মুক্তিযুদ্ধ জনযুদ্ধ
জসীম মেহবুব
মুক্তিযুদ্ধ জনযুদ্ধ
গণযুদ্ধ বলে,
পাকহানাদার পর্যুদস্ত
হয়ে জলেস্থলে,
লেজগুটিয়ে পথ খুঁজে নেয়
কান দু’খানা মলে।
মুক্তিসেনা কেমন জিনিস
যেইনা গেছে জেনে,
দলে দলে হুমড়ি খেয়ে
পড়লো গিয়ে ড্রেনে।
এই মাটিতে খত দিয়ে নেয়
পরাজয়টা মেনে।
অবাক হয়ে তাকিয়েছিল
টিক্কা-নিয়াজিরা !
রাগে ফুলে পষ্ট হলো
বীর বাঙালির শিরা।
বললো, ফিরে যাও হানাদার
পাকিস্তানে ফিরা।
ডিসেম্বরের ষোলো
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
দিন কাটে না রাত কাটে না আর মোটেও ভালো
সকল আলো দেয় ঢেকে দেয় অবিচারের কালো।
নষ্ট বোধের ছড়ায় পাখা সামনে ডানে-বাঁয়
জোর জুলুমের নিয়মটুকু আর সওয়া না যায়।
অনাচারে বেড়েই চলে দেশ ও দশের ক্ষতি
শোষণ শাসন অসমতার মাত্রা উর্দ্ধগতি।
ক্রমশ যায় বেড়ে নানান অশুভ ডাল শাখা
অধীনতার শিকল পরে আর মোটে নয় থাকা।
মন জুড়ে প্রাণ জুড়ে থাকা শংকা ভীতি ভয়
আমার ফসল আমার গোলায় ভরবে না তা হয়?
পিঠ ঠেকেছে দেয়ালে তাই আর কোনো পথ নাই
অনিয়মের শেকল ছেঁড়া হোক রে এবার চাই।
প্রতিবাদের বারুদ আগুন দ্বিগুণ হয়ে জ্বলে
আর ভোলানো যাবে না ঠিক ছল্-বলে কৌশলে!
ডিসেম্বরের ষোলো তারিখ সেই একাত্তর সাল
পূর্ব দিকে বিজয় দিনের সূর্য ওঠে লাল।
আনন্দে তাই গাই
ইকবাল বাবুল
সিটকিনি টেনে যেই খুলি আমি দোর
চোখের সামনে প্রতিভাত হলো কী এক মায়াবী ভোর
বাড়িটার কাছে দেবদারু গাছে জড় হয়ে যতো পাখি
নেই অভিমান গাইছে কী গান, করছে কী ডাকাডাকি
সূর্যিটা তার কী চমৎকার হাসি হাসি করে মুখ
আলোয় রাঙাতে মনে হয় তার অনেকটা উৎসুক
হাওয়া এসে গায় ছোঁয়া দিয়ে যায় অনুভব করি শীত
ফিনফিনে হাওয়া গেয়ে যায় যেনো শীতালু সে সংগীত
এইযে সকাল কুয়াশার জাল এখনো কাটেনি মোটে
অথচ পুরোটা প্রকৃতি দেখি ঘুম থেকে জেগে উঠে
কী যে উচ্ছাসে প্রাণ খুলে হাসে,হেসে হেসে পুরো সারা
অনুভূত হয় , পুরো প্রাণময় বয় সে খুশির ধারা
এতো অফুরান হাসি আর গান – গায় এতো এতো পাখি
মুগ্ধতা নিয়ে শুনি আমি আর বিস্ময়ে চেয়ে থাকি
কাটে না সে রেশ, এ আমার দেশ তার প্রতি যতো টান
আনন্দে তাই আমি আজ গাই মহা বিজয়ের গান ।
উনিশ শ একাত্তর
এমরান চৌধুরী
উনিশ শ একাত্তর
মৃত্যুর মুখে সাত কোটি প্রাণ ভয়ে কাঁপে থরথর।
চারিদিকে ঘোর, আশাহীন পথ, পদে পদে বিভীষিকা
কেউ তো জানে না কী ঘটে কখন কী আছে ললাটে লিখা।
আকাশ ছাওয়া লেলিহান শিখা জ্বলে নৈর্ঋত ঈশানে
স্বপ্নের গাড়ি দেয় দূরে পাড়ি কষ্টে হাঁপায় কৃষাণে।
অস্থির মন, ভয়ার্ত চোখ ঝাপসা চোখের দৃষ্টি
এই বুঝি আসে হায়েনার ট্রাক, ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি-বৃষ্টি।
উনিশ শ একাত্তর
পানের বরজে ঝাঁঝরা বুকের খুন ঝরে দরদর।
বরজের মাটি রক্তের বানে হয়ে ওঠে লালে লাল
সেও বুঝি গেল অসীমের পথে যেই ছিল গতকাল।
কড়া রোদ্দুর নিমিষে মিলায় দিনে নামে ঘন ঘোর
সেই ঘোরে ডুবে হয়েছে বিরান জন মানুষের দোর
নীরব অটবী উজাড় বিটপী মৃক্তিকা শুধু বাকি
চোখের পলকে ভেসে ভেসে ওঠে হিরোশিমা নাগাসাকি।
উনিশ শ’ একাত্তর
মৃত্যুর মুখে সাত কোটি প্রাণ ভয়ে কাঁপে থরথর
আর নয় চুপ করে প্রতিরোধ চালায় ধনুক তীর
মুক্তির স্বাদ ছিনে নিতে সাজে ক্ষুদিরাম তিতুমীর ।
বক্ষে সবার দুরন্ত তেজ দুচোখে অগ্নিশিখা
রক্তের গাঙ সাঁতরে এবার পরবে জয়ের টিকা।
সর্ষের মাঠে শুরু হবে ফের বাতাসের কানাকানি
মৃত্যুমুখেও সেই শুভদিন দেয় বুকে হাতছানি।
বিজয় দিবস
অপু বড়ুয়া
লাল সবুজের পতাকা উড়ছে
ঘরে ঘরে চারিদিকে
শিশুরা ঘুরছে মাথার টুপিতে
বিজয় দিবস লিখে।
জাতির পিতার বজ্র ভাষণ
বাজছে পথের মোড়ে
সবাই ছুটছে প্যারেড দেখতে
ঘুম ভেঙে খুব ভোরে।
চারিদিকে আজ সাজ সাজ শোভা
হাসিখুশি ছুটোছুটি
কেউ কেউ গেছে স্মৃতির সৌধে
ফুল নিয়ে মুঠোমুঠি।
আজকে মহান বিজয় দিবস
ডিসেম্বরের ষোলো
এমন খুশির দিনে ঘরে বসে
থাকে কেউ,তুমি বলো?
