জঙ্গল সলিমপুর, আলীনগরসহ ভূপ্রকৃতি রক্ষায় স্পেশাল টাস্কফোর্স গঠনের অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে জঙ্গল সলিমপুর, আলীনগরসহ ভূপ্রকৃতি রক্ষায় অপ্রতিরোধ্য ভূমিকার জন্য চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে শত গোলাপের উষ্ণ অভিনন্দন জানাতে গিয়ে উপরের অনুরোধ জানান সুজন।
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সুজন বলেন, বিধাতার অপরূপ সৃষ্টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যে কাউকে প্রথম দেখাতেই মুগ্ধ করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সৌন্দর্যের আড়ালে একটি মন খারাপের গল্পও রয়ে যায়। চট্টগ্রামের সৌন্দর্যের প্রধানতম আকর্ষন টিলা, পাহাড়সহ ভূপ্রকৃতি বছরের পর বছর ধরে ধ্বংস করছে এক শ্রেণীর লোভী অর্থলিপ্সু চক্র। কখনো আবাসিক, কখনোবা বাণিজ্যিক শিল্প স্থাপনা, আবার কখনো কলকারখানা কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে এসব টিলা, পাহাড় নির্বিচারে ধ্বংস করা হচ্ছে। তাই এসব টিলা, পাহাড়সহ চট্টগ্রামের ভূপ্রকৃতি রক্ষায় একটি স্পেশাল টাস্কফোর্স গঠনের প্রয়োজন রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি এবং বর্তমান জেলা প্রশাসকের মেয়াদে টাস্কফোর্স গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ সুজনের। তিনি বলেন চট্টগ্রামে এখনো পর্যন্ত অবশিষ্ট যে বনাঞ্চলগুলো রয়েছে সেগুলো সংরক্ষণ করে বোটানিক্যাল গার্ডেন, ইকো পার্ক, ইকো কটেজ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করলে বনাঞ্চলগুলোও রক্ষা পাবে এবং ভ্রমণপিপাসুরা পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।
তিনি আরো বলেন আমাদের ফয়েস লেকটিও আরেকটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত লেক। এ লেকটিকে যদি কেটে ভাটিয়ারী পর্যন্ত সোজা করে সেখানে পাহাড়ের টিলায় স্যাটেলাইট কটেজ নির্মাণ, কেবল কারের মাধ্যমে পাহাড়ে ভ্রমণ এবং লেকে বড়শির ছিপ দিয়ে মাছ ধরার ব্যবস্থা করলে ফয়েস লেকটি অনিন্দ্যসুন্দর বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হবে নিঃসন্দেহে। সুজন বলেন পাহাড়তলী থেকে বারৈয়ারহাট পর্যন্ত আমাদের যেসব টিলা শ্রেণী, প্রাকৃতিক লেক, ছড়া ও ঝর্ণা রয়েছে সেগুলো ক্রমাগতভাবে কিছুসংখ্যক অর্থলিপ্সু ব্যক্তির খপ্পড়ে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এসব প্রাকৃতিক সম্পদের শ্রেণী পরিবর্তন করে রাতারাতি জমিতে রূপান্তর করছে বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্টান। তাই পাহাড়তলী থেকে বারৈয়ারহাট পর্যন্ত নয়নাভিরাম ভূপ্রকৃতিসমূহকে সংরক্ষণ করে সরকারের আওতায় আনার জন্য জেলা প্রশাসকের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জনগনের জায়গা, জমি হুকুমদখল করা হলেও এক শ্রেণীর মামলাবাজ চক্রের কারণে বছরের পর বছর টাকা পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। তাই এসব মামলাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অুনরোধ জানান তিনি।
তিনি আগামী দিনের চট্টগ্রামের অপার সম্ভাবনা বিবেচনায় এখন থেকেই সরকারি উদ্যোগে চট্টগ্রামে আগত বিদেশী অতিথি, বিনিয়োগকারী, বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরতদের জন্য পরিকল্পিত আবাসন, বিনোদনসহ অত্যাধুনিক সংরক্ষিত অঞ্চল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণেরও আহবান জানান।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান প্রতিটি প্রস্তাবনার সাথে সম্পূর্ণ সহমত পোষন করেন। তিনি বলেন সত্যিকার অর্থে এসব প্রস্তাবনা প্রণয়ন করা গেলে চট্টগ্রাম শহরটি একটি দৃষ্টিনন্দন শহরে পরিণত হবে। হুকুমদখলের মামলাবাজ চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন ইতোমধ্যে এ চক্রটিকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, রুহুল আমিন তপন, সাইদুর রহমান চৌধুরী, সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি