বিজয়ের সূর্য
সৈয়দ খালেদুল আনোয়ার
বিজয়ের সূর্যটা রক্তিম লাল
রক্তের আল্পনা আঁকা মহাকাল
স্মরণের ক্যানভাসে শহিদের মুখ
মুক্তির প্রেরণায় রাখে উৎসুক।
রেখেছিলো বাঙালিরা অস্ত্রতে হাত
শোষকের মসনদ হলো কুপোকাত
গোলামীর শৃঙ্খল হলো চুরমার
খুলে গেলো গৌরবে বিজয়ের দ্বার।
জীবনের চাওয়া পাওয়া প্রিয় এই দেশ
মুছে দেয় আমাদের দুঃখের রেশ
রক্তের দামে কেনা বিজয়ের দিন
অন্তরে আনে আশা স্বপ্ন রঙিন।
বিজয়ের শুভদিনে করি আহ্বান
ধরে রাখো এ বিজয় প্রাণ করে দান।
লাল সবুজের এই পতাকা
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
অটল পাহাড় বিশাল বুকে থির দাঁড়িয়ে থাকা
এই পতাকা মায়ের চোখের জলের রঙে আঁকা
উজান ভাটির ধারা নদীর সবুজ দু‘কূল পাড়
এই পতাকা ব্যথার-শোকের দীপ্ত অহংকার।
যায় ডেকে যায় মনের বনে সাহসী বুলবুলি
এই পতাকার জন্য খোকা বুক পেতে নেয় গুলি।
আঁধার ঠেলে ভোরের আলো আঁকে নতুন দিন
এই পতাকা ভাইয়ের বুকের রক্তে রাঙা ঋণ।
মাটির টানে চুপটি বসে নয় তো থাকা আর
এই পতাকা দুরন্ত বীর বোনের গলার হার!
অনিয়মের পথের বাধা নিয়ম খোলাখুলি
এই পতাকা বাবার বুকের স্বপ্ন রঙিন তুলি।
বন্ধ শেষে সব অশুভ মুখ বোতলের ছিপি
এই পতাকা শেকল ছেঁড়া গানের স্বরলিপি।
যুদ্ধে লড়ে অত্যাচারের ছিন্ন করে জাল
এই পতাকা লাল সবুজের গর্ব চিরকাল।
রণাঙ্গনের শহিদ
শচীন্দ্র নাথ গাইন
সুজন ছিল এই গাঁয়েরই দুরন্ত এক ছেলে
পড়াশুনায় যেমন থাকুক, নাম করেছে খেলে।
কাবাডি আর ফুটবলে তার কেউ ছিল না জুড়ি
সেরার মেডেল বাড়িতে তার ছিল কয়েক কুড়ি।
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র তখন যুদ্ধ যখন শুরু
দেশ জ্বলছে দাউ দাউ দাউ বুকের কাঁপন দুরু।
চলছে গুলি নির্বিচারে কাতর মানুষ শোকে
ক্ষোভ জমছে বুকের ভেতর তীব্র আগুন চোখে।
নিকষ কালো আঁধার রাতে শূন্য করে বাড়ি
সুজন কোথায় পাড়ি দিল স্বজনগুলো ছাড়ি।
ভোরের আলো ফুটলে তাকে কেউ পায় না খুঁজে
মুখে কারো রা সরে না, বিষয় গেল বুঝে।
একাত্তরের ডিসেম্বরে বিজয় যখন হাসে
অপেক্ষাতে বাবা ও মা, সুজন বুুঝি আসে।
পাশের বাড়ির বাদল এসে বলল ধীরে ধীরে
রণাঙ্গনের শহিদ সুজন আসবে না আর ফিরে।
দেশের মুক্তি আনতে যারা পড়ল মৃত্যুফাঁদে
তাদের জন্যে কষ্ট-ব্যথায় ফুলপাখিরা কাঁদে।
রক্তেভাসা সুজনদেরকে যাইনে যেন ভুলে
তাদের স্মৃতি রাখা উচিত মনের কোঠায় তুলে।
মুক্তিসেনার ছবি
আ.ফ.ম.মোদাচ্ছের আলী
আঁকছি আমি ফুল পাখি নদ
আঁকছি পাহাড় বন
এতো আঁকি তবুও আমার
ভরছে না তো মন।
আঁকছি আমি আকাশ তারা
আঁকছি সমুদ্দুর
এতো আঁকি রঙের ঘুড়ি
তাল লয় নাই সুর।
বীর বাঙালির মুক্তি সেনার
আঁকি যখন ছবি
ভেসে ওঠে লালন বাউল
চিরচেনা কবি।
আঁকার মাঝে পাই ফিরে সব
ছন্দ সুর ও লয়
বীর বাঙালির আঁকলে ছবি
দূর হয়ে যায় ভয়।
বিজয়ের গান
সারমিন চৌধুরী
লাল-সবুজের নিশান ওড়ে
বাংলার আকাশ জুড়ে,
ডিসেম্বর এলে স্মৃতিগুলো
মনে পড়ে মন পুড়ে।
জীবন বাজি দিয়ে যারা
রাখলো দেশের মান,
ভুলবে না বাঙালি জাতি
তাদের বলিদান।
ইতিহাসে নামটি তাদের
স্বর্ণাক্ষরে লেখা,
রংতুলিতে তাদের ছবি
সব হৃদয়ে আঁকা।
১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১
আলমগীর কবির
বিজয় বেশি দূর ছিল না দুঃখ ছিল ভাগে,
পাক হানাদার কৌশল করে পরাজয়ের আগে।
বুঝতে হয়তো পেরেছিল পরিণাম কী শেষের!
