সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আজ আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটছে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। শুক্লপক্ষের ষষ্ঠ তিথিতে যে দুর্গা দেবীর অর্থাৎ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে যিনি দুর্গতিনাশিনী ও শক্তিরূপে পূজিত তার আগমন ঘটে মর্ত্যলোকে। তাকে আজ আরেক শরৎকাল পর্যন্ত বিদায় জানানো হবে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। দুর্গতিনাশিনী দুর্গা অশুভশক্তির বিরুদ্ধে শুভশক্তির বিজয় হিসেবে চিহ্নিত। দেবী দুর্গা ফিরে যাবেন কৈলাসে। মহালয়ার মধ্য দিয়ে যে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছিল, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ঘটেছে তার সমাপণ। আগামী শরতে আবার ফিরে আসবেন আনন্দময়ী দেবী দুর্গা বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে- এমন প্রত্যাশা নিয়েই মাকে বিদায় জানাবেন অগণিত ভক্ত।
ধর্ম যার যার, উৎসব সবার- এ আদর্শে দেশে যথারীতি ধর্মীয় সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব পালনের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও কল্যাণময় অবস্থানের বিকাশ আরও বিস্তৃত এবং বিকশিত হয়। উপরন্তু অশুভ শক্তির পরাজয় ঘটিয়ে মঙ্গলদায়ক, শুভশক্তি ও ইতিবাচক চেতনার সম্প্রসারণ ঘটে।
অসুরকুলের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন দুর্গতিনাশিনী দুর্গা। সেই থেকে বিজয় ঘটে শুভশক্তির। দেবীর আগমন ঘটে অন্যায়ের বিনাশ ঘটিয়ে সজ্জনদের প্রতিপালনের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষের মধ্যে নৈতিক আদর্শ জাগ্রত করার জন্য। মানুষের চিত্ত থেকে যাবতীয় দীনতা ও কলুষতা দূরীভূত করার জন্য। এজন্য দুর্গোৎসব ধর্মীয় উৎসব হলেও তা পরিণত হয়েছে সর্বজনীন উৎসবে। সম্প্রদায়গত বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে এক পরম আনন্দের সোপানে দাঁড় করিয়েছে শারদোৎসব। শারদীয় দুর্গোৎসব সবার জন্য উন্মুক্ত। দেবী দুর্গার আগমনী আনন্দকে সবাই ভাগাভাগি করে নিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। কারণ, বাঙালি জাতি নিরন্তর উৎসবমুখর পথে চলতে পছন্দ করে। এই পছন্দের স্রোতধারায় গত ক’দিন ভিন্ন আমেজ ও ভিন্নতর সুবাতাস বয়ে গেছে দেশজুড়ে।
আমরা বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের পাশাপাশি কামনা করি, উৎসবের মঙ্গলালোকের যে আলো ছড়িয়েছে এ আলোর অর্থাৎ ন্যায় ও কল্যাণের ছায়া আরও প্রসারিত হোক সমাজের সর্বত্র। বিনাশ ঘটুক অশুভশক্তির। জয় হোক মানুষের, জয় হোক মানবতার।