বিজয় মানে
শ্যামল বণিক অঞ্জন
বিজয় মানে শৃংঙ্খল ছেঁড়া, বিজয় মানে মুক্তি
বিজয় মানে অফুরান উল্লাস মানে না তো কোনো যুক্তি।
বিজয় মানে স্বাধীনতা সুখ, বিজয় মানে গর্ব
বিজয় মানে স্বপ্ন আশায়, জড়ানো নতুন পর্ব!
বিজয় মানে হাসি আর গানে দোলা দেওয়া এক ক্ষণ তো
বিজয় মানে আত্নপরিচয় ঘুরে দাঁড়ানোর পণ তো।
বিজয় মানে ইতিহাস গড়া বুক চিতিয়ে যুদ্ধ
বিজয় মানে আনন্দ অশ্রুুতে অবগাহণে হওয়া শুদ্ধ।
বিজয়ের গান
শচীন্দ্র নাথ গাইন
এইমাসে স্মরণীয় বিজয়ের দিন
হবে নাতো শোধ লাখো শহিদের ঋণ।
আনন্দ-বিষাদের মিশ্রিত ক্ষণ
উল্লাসে মাতি, তবু ব্যথাতুর মন।
এইমাসে বুক জুড়ে জেগে ওঠে শোক
স্মৃতিগুলো উঁকি দিলে ভেসে যায় চোখ।
কান্নায় ভেঙে পড়ে মা-বোন-বাপ
জ্বলজ্বল করে ওঠে রক্তের ছাপ।
এইমাসে শোকাতুর ছিল পুরো দেশ
শত্রুর বাহুবল হয়েছিল শেষ।
ভেঙেছিল হায়েনার বিষমাখা দাঁত
পরাজিত হয়ে ওরা গুটিয়েছে হাত।
এইমাসে পায় জাতি অনুপম স্বাদ
জনতার জোয়ারেতে ভেঙেছিল বাঁধ।
গেয়েছিল দামালেরা বিজয়ের গান
বাঙালিরা রেখেছিল স্বদেশের মান।
মায়ের হাতে পতাকা
আলমগীর কবির
জলপাই রং গাড়ি করে পাক হানাদার সারি সারি,
খুঁজতে থাকে মুক্তিযোদ্ধা খুঁজতে থাকে বাড়ি বাড়ি।
চারিদিকে ভয় সংশয় উৎকণ্ঠা দিনে রাতে,
প্রতিবাদের গণজোয়ার ছড়িয়ে পড়ে সাথে সাথে।
তেরি হলো গেরিলা দল শোষণ অত্যাচারে,
দেশকে যাঁরা ভালোবাসে তাঁরা হারতে পারে?
কারো হাতে রাইফেল আর কারো হাতে বন্দুক,
চোখের পাতায় ভাসতে থাকে মায়ের মায়াবী মুখ।
যুদ্ধ করে গেরিলা দল যুদ্ধ সারা দেশে,
কত যোদ্ধা জীবন দিলেন দেশকে ভালোবেসে।
বোন হারালো ভাইয়ের স্নেহ মা হারালো ছেলে,
মা তবুও স্বপ্ন দেখেন আশার পিদিম জ্বেলে।
চোখ মুছে মা এক নিমিষে দুঃখ যতো ভোলে,
মায়ের হাতে লাল সবুজের প্রাণ পতাকা দোলে!
বিজয় ফুল
আহসানুল হক
আমার আছে বিজয়গাথা
গর্ব ইতিহাস
বীর জননীর কাব্য-খাতা
জ্বলজ্বলে উদ্ভাস !
লাল-সবুজের নিশান আছে
দোয়েল-শ্যামার সুর
বিজয় যেন আমার কাছে
সুখের সমুদ্দুর !
কারো কাছে বিজয় আবার
দুখ -বেদনার খাম
যে হারালো ছায়া বাবার
বোনের আব্রু দাম !
স্বাধীনতার,এই পতাকার
ঘয়না কোনো তুল
কোথায় আছে রক্তগাথার
এমন বিজয় ফুল !