে, তাই ঝাল লাগলে বেশি পানি খেয়ে নেয়।’
জিয়াং ব্যাখ্যা করে বলেন, মানুষের মতো মাছের স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা নেই। তারা মূলত ঘ্রাণের মাধ্যমে খাবার চেনে। তাই মরিচের ঝালে তাদের সমস্যা হয় না।
জিয়াং বলেন, মরিচে অনেক ভিটামিন থাকে, যেমনটা থাকে জলজ উদ্ভিদে। আর মাছ এগুলো খুব পছন্দ করে। মরিচ খাওয়ালে মাছের অন্ত্র সুস্থ থাকে এবং মানসিক চাপও কমে। মরিচে থাকা ক্যাপসাইসিন মাছের অন্ত্রের নড়াচড়া বৃদ্ধি করে। ফলে হজম ও পুষ্টি শোষণ ভালো হয় এবং মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। জিয়াং বলেন, তা ছাড়া মরিচ মাছের শরীরে পরজীবী লাগা থেকেও রক্ষা করে। সাধারণ খাবারের তুলনায় মরিচ খাওয়া মাছের মাংস অনেক নরম ও সুস্বাদু হয়।

গেছো কুমির

তোমরা তো নিশ্চয় শুনেছো প্রবাদটি- ‘জলে কুমির ডাঙায় বাঘ’। চতুর্দিকে বিপদ হলে এমন কথা বলা হয়ে থাকে। সাধারণত আমরা জানি, কুমির জলে বাস করে তাই না?। এবার পড় তাহলে-
অস্ট্রেলিয়ায় বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন দেশটির সবচেয়ে প্রাচীন কুমিরের ডিমের খোসা। ধারণা করা হচ্ছে, এই ডিমগুলো ছিল ‘ড্রপ ক্রোক’-দের, অর্থাৎ এমন এক প্রজাতির কুমির যারা গাছে চড়ে শিকার ধরত!
প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বছরের পুরনো এই ডিমের খোসাগুলো কুইন্সল্যান্ডের এক মেষ খামারির বাড়ির উঠোন থেকে আবিষ্কার করা হয়েছে। এই যুগান্তকারী গবেষণার ফলাফল জার্নাল অফ ভার্টিব্রেট প্যালিওন্টোলজি-তে প্রকাশিত হয়েছে।
ডিমের খোসাগুলো মেকোসুকাইন নামক এক বিলুপ্ত কুমির প্রজাতির, যারা সেই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে বাস করত, যখন অস্ট্রেলিয়া, অ্যান্টার্কটিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা একই মহাদেশের অংশ ছিল।
এই গবেষণার সহ-লেখক অধ্যাপক মাইকেল আর্চার বলেন, ‘ড্রপ ক্রোক’-এর ধারণাটি বেশ ‘অদ্ভুত’। তবে তাঁর মতে, কিছু কুমির হয়তো ‘চিতাবাঘের মতো শিকার করত গাছের ডাল থেকে লাফিয়ে পড়ে নিচে থাকা যেকোনো নিরীহ প্রাণীকে রাতের খাবার বানিয়ে ফেলত।’
নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাশ্মবিজ্ঞানী অধ্যাপক আর্চার জানান, আজ থেকে সাড়ে পাঁচ কোটি বছর আগে এই মেকোসুকাইন কুমিরদের (যারা প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারত) সংখ্যা ছিল প্রচুর। তাদের অনেক পরেই, প্রায় ৩৮ লক্ষ বছর আগে, অস্ট্রেলিয়ায় আজকের নোনা পানি ও মিষ্টি পানির কুমিরদের আগমন ঘটে।
‘ড্রপ ক্রোক’-এর ডিমের খোসাগুলো কয়েক দশক আগে আবিষ্কৃত হলেও, সম্প্রতি স্পেনের বিজ্ঞানীদের সহায়তায় সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
‘ড্রপ ক্রোক’ সম্পর্কে অধ্যাপক আর্চার আবারও বলেন, ‘এটি একটি অদ্ভুত ধারণা,’ তবে কিছু কুমির সম্ভবত ‘জঙ্গলের মধ্যে মাটিতেও শিকার করত।’
এই আবিষ্কারটি কুইন্সল্যান্ডের অন্য একটি স্থানে পাওয়া ২৫ মিলিয়ন বছরের পুরনো মেকোসুকাইন জীবাশ্মের পূর্ববর্তী আবিষ্কারগুলোকে আরও শক্তিশালী করেছে।
অধ্যাপক আর্চার বলেন, ‘কিছু কুমির যে আংশিকভাবে গাছে চড়ত, সেই ‘ড্রপ ক্রোক’-এর প্রমাণও মিলেছে।’
১৯৮০-এর দশকের শুরু থেকে, তিনি একদল বিজ্ঞানীর সঙ্গে ব্রিসবেন থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার (১৬৮ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি ছোট আঞ্চলিক শহর মারগনের একটি কাদামাটির খনিতে খননকাজ চালাচ্ছেন।
কয়েক দশক ধরে এই জায়গাটি অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রাচীন জীবাশ্ম ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, কারণ একসময় এটি এক ঘন, সবুজ অরণ্যে ঘেরা ছিল।
রিপোর্টের আরেক সহ-লেখক ড. মাইকেল স্টেইন বলেন, ‘এই জঙ্গলটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন গায়ক পাখি, অস্ট্রেলিয়ার প্রথম দিকের ব্যাঙ ও সাপ, দক্ষিণ আমেরিকার সাথে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বাদুড়ের আবাসস্থল।’
অধ্যাপক আর্চার ১৯৮৩ সালের একটি স্মৃতিচারণা করে বলেন, তিনি এবং তাঁর এক সহকর্মী ‘গাড়ি চালিয়ে মারগনে গিয়েছিলেন, রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে, বেলচা হাতে নিয়ে এক বাড়ির দরজায় কড়া নাড়েন এবং জিজ্ঞেস করেন, ‘আমরা কি আপনার বাড়ির উঠোন খুঁড়তে পারি?’
‘যখন আমরা তাঁদের বোঝালাম যে তাঁদের মেষ চারণভূমির নিচে হয়তো প্রাগৈতিহাসিক সম্পদ লুকিয়ে আছে এবং এই এলাকায় ইতিমধ্যেই কচ্ছপের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে, তখন তাঁরা হেসে বললেন, ‘অবশ্যই!’
‘এবং এটা স্পষ্ট যে, ১৯৮৩ সাল থেকে আমরা এই জায়গা থেকে যত চমৎকার প্রাণীর জীবাশ্ম পেয়েছি, তাতে আমরা নিশ্চিত যে আরও খনন করলে আরও অনেক বিস্ময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।’