বেছে বেছে হত্যা করে বুদ্ধিজীবী দেশের!
মেধাশূন্য করতে জাতি হত্যাযজ্ঞে মাতে,
জ্ঞানী-গুণী বুদ্ধিজীবীর মৃত্যু ওদের হাতে।
ওদের হাতে বীর শহীদের লেগে আছে রক্ত,
ওরা ছিল হায়েনাদল মীর জাফরের ভক্ত!
মেধাশূন্য করতে ওরা করলো জাতির ক্ষতি,
দেশ দেখেছে বিভীষিকা নিঠুর পরিণতি!
পরাজয় টের পেয়ে ওরা কাজ করেছে ঘৃণ্য,
শত শত বধ্যভূমি আজও আছে চিহ্ন!
লাল-সবুজের পতাকা
জহিরুল হক বিদ্যুৎ
লাল-সবুজের পতাকাটা
খুশির দোলায় দোলে,
বিজয় মাসে গৌরবে তাই
সকল দুয়ার খোলে।
লাল রঙ বলে হও সাহসী
সত্য কথাই বলো,
সবুজ রঙটি শেখায় হেসে
মিলেমিশে পথ চলো।
শিশুর মনটা ফুলের মতো,
রঙে ভরা তার আশা,
পতাকার গায় লেগে আছে
দেশের ভালোবাসা।
বিজয় মাসে শিশুর হৃদয়
হোক না রঙে ভরা,
লাল-সবুজে আঁকুক স্বপ্ন
নতুন দিনের ধরা।
যুদ্ধ শেষে
সজীব মালাকার
নয়টি মাসের যুদ্ধ শেষে
প্রাণ প্রিয় এই বাংলাদেশে,
সবাই খুশি নিরন্তর
আসলো ষোলই ডিসেম্বর।
সব বাঙালি খুশিতে আজ
লাল-সবুজে দিচ্ছে যে সাজ,
সবাই যে আজ মুক্ত পাখি
ইচ্ছে মতোই লিখি, আঁকি,
ইচ্ছে মতোই ভালবাসি
নয় যে কেউ আর দাস ও দাসি,
দেশটা যে আজ মুক্ত স্বাধীন
তাই খুশি আজ তাক্ ধি-না-ধিন।
একাত্তরের দিন
আহসানুল হক
একাত্তরের দিনগুলোকে
যায় কি ভোলা যায় ?
ঝলসে ওঠে বারে বারে
স্মৃতির জানালায় !
দিনগুলো সব বিভীষিকার
আঁধার-বিষাদময়
আবালবৃদ্ধ যুদ্ধে ঝাঁপায়
ভুলে মৃত্যুভয় !
কেউবা যে হয় পিতৃহারা
কেউবা হারায় বোন
শোক-বেদনায় ভিজে আজও
মায়ের চোখের কোণ !
রক্ত-লাশে অবশেষে
দেশ আমাদের হয়
ডিসেম্বরের ষোল তারিখ
যুদ্ধে আসে জয় !
বিজয় নিশান
সাজ্জাদ সাদিক
লাল সবুজের বিজয় নিশান
পতপতিয়ে উড়ছে,
মুক্ত পাখি ডানা মেলে
নীল আকাশে ঘুরছে ।
বিজয় নিশান উড়ছে দেখ
পতপতিয়ে উড়ছে,
আমরা যে আজ স্বাধীন জাতি
নাম লিখেছি ঊর্ধ্বে ।
বিজয় রাঙা ভোর
কাজী নাজরিন
বিজয় দেখি লাল সবুজে
প্রভাত রাঙা ভোরে
লক্ষ কোটি মানব চোখে
বিজয় বাহুডোরে।
বিজয় হাসে মন আকাশে
ফুলের বাগিচায়
পাখির ডানায় দূর অজানায়
রঙিন গালিচায়।
বিজয় আমার বিজয় সবার
মুক্ত স্বাধীন দোর।
ক্ষণে ক্ষণে আসছে ফিরে
বিজয় রাঙা ভোর।
বিজয়ের সুর
শ্যামল বণিক অঞ্জন
কিনেছি পতাকা একাত্তরে লক্ষ প্রাণের দামে
বিশ্বজুড়ে আজ যা ওড়ে বাংলাদেশের নামে!
লাল সবুজের বিজয় কেতন অসীম শোকে গাঁথা
ভাইয়ের কীর্তি স্মৃতিঘেরা বিজয় স্বাধীনতা।
একখণ্ড মুক্ত ভুমি মোহমায়াময়
রুপালী চাঁদ সুনীল আকাশ ভোরের সূর্য্যোদয়
সতেজ ভোরে নরম রৌদ্র মায়াবী দুপূর
অস্তিত্ব জুড়ে বাজে বিজয়েরই সুর!
স্বাধীনতার গান
বিভাস গুহ
দীর্ঘ নমাস যুদ্ধ শেষে
স্বাধীন হলো দেশ
মুক্তিসেনা ফিরল ঘরে
জয়ের পরে বেশ।
কন্ঠে সবার বেজে ওঠে
স্বাধীনতার গান
বীর বাঙালির ঘরে ঘরে
খুশির নামে বান।
রোদের আলোয় ঝিকিমিকি
স্বপ্ন সুখের রথ
লাল সবুজের নিশান ওড়ে
আকাশে পত পত।





















































