জন্মনিবন্ধন সনদপ্রাপ্তির ভোগান্তি কমাতে হবে

জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে দেশজুড়ে এক অদৃশ্যপূর্ব সংকট তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ এ নিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে দিনের পর দিন ধরণা দিয়েও জুটছে না কাক্সিক্ষত জন্মনিবন্ধনের সনদ। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, কয়েক দফা গিয়েও কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে এ সনদ তুলতে পারছে না সাধারণ মানূষ।
এক্ষেত্রে মানুষের ভোগান্তি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিমত। সূত্র জানাচ্ছে, সরকার ২০১০ সাল থেকে অনলাইনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু করে। অনলাইনে নিবন্ধন শুরু করার আগে ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে কয়েক কোটি মানুষকে জন্মনিবন্ধন সনদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সনদগুলো অনলাইনে আপডেট করা হয়নি। ফলে ওই কয়েক কোটি মানুষকে নতুন করে সনদ নিতে হচ্ছে।
তবে বর্তমানে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সার্ভারের সমস্যা। গত কয়েকমাস ধরে এই সার্ভার ত্রুটির কারণে সমস্ত কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার দশায় উপনীত হয়েছে। অপরদিকে জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে নয়া আরেক নিয়ম চালু করায় নতুন সংকটেরও সৃষ্টি হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের পর যাদের জন্ম তাদের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের জন্মসনদও বাধ্যতামূলকভাবে থাকতে হবে।
এতে সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে অনেকেই যারপরনাই বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে এক সঙ্গে তিনজনের জন্মনিবন্ধন করতে হচ্ছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে এই নতুন নিয়ম এই নয়া সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
পাসপোর্ট করা, বিবাহ নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, জমি রেজিস্ট্রেশনসহ প্রাত্যহিক কর্মকা-ের নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজে সরকার জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করায় বিভিন্ন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে মানুষের ওপর মানুষ একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এখন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সচিবসহ কর্মচারীদের অবস্থাও শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ প্রসঙ্গে কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে জন্মনিবন্ধনের সক্ষমতা এখনো আমাদের তৈরি হয়নি। একটি বিষয় গড়ে তোলার আগেই মানুষকে যুদ্ধে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।
অবশ্য এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা সাধারণের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বলেন, এই ভোগান্তি বেশিদিন থাকবে না। অনলাইনে সহজেই নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে। জন্মমৃত্যুর অনলাইন নিবন্ধন ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে বিষয়টির চলমান জটিলতা থেকে সাধারণ মানূষকে মুক্তি দেবার একটি পথ অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞজনেরা।
তারা বলছেন, ডিজিটালাইজেশনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার না করেও সংশ্লিদের বিকল্প একটি উপায় নিতে ভাবতে হবে। আর তা হলো : একদিকে সার্ভার সমস্যা নিরসন, অন্যদিকে প্রাত্যহিক প্রয়োজনের দিকটিতে লক্ষ রেখে ম্যানুয়েল পদ্ধতিটি সচল রাখা এবং ম্যানুয়েলি প্রদত্ত সনদের কার্যকারিতা জারি রেখে ধীরে ধীরে ডিজিটাল ব্যবস্থার দিকে যাওয়া। এখানে তো আর তাড়াহুড়োর কোনো ব্যাপার নেই।