জাতিসংঘ পার্কটি এখন সন্ধ্যা হলে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এলাকার স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় এই পার্কে সন্ধ্যার পর আর মানুষ ভয়ে হাঁটে না। প্রতিদিন কোনো না কোনো অপরাধের ঘটনা ঘটে। মাদক সেবনের নিরাপদ স্থান হিসেবে বিভিন্ন মাদকসেবীরা স্থানটি ব্যবহার করছে। সুপ্রভাত বাংলাদেশে এ বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
জাতিসংঘ পার্কে চসিকের নিয়োগপ্রাপ্ত ইনচার্জও বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন সন্ধ্যার পর বিভিন্ন এলাকার মাদকসেবীরা জমায়েত হয়ে এই পার্কে মাদক সেবন করে। পার্কটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত পড়ে থাকাতেই অপরাধীরা নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে। কিছুদিন আগেও এই এলাকা থেকে এক ব্যক্তির ৭ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকবার মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। জনশূন্য পরিবেশ হওয়াতেই দিনেও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
অথচ চসিকের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলছেন উল্টোটা। তাঁর ভাষ্য জাতিসংঘ পার্কে মাদকসেবীরা থাকতে পারে না। স্থানটি তিনি নিয়মিত তদারকি করেন। ওয়ার্ডের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা দিনে দু’বার পার্কটি পর্যবেক্ষণ করে। এখনো পর্যন্ত তাঁর কাছে অপরাধের তথ্য আসেনি।
৬৯ একর আয়তনের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বে। এর মাঝে ২ দশমিক ১৭ একর আয়তনের ওই উদ্যানের নাম ছিল ‘পাঁচলাইশ পার্ক’।
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী মেয়র থাকাকালে ১৯৮৮ সালে গণপূর্ত অধিদপ্তর সংস্কার ও ব্যবস্থাপনার জন্য পার্কের দায়িত্ব দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হাতে। ২০০২ সালে মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী পার্কের নাম দেন ‘জাতিসংঘ পার্ক’। আর মনজুর আলম সেখানে বানান সুইমিং পুল ও জিমনেশিয়াম।
গত এক দশকে এই উদ্যান ঘিরে বারবার দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। তাতে সুরাহা হয়নি, বরং নাগরিকরা পার্ক ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত থেকেছে।
মনজুর আলমের পর আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র থাকাকালে ২০১৬ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ২৫ বছরের জন্য পার্কটি ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এরপর এলিট পার্ক লিমিটেড সেখানে কমিউনিটি সেন্টার, গেস্ট হাউজ ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করলে তখনকার গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিরোধিতা করেন। এ নিয়ে মোশাররফ ও নাছিরের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ পায়।
পার্কে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের বিরোধিতা করে কল্যাণ সমিতি রিট করলে ইজারা প্রক্রিয়া স্থগিতের নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।
পরে ২০১৭ সালে পার্কের উন্নয়নে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি নতুন প্রস্তাব দিলে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় আপত্তি জানায় সিটি করপোরেশন।
নাছিরের মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর মহামারিতে নির্বাচন আটকে থাকায় সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্বে আসেন খোরশেদ আলম সুজন। সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সাথে আলোচনা করে তিনি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রকল্পের বিষয়ে লিখিত অনাপত্তিপত্র দেন।
পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার ভেতরে সেই জাতিসংঘ পার্ক এখন ১২ কোটি টাকায় নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
গণপূর্ত বিভাগের ধীরগতির কারণে পার্কটির উন্নয়নের কাজ শেষ হচ্ছে না। গণপূর্ত বিভাগ চট্টগ্রাম-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য হচ্ছে চসিকের অনেক যন্ত্রপাতি এখানে পড়ে আছে। চসিক তাদের মালামালগুলোর জন্য ইতিমধ্যে নিলাম ঘোষণা করেছে। তারা মালামাল নিয়ে গেলে পার্কটির উন্নয়নের কাজে গতি আসবে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ।
জাতিসংঘ পার্ক নিয়ে বিরোধ ও নানা জটিলতায় কাজ সম্পন্ন্ না হওয়ার জেরে বছরের পর বছর বিনা দোষে শাস্তি পাচ্ছেন পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার বাসিন্দরা। পার্কটি নতুন করে সাজানোর কাজটি দ্রুত শেষ করা জরুরি।
এ মুহূর্তের সংবাদ