ছড়া ও কবিতা

মেঘের বাড়ি আকাশ পাড়ি

উৎপলকান্তি বড়ুয়া

মেঘের বাড়ি আকাশ পাড়ি ধবধবে রঙ সাদা
এ মেঘ কারোর ছোট্টটি ভাই কিম্বা কারোর দাদা?
দেখতে ভারি শুভ্র নরোম আদুরে তুলতুল!
বাগান জুড়ে থোকা থোকা ফুটলো মেঘের ফুল।

মেঘের পাহাড় দেখায় বাহার কি আছে তার মনে
মেঘ যেনো রঙ রূপ বদলায় কেবল ক্ষণে ক্ষণে!
মেঘ হয়ে যায় সাম্য সুরের নজরুলের ছবি
ফের তাকাতেই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ রবি!

উদার নীলে পায়রা ধবল ছড়ানো দুই ডানা
যাচ্ছে উড়ে কোন সুদূরে একটানা একটানা!
মেঘের ভালুক ভাগিয়ে থাবা,কয়-সামনে কে রে?
আসছে দেখি মেঘের হাতি ভীষণ রকম তেড়ে!

শাপলা হাতে দাঁড়িয়ে আছে সাদা মেঘের খুকি
বুড়ো ও বুড়ি কেমন দারুন তাকায় মুখোমুখি!
আকাশ নীলের চিত্র এসব শিল্পী মেঘের খেলা
মুগ্ধ খোকন তাকায় অবাক আজকে সারাবেলা।

 

 

হেমন্ত

আব্দুস সালাম

চলছে এখন মাঠে মাঠে
ধান কাটার মৌসুম
কৃষকেরা ব্যস্ত ভীষণ
নেইতো চোখে ঘুম।

নতুন ধানের পিঠাপুলির
গন্ধ আসে ভেসে
নবান্নতে উঠলো মেতে
শীতের পরশ এসে।

চখা-চখির কাকলিতে
মুখর আকাশ নিত্য
জামাই-মেয়ের আগমনে
মুগ্ধ সবার চিত্ত।

বাঁশি-চুড়ি, নৃত্য-গানের
পসরা বসে মেলায়
মেতে ওঠে বাউলগানে
দোলনা লাঠিখেলায়।

পরিযায়ী পাখির গানে
যায় ভরে এ মন তো
ঝরাপাতায় বার্তা নিয়ে
ওই এল হেমন্ত।

 

ঋতু হেমন্ত

বিভাস গুহ

ধান পেকেছে মাঠে মাঠে
কৃষক মুখে হাসি
সেই হাসিতে উঠল ফুটে
গোলাপ রাশি রাশি।

সোনার ধানে ভরবে গোলা
কাটবে সুখে দিন
ঘরে ঘরে তাইতো বেজে
উঠে সুখের বীণ।

নাচে গানে মেতে ওঠে
নবান্ন উৎসবে
আনন্দে মন ভরে ওঠে
খুশির কলরবে।

নতুন চালের পিঠাপুলি
মধুর সে কী ঘ্রাণ
হেমন্ত ঋতুতে সবার
জুড়ায় মন ও প্রাণ।

 

মধুমতির ডাক

শচীন্দ্র নাথ গাইন

গনগনে রোদ উধাও যখন বিকেল হেসে নামে
সূর্য তখন ঢুকতে থাকে সবুজ পাতার খামে।
তখন তো আর মন বসে না রুটিনবাঁধা পাঠে
একলা গিয়ে বসে খোকা মধুমতির ঘাটে।

নদীর বুকে পানসি ডিঙি মাঝির বারোমাসি
তাল দিয়ে যায় তারই সাথে মৃদু ঢেউয়ের রাশি।
কলকলানো স্রোতের গতি সামনে শুধুই ছোটে
চাপা হাসি দোল খেলে যায় তখন জলের ঠোঁটে।

