ছড়া ও কবিতা

হেমন্তে

নান্টু বড়ুয়া

দোরগোড়াতে দাঁড়ায় এসে
দারুণ ঋতু হেমন্ত
ধানের শীষের দোলা দেখে
ঘরে রয় না এ মন তো!
শিউলি ঝরা ভোরের ঘ্রাণে
প্রাণ মাতানো নানান গানে
হাজার রকম পাখির ঠোঁটে
মন জুড়ানো শব্দ ফোটে
শুনতো লাগে তেমন তো!
আকাশ জুড়ে মেঘের ছানা
পাখি উড়ে মেলে ডানা
দুপুর যেন নিকেল করা
আবির মাখা বিকেল করা
দেখতে লাগে এমন তো!
রাত-আকাশে তারার মেলা
উঠোন জুড়ে কিশোর বেলা
দাদা দাদীর কিচ্ছা জোটে
খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে
আসলে ঋতু হেমন্ত!

 

সোনাঝরা হেমন্ত

শচীন্দ্র নাথ গাইন

মেঘমুক্ত দূরের আকাশ হাসে
ছাতিম ফুলের মউ গন্ধ ভাসে।
খুশির জোয়ার জাগে প্রাণে প্রাণে
মন উতলা গন্ধরাজের ঘ্রাণে।

শিশির জমে মুক্তো হয়ে ঘাসে
একটু হিমেল বাতাস ছুটে আসে।
ক্ষেতের বুকে সোনালি ধান দোলে
হৃদয়পুরে খুশিতে ঢেউ তোলে।

বনঘুঘুতে বাবলাগাছের ডালে
দিন মাতিয়ে নাচে গানের তালে।
বিকেল গড়ায় আবিররাঙা সাঁঝে
সুর বাউলের একতারাতে বাজে।

চড়ুই-শালিক ভোরের আলো ফুঁড়ে
চাষির সাথে মাঠটা রাখে জুড়ে।
পিঠেপুলির মিষ্টি আমেজ মুখে
হেমন্ত দেয় সুখের পরশ বুকে।

 

 

ডিম কুসুম হয় পুব

শাহীন খান

হাঁসের কেলি সারাবেলা
খোকন ভাসায় কলার ভেলা
পানকৌড়ি দেয় ডুব
সূর্য মামা হেসে ওঠে
সুরটা দারুণ পাখির ঠোঁটে
ডিম কুমুম হয় পুব।

মনের অলি জোরসে ছোটে
বনের মাঝে ফুল যে ফোটে
দৃশ্য অপরূপ।
শিল্পী কবি মাতোয়ারা
দুঃখ সকল হয় যে সারা
জ্বালায় সুখের ধূপ।
ছন্দ করে ডাকাডাকি
মজার কাব্য লিখতে থাকি
থাকি না রে চুপ।

 

 

দাদুর গল্প

বাবু হক

আমার দাদু গল্প করেন, বয়স যে তার আশি
খেতে বসে একলা-ই খান তিন তিনটা খাসি
মিষ্টিও খান কয়েক হাঁড়ি,
দেন সাঁতরে সাগর পারি
নাতি-নাতনি দাদুর আজব গল্প ভালোবাসি।

 

 

মা ছাড়া

বিভাস গুহ

তোমায় ছাড়া মাগো আমার
দিন কাটে না সুখে
নিত্য আমায় যন্ত্রণা দেয়
কষ্ট ব্যথা বুকে।

হঠাৎ করে চলে গেলে
আমায় ফেলে একা
স্বপন মাঝেও পাই না এখন
আমি তোমার দেখা।

নীল আকাশে তারা হয়ে
আছ নাকি তুমি
তোমার কাছে রোজ তো চাই
একটি মাত্র চুমই।

তুমি ছাড়া আমি এখন
বড় অসহায়
আদর স্নেহ ভালোবাসা
কোথায় গেলে পাই!

 

একটু আড়াল হলে

মজনু মিয়া

আমায় রাখে চোখে চোখে
ভীষণ রকম করে,
দুষ্টু বলে আশেপাশেই
রাখে আমায় ধরে।

হঠাৎ একটু আড়াল হলে
কই গেলি রে কোথায়?
খুঁজতে থাকে বাবা মায়ে
হেথায় কিংবা হোথায়।

দৌড়ে গিয়ে রাস্তা ধরি
না হয় জলের ধারে,
কার না তখন বুকটা কাঁপে
ভয়ে আড়ে আড়ে।

চোখে চোখে রাখাই ভালো
ছোট ছেলেমেয়ে,
বিপদ আপদ কখন আসে
গতি বেগে ধেয়ে।

 

 

নীল চাঁদোয়া

রাহেলা আক্তার

নীল চাঁদোয়া আকাশখানি
লাগছে কেমন বেশ,
মাঝে মাঝে শুভ্র মেঘের
ঝুলছে কেমন কেশ।

তুলোর মতো ভাসছে দেখি
পেঁজাপেঁজা মেঘ,
গুড়ুম গুড়ুম ডাকে আকাশ
ঝোড়ো হাওয়ার বেগ।

নীল চাঁদোয়ায় উড়ছে ঘুড়ি
হরেক রকম রং,
শরৎ দেখি প্রেমবিলাসে
সাজছে কেমন সং।

নাটাই হাতে সুতা কাটে
ঘুড়ির কেমন চাল,
দখিন পবন বইছে জোরে
উড়ছে তরীর পাল।