বুধবার ভোরে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় ভাওয়াল ও রাজেন্দ্রপুর রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে ফেলায় ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে একজন যাত্রী নিহত ও লোকো মাস্টারসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন। পুলিশ বলছে দুর্বৃত্তরা রেললাইন গলাতে অক্সিঅ্যাসিটিলিনের ব্যবহার করেছে এবং স্লিপার কেটে ফেলায় অন্তত একশো মিটার লাইন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে, যার ফলে লাইনটির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নূরুল ইসলাম বলেছেন এটি নাশকতার ঘটনা, কারণ রেললাইনকে অক্সিঅ্যাসিটিলিনের মাধ্যমে গলিয়ে ফেলা হয়েছে। এই রেললাইন গলানোর জন্য দুই হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা দরকার হয়।
তবে এ ঘটনার পর দেশজুড়ে বিস্তৃত রেললাইনের নিরাপত্তার বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে এবং রেল কর্মকর্তারা বলছেন এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে আরও কিছু পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, নাশকতার বিষয়টি নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন। রাতের বেলায় আমরা বেশি শঙ্কিত। প্রত্যন্ত অঞ্চল এবং নদী, খাল, বিলের পাশ ও উপর দিয়ে রেললাইন গেছে। যার কারণে পুরো এলাকা পাহারা বসানো সম্ভব নয়। সামর্থ্য অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সার্বক্ষণিক পাহারা এবং ‘অ্যান্ডভান্স পাইলট সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। ট্রেন যাওয়ার আগে একটি ইঞ্জিন বা ট্রলি গিয়ে রেল লাইন ঠিক আছে কি না তা দেখে নেয়, যেটিকে অ্যাডভান্স পাইলট সিস্টেম বলা হয়ে থাকে।
বিবিসির তথ্যমতে, বাংলাদেশে এখন রেললাইনের দৈর্ঘ্য মোট প্রায় চার হাজার কিলোমিটারের কাছাকাছি। ওয়েম্যান সাধারণত এক একটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রতি দুই বা তিন কিলোমিটার করে তদারকি করে। কোথাও লাইনের কোন ক্ষতি দেখলে বা অস্বাভাবিক কোনো কিছু পরিলক্ষিত হলে তারা কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে পুলিশকে অবহিত করে।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে-পরে দেশজুড়ে নাশকতা হয়েছিল। তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে রেল লাইন উপড়ানো, ফিসপ্লেট খুলে ফেলা, আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছিল।
সেসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছিল। তখনও একই ধরনের ‘অ্যাডভান্স পেট্রোলিং ট্রেন’ চালু করা হয়েছিল।
আসলে যতকিছুই করা হোক সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা এত বিশাল রেলওয়ে নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা বিধান করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এটার দায়িত্ব নিতে হবে জনগণকে। ভাবতে হবে আমাদের রাজনৈতিক মত পার্থক্য থাকতে পারে, রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকতে পারে, সরকারের প্রতি অনাস্থা থাকতে পারে কিন্তু তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেশ ও জনগণের সম্পত্তি বিনষ্ট করা, অসহায় মানুষের প্রাণহানি ঘটানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ২০১৪ সালের আবার পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ, বাস-ট্রেনে হামলা, অগ্নিসংযোগের মতো পরিস্থিতি আবার দেখতে চায় না মানুষ। রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে কোন কাজে জনগণের মঙ্গল হবে। কোনটায় ক্ষতি হবে। রাজনীতি যদি মানবসেবার উদ্দেশ্যে হয় তাহলে সেই রাজনৈতিক কর্মসূচি মানুষের মৃত্যু বা ক্ষতির কারণ হবে কেন?
স্বাধীন দেশের রাজনীতি কেন ঔপনিবেশিক আমলের আন্দোলনের মতো হবে। রেলওয়ে একটি জাতীয় গণপরিবহন সংস্থা। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক কোনো একক রাজনৈতিক দল নয়। এর মালিক জনগণ। জনগণের সম্পত্তি ধ্বংস করার অধিকার কারো নেই।
এ মুহূর্তের সংবাদ