কর্মশালায় চেম্বার সভাপতি
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, খাতুনগঞ্জে ২০০৪ সাল থেকে জলাবদ্ধতার কারণে দোকান ও গুদামের মালামাল নষ্ট হয়ে শত শত কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তিনি চাকতাই খালকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি গতকাল ১৫ নভেম্বর সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
দি চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন ও ইউএনডিপি’র যৌথ উদ্যোগে ‘ইকনোমিক ইমপেক্ট অব ওয়াটারলগিং অন লোকাল ট্রেড: দ্যা কেইস স্ট্যাডি অব খাতুনগঞ্জ, হোলসেল কমোডিটি মার্কেট চট্টগ্রাম’ শীর্ষক এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
চেম্বার সভাপতি চট্টগ্রাম বন্দর তথা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে কর্ণফুলী নদী ড্রেজিং করা, নালা নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা, চাকতাই খালকে নৌ-চলাচলের উপযোগীকরণ, খালের মাটি দ্রুত উত্তোলন ও গভীরতা নিশ্চিত করা, খালের দুই পাড়ে রাস্তা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, মিঠা পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থাকরণ এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের অনুরোধ জানান।
খাতুনগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয় তা নিরুপণে পরিচালিত সমীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্টের উপর স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়ার লক্ষ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্ল্যানিং কমিশন প্রোগ্রাম ডিভিশনের চিফ (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার আহসান হোসেন, জয়েন্ট চিফ ও প্রকল্প পরিচালক-এনআরপি ড. নুরুন নাহার, বুয়েটের ফ্যাকাল্টি অব আর্কিটেকচার অ্যান্ড প্ল্যানিং’র ডিন প্রফেসর খন্দকার শাব্বির আহমেদ, চেম্বার পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) ও অঞ্জন শেখর দাশ, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ, চট্টগ্রামের চ্যাপ্টার চেয়ারম্যান নাজমুল লতিফ, চসিকের চিফ সিটি প্ল্যানার আর্কিটেকচার এ কে এম রেজাউল করিম ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড
অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথি প্ল্যানিং কমিশন প্রোগ্রাম ডিভিশন’র চিফ (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার আহসান হোসেন বলেন, যেকোন সমস্যা সমাধানে গবেষণা ও সমীক্ষা পরিচালনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাতুনগঞ্জ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয় তা নিরুপণের লক্ষ্যে এই রিসার্চ করা হয়। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর পেশ করা হবে। তিনি এই জলাবদ্ধতা দূরীকরণে চিটাগং চেম্বারকে অগ্রণী ভূমিকা পালনসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
জয়েন্ট চিফ ও প্রকল্প পরিচালক-এনআরপি ড. নুরুন নাহার জলাবদ্ধতাকে চট্টগ্রামের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করে পরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এর সমাধান সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তিনি কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত পরামর্শ ও নির্দেশনা এ সমীক্ষাকে আরও সমৃদ্ধ করবে উল্লেখ করে নীতি নির্ধারকদের কাছে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান।
প্রফেসর খন্দকার শাব্বির আহমেদ সমীক্ষা রিপোর্টকে বিজ্ঞানসম্মত উল্লেখ করে বলেন, রাজপথগুলো কাজে লাগিয়ে নগরীর বিন্যাস পুনরুদ্ধার করা যায়। তিনি এ সমীক্ষার উপর ভিত্তি করে আরও পর্যালোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা এবং সরকারি, আন্তর্জাতিক বিশেষ করে জলবায়ু তহবিল ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন।
চেম্বার পরিচালক মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) বলেন, খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ, কোরবানীগঞ্জ, চাকতাইসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যমান নালা নর্দমা একটির সঙ্গে অপরটির সংযুক্ত হলেও তা হারিয়ে গেছে। এসব সংযোগ পুনরুদ্ধার করে আপাতত স্বল্পমেয়াদি সমাধানের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের বিষয় বিবেচনার আহ্বান জানান।
সূচক বক্তব্যে চেম্বার পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ নাগরিকদের সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করে খাতুনগঞ্জকে ইতালির ভেনিস নগরীর আদলে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে কানেক্টিভিটি উন্নয়নের অনুরোধ জানান।
এ ছাড়া চেম্বার পরিচালকবৃন্দ এ কে এম আক্তার হোসেন, মো. আবদুল মান্নান সোহেল, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর ও সাকিফ আহমেদ সালাম, ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি জাহিদুল হক, এনআরপি’র সহকারী প্রকল্প পরিচালক ফাতেমা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। স্টাডি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন এনআরপি’র কনসালটেন্ট ড. রিয়াজ আক্তার মল্লিক, ড. নজরুল ইসলাম, ড. আবু তৈয়ব মো. শাহজাহান ও সুমাইয়া বিনতে মামুন।
অন্য বক্তারা চট্টগ্রামে বেদখল ও ভরাটকৃত খালসমূহ পুনরুদ্ধার, নদীর পাড় উন্নয়ন করে পর্যটন প্রসার, প্রয়োজনে বসতি স্থানান্তর, প্রাকৃতিক জলাধার রক্ষা করা, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, পাহাড়ি মাটি খাল-নালায় না আসা, এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করা, নালা ও খালে বর্জ্য নিক্ষেপের ক্ষেত্রে জনগণের আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে উক্ত এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হবে। বিজ্ঞপ্তি