ছড়া ও কবিতা

আমার গ্রাম

এমরান চৌধুরী

একদিকে তার বহমান নদী অল্প এগোলে খাল
নিটোল পলির মিশেল সেখানে গড়েছে সুগোল গাল
সে খালের পাশে সাদা সাদা ফুল আনন্দে উতরোল
কুমড়ো ফুলের গোলক বোঁটায় প্রজাপতি খায় দোল।

স্বরমাত্রিক ছন্দের মতো দুধের বাছুর ছোটে
মায়ের দুধের চুমুকে চুমুকে হাসি ফোটে তার ঠোঁটে
সেই উচ্ছ্বাসে এ বুকে আমার বুলবুলি করে নৃত্য
স্বপ্নের মতো আমার এ গ্রাম আপ্লুত তাই চিত্ত।

ফণিমনসার ঝোপঝাড় ফেলে বাড়ালে দুচোখ কাছে
অমল বাতাস চুলের ডগায় ঢেউ তোলে আর নাচে
যেন সহস্র টিয়ের পালক একখানে করে জড়ো
দিগন্তে লীন সবুজাভ ক্ষেত সাজিয়েছে থরো থরো।

জাম জারুলের আবডালে বসা পাখপাখালির ঝাঁকে
গানে আর গানে মনে হয় তারা আমাকে শুধুই ডাকে
তাদের আকুলি তাদের মমতা পারি না এড়িয়ে যেতে
অপলকে তাই আমার এ মন পাখি হয়ে ওঠে মেতে।

শঙ্খের বুকে নামলে জোয়ার আলোড়ন তোলে বাঁকে
সোনালি দুপুর পেতে মায়াজাল হাতছানি দিয়ে ডাকে
ধনুকের মতো ঢেউ তোলে ছোটে দুরন্ত জলরাশি
দৃষ্টির যতো আগল ছাড়িয়ে দেখি শুধু তার হাসি।

কাঁকন দিঘির এক পাড় দিয়ে গিয়েছি বুবুর বাড়ি
বাকি তিন পাড়ে নানা ঝোপঝাড় এবং গাছের সারি
দিনদুপুরেও থমথমে ভাব গা ছমছম হাওয়া
সন্ধ্যার পরে করতে দেখিনি কাউকে আসা- যাওয়া।

কাঁকন দিঘির ফোঁটা শাপলারা যেন কাঁকনের মুখ
সেই মুখ দেখে প্রাণটা জুড়াই পাই অফুরান সুখ
এই দিঘি-জল, তরু-পল্লব, সফেদ বকের সারি
এরই নাম সুখ, বড় মনোহর আমার প্রাণের নাড়ি।

 

ছেলেবেলা আঁকে

মোশতাক আহমেদ

খুব সহজে যায় কি ভোলা
ফেলে আসা দিনগুলি
ছেলেবেলা আঁকে স্মৃতিঝরা বাঁকে
ইচ্ছের রঙতুলি।

চাপিলার বিলে মাছ ধরে চিলে
খেলেছি সাঁতার খেলা
পাখিদের ছানা খুঁজতে খুঁজতে
কাটিয়ে দিয়েছি বেলা।

হেমন্তিকার সোনা সোনা ধানে
মৌ মৌ তাজা ঘ্রাণে
তীর্থঘাটের মেলাতে ঘুরে
কী সুধা পেয়েছি প্রাণে?

শারদীয় পুজো জমতো ভারি
আমাদের বর-ধন্য পাড়া
ঘুরেঘুরে কতো দেখেছি মেলা
বুঝি নাই কিছু মেলাকে ছাড়া।

আকাশে কতো যে রঙের মেলা
নদীতে বৈঠা হেইও
খুঁজেফিরি আমি বন্ধু যাহাকে
কোথ্থাও দেখি নেইও।

ছলছল করে নদী ভেসে চলে
কে যায় নদীর উজানে?
আমি যাহাকে প্রতিদিন খুঁজি
বন্ধু কি তাহা সে জানে?

স্মৃতিভরা মন বেদনা বিধূর
দুঃখ ভারাকান্ত
মনের ভেতর কী বাসনা জাগে
যদি কেউ তা জানতো?

হাসিকান্নার বেদনা পোহাই
অঝোরে চক্ষু ঝরে
হৃদয়পটে বন্ধু আমার
তোমাকেই মনে পড়ে।

 

 

দুঃখজনক

মাসুম মোরশেদ

একটা নদী ভীষণ চেনা
জল ছিল থই থই
বাঁশের ভেলা নৌকা ছিল
মাছ ছিল হই হই।
এখন সেসব কই?

ভরাট হলো সে নদীটা
দখল হলো যেই
নদী তখন মরে গেল
হারিয়ে ফেলে খেই।
সেই নদী আর নেই?

