যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্রান্থাম রিসার্চ ইনস্টিটিউট গত অক্টোবরে ‘অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ইকোনমিকস’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে তারা দেখিয়েছে, বাংলাদেশে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ৪৬ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষণায় ২০২২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে আঘাত হানা দুর্যোগগুলোর তথ্য নেওয়া হয়েছে। তবে গবেষকেরা মনে করছেন, এ বছরের আবহাওয়ার তথ্যগুলো যোগ করলে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া বৃদ্ধির হার বাড়বে। আর বিশ্ব আবহাওয়া বিষয়ক সংস্থা ডব্লিউএমও জানিয়েছে, ২০২৩ সালের চেয়েও ২০২৪ সালের আবহাওয়া আরও ভয়ংকর ও চরমভাবাপন্ন আচরণ করতে পারে। এতে বিশ্বজুড়ে দুর্যোগের বিপদ তো বটেই, রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাবও বাড়তে পারে।
১৯৭১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে প্রতি দুই থেকে তিন বছরে একটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করত, আর সেখানে ২০২৩ সালেই চারটি ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এ বছর এ নিয়ে দেশে ৫ মাত্রার ওপরে মোট ছয়টি ভূমিকম্প আঘাত করেছে। এর আগে ২০২২ সালে মাঝারি মাত্রার বা রিখটার স্কেলে ৫–এর ওপরে মোট তিনটি ভূমিকম্প হয়। অথচ ১৯৭২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যে কটি ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে, তার মধ্যে মাঝারি মাত্রার কম্পনের ঘটনা ঘটেছে প্রতি দুই থেকে চার বছরে একবার। আর এ বছর ৪ থেকে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে মোট ৪৮টি। নিয়মিত ওই কম্পন রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর জন্য বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রায় ৪৩ শতাংশ গ্রামীণ বসতি বন্যার কবলে পড়ে। আর প্রায় ৪১ শতাংশ বসতি ঝড়ের আঘাতের শিকার হয়।
প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ দাবদাহ, বজ্রপাত ও শৈত্যপ্রবাহের মতো দীর্ঘমেয়াদি দুর্যোগের কারণে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা থেকে প্রায় তিন মিটার উঁচুতে থাকা হাওর এলাকায় কয়েক বছর পরপর হঠাৎ বন্যা হয়। এর বাইরে খরা ও উপকূলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার সমস্যাও বাড়ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে বজ্রপাতেও মৃত্যু বেড়ে গেছে। প্রতিবছর তিন শতাধিক মানুষ বজ্রপাতে মারা যান। নতুন এ দুর্যোগ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশে অবনতি হচ্ছে দাবদাহ পরিস্থিতিরও। ২০২২ সালটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম উষ্ণ বছর ছিল।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সামনের দিনগুলো বাংলাদেশের জন্য অশনিসংকেত ডেকে আনছে। বিশ্বজুড়ে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও বাংলাদেশে এর প্রভাব প্রকট। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায় যতটা সতর্ক হওয়া উচিত ছিল ততটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পাহাড়কাটা, নদী ভরাট ও দূষণ, গাছকাটা, নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলন কোনোটাই থামানো যাচ্ছে না। এসব করতে গিয়ে এক শ্রেণির মানুষ পুরো দেশকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার কঠোর না হলে দেশের এত উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা সব বিফলে যাবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