ক্লান্তিবিহীন ছুটে চলে নদী আপন বেগে
উপকারী বন্ধু নদীর সময় কাটে জেগে।
ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরে হয় নদীটার সাথি
অজানা পথ পাড়ি দিতে ছুটবে দিবস-রাতি।

মধুমতি ডাকছে তাকে হাত বাড়িয়ে কাছে
কীযে দারুণ লাগছে ভালো খুশিতে মন নাচে।
স্বপ্নগুলো মেলছে যখন ডানা বুকের মাঝে
ফিরতে হলো বাড়ি তখন জ্বলছে বাতি সাঁঝে।

 

 

হেমন্তের রূপবৈচিত্র্য

জহিরুল হক বিদ্যুৎ

হেমন্তেরই মিষ্টি বাতাস শিশির ভেজা ঘাস,
ধানের ক্ষেতে সোনা রঙে মনভরা উচ্ছ্বাস।
খেজুর গাছে মাটির হাঁড়ি মধুর রসের টান,
ঘরে ঘরে মায়ের হাতের মিষ্টি পিঠার ঘ্রাণ।
আকাশেতে মেঘের ভেলা মিষ্টি রোদের হাসি,
প্রকৃতির এই রূপ মাধুরী দেখতে ভালোবাসি।
ধানের ক্ষেতে মুক্তো ঝরে শিষে লাগে হাওয়া,
নবান্নেরই উৎসব ঘিরেই কুটুম বাড়ি যাওয়া।
আকাশ জুড়ে তারা হাসে চাঁদও হাসে সাথে,
শীতের আমেজ লাগে গায়ে হেমন্তেরই রাতে।
ঝোপঝাড়ে জোনাকিদের আলো-ছায়া খেলা,
নদীর বুকে জল-জোছনার কী অপূর্ব মেলা!
ধূম কুয়াশার চাদর গায়ে সূর্য ওঠবে ভোরে,
খালি পায়ে ভেজা ঘাসে হাঁটবো ঘুরে ফিরে।
হেমন্তেরই রূপ মাধুরী মন কেড়ে নেয় ভারি,
সু-স্বাগতম হেমন্তকাল আইসো বন্ধুর বাড়ি।

 

 

কার্তিক রাত

সাইফুদ্দিন সাকিব

কার্তিক রাত হিমেল হাওয়া দিচ্ছে মনে দোলা
গাছের ফাঁকে চাঁদের কিরণ আকাশটাও খোলা।
বদ্ধপুকুর জল থৈ থৈ মাছের আনাগোনা
মন টেকে না বইয়ের পাতায় হয় না পড়াশোনা।
টেবিল ছেড়ে বাইরে গেলাম বন্ধুরা দেয় ডাক,
ঝোপের ভেতর হুক্কাহুয়া খেক শেয়ালের ডাক।
রঙিন ফানুস যাচ্ছে উড়ে, যাওয়ার সীমা নেই,
জোনাক পোকা দিচ্ছে উড়াল ধরতে যাবো যেই।
উড়ে উড়ে জোনাকিরা বসে গাছের ডালে,
আলোর বন্যা দেয় ছড়িয়ে জ্বলছে তালে তালে।
হাটতে গিয়ে থমকে দাঁড়াই সামনে দাঁড়াশ সাপ,
ভূতের পাড়ায় গিয়ে দেখি ভূতেরা দেয় লাফ।

 

 

হেমন্তের রুপ

শামীমা জান্নাত শিউলী

ভোরের আলো উঠলো ফুটে
রঙিন হলো আকাশ,
ঝিরিঝিরি হিম কুয়াশায়
শীতল হলো বাতাস।

ধানের ডগায় শিশির জমে
সোনালি রোদ পড়ে,
ঝিকিমিকি করে শিশির
রুপ যেনো তার ঝড়ে।

গাছের ডালে সবুজ পাতায়
লাগে শীতল দোলা,
সোনালি রং জুড়ে আছে
আকাশ যেনো খোলা।