না না না নেই, নিধুয়া মাঠ,
হেঁটে হেঁটে পার।
খেয়ে নিলো সোনার নদী
সব এসপার-ওসপার।
দুঃখ হলো সার।

 

টুনটুনির আহার

হাফিজ মুহাম্মদ

টুনটুনিরা ঘর বেঁধেছে
ডুমুর পাতার ফাঁকে
ঘরে ছিল দুটি ছানা
কিচিরমিচির ডাকে।

বাবা টুনা দূরের মাঠে
ধরছে তাজা ফড়িং
ক্ষুধার জ্বালায় ছানা দুটি
করছে তিড়িং-বিড়িং।

টুনি মা কয়, একটু সবুর!
জলদি আসবে বাবা
হরেক রকম আনবে আহার
মজা করে খাবা।

 

ভোরের শিশির

কাশীনাথ মজুমদার পিংকু

ঘাসের ডগায় ভোরের শিশির
মুক্তাআলো ছড়ায়
দেখতে লাগে কী অপরূপ
খুশিতে মন ভরায়।

ঘাসের ডগায় ভোরের শিশির
জল টলটল করে
শীতল হাওয়া লাগলে গায়ে
এদিক-ওদিক নড়ে।

ঘাসের ডগায় ভোরের শিশির
শীতের আগাম রূপ
সূর্যের আলো লাগলে গায়ে
লজ্জাতে দেয় ডুব।

 

এলো ঋতু হেমন্ত

নাজীর হুসাইন খান

বছর ঘুরে শরৎ শেষে
এলো ঋতু হেমন্ত
আকাশটা আজ মেঘলা বিহীন
লাগছে দেখো কেমনতো।

পেঁজা পেঁজা মেঘের ভেলা
যায় না দেখা আকাশে
কাশবনের অই কাশফুলেরা
উড়ছে শুধু বাতাসে।

দিনের বেলা ভীষণ গরম
রাতের শেষে ঠান্ডা
সকালবেলা খাইতে মজা
সিদ্ধ করা আন্ডা।

শীতের আগাম খবর নিয়ে
হেমন্ত আজ এলো যে
ভোর সকালে ঘাসের ডগায়
শিশির ছোঁয়া পেলো যে।

 

 

খুকি ও রঙিন বিকেল

শাহীন সুলতানা

নদীর ধারে ফুটলো সাদা কলমি লতার ফুল
ডিঙি নাওয়ে চড়লো খুকি আনতে ফুলের দুল,
হরেক রকম দুল নিয়ে তাই বাউরি বাতাস এলো
সঙ্গে এলো ফড়িং ছানা রঙিন ডানার চিলও;
আরও এলো ময়না-টিয়া দোয়েল পাখির সাথে
সবার নিয়ে এলো খুকি গড়াই নদীর ঘাটে।

নদীর তীরে পড়লো চোখে আমন ধানের হাসি
খিলখিলিয়ে বলল, ‘খুকি তোমায় ভালোবাসি!’
কমলা বিকেল জল টলমল ডানকিনে মাছ ভাসে
বালিহাঁসের পালক উড়ে পড়লো সাদা কাশে;
ধানের ক্ষেতে বকের সারি ধান-শালিকের মেলা
সারা বিকেল সবার সাথে করলো খুকি খেলা।

আকাশগাঙে রঙের মিনার খুকি ওড়ায় ঘুড়ি
ঘুড়ি দেখে ফোকলা দাঁতে হাসে চাঁদের বুড়ি,
বলল, খুকি কেমন আছো? এসো আমার বাড়ি
এনে দেব নীল জোনাকি জোছনা ফুলের শাড়ি!
খুকির ভীষণ ইচ্ছে করে- যাবে চাঁদের দেশে
মেঘ-পাখি-ফুল দেখবে ছুঁয়ে ভীষণ ভালোবেসে।

 

শেখার আনন্দ

মোহাম্মদ শামীম মিয়া

প্রকৃতির নানা-রূপ
চোখ মেলে দেখি,
দেখে দেখে প্রতিদিন
কতকিছু লেখি।

বনে বনে পাখি ডাকে
কুহু-কলতান
সেখানেই সুর শিখি
করি কত গান।

আকাশের চাঁদ তারা
রাতে দেয় আলো,
রবি ওঠে প্রভাতের
দূর করে কালো।

গোলাপের শোভা দেখি
নিই তার ঘ্রাণ,
গাছের ছায়া জুড়ায়
পথিকের প্রাণ।

প্রকৃতির কাছ থেকে
শেখার যে আছে,
উপকারী হতে চাই
মানুষের কাছে।

 

সারেং বাড়ির বিল্লি

সনজিত দে

সারেং বাড়ির বিল্লিগুলোর কোনো কথাটাই
গিন্নি মা‘টা শোনে না যে দেয় কেবলই ঘাই।
একটা দুটো তিনটে বিল্লি আরও কটা মিলে
মিটিং করে চুপিচুপি বাড়ির পেছন বিলে।

বিশেষ কিছু চায় না তারা থির পাহাড়ের চূড়ো
মাছ না দিলে অন্তত দাও একটু মাছের মুড়ো!
আজ থেকে তাই বিল্লি নেতার মানতে হবে কথা
তাড়াবে না ছুঁচো-ইঁদুর কেবল নীরবতা।

এ সুযোগে ইঁদুরগুলোর ভীষণ নাচানাচি
গিন্নি মা‘টা বুঝবে এবার আমরা কেমন আছি।
কিন্তু তাদের গোপন মিটিং ফাঁস হয়েছে হায়
লাঠি হাতে গিন্নি মাকে আসতে দেখতে পায়।

বিল্লি নেতার চিল্লাচিল্লি গিন্নি মায়ের তাড়া
কোথায় পালাস বিল্লির দল বলছি তোদের দাঁড়া।
তাড়া খেয়ে বিল্লিগুলোর বন্ধ নাচানাচি
দাবিগুলো শিকেয় তুলে চল না পালাই-বাঁচি।