ছড়া ও কবিতা

হারানো মানিক

মাসুম হাসান

ফুলের মাঝে খুঁজি তোকে
তারার ভিড়ে খুঁজি,
তুই মনে হয় সন্ধা তারা
ফুটে উঠিস রোজই।

চুপটি করে মাকে দেখে
যাস কি বাবা চলে,
প্রজাপতির দলে মিশে
উড়ে যাবার ছলে?

পাখির ঝাঁকে খুজি তোকে
পথের মায়ায় খুজি,
হেলেদুলে কে হেঁটে যায়
আমার খোকন বুঝি?

আসবি ফিরে গর্ভে আমার
আসবি বাবা তুই?
ইচ্ছে করে বুকটা জুড়ে
তোকে নিয়ে শুই।

 

 

আমার তুলি

সৈয়দ খালেদুল আনোয়ার

বাংলাদেশের শিল্পী আমি নিপুণ আমার তুলি
তুলির ছোঁয়ায় ফোটে আমার প্রীতির ছবিগুলি।
তুলির টানে কলকলিয়ে ঝরনা নদী ছোটে
রঙিন আলো ছড়িয়ে রবি পূবাকাশে ওঠে।

তুলির টানে পাল তুলে নাও ছোটে হাওয়ার তালে
গরুর পাল নিয়ে রাখাল ফেরে সাঁঝের কালে।
আমার তুলি বট জারুলের শীতল ছায়া আঁকে
শুভ্র কাশের বনকে আঁকে নদীর বাঁকে বাঁকে।

আঁকে মায়া কুটির চালে কুমড়ো লাউয়ের ডগা
আঁকে জলাশয়ের ধারে সফেদ ধ্যানী বগা।
আমার তুলি রঙের ভাষায় বলে দেশের কথা
রঙের পরশ বুলিয়ে মনের ভাঙে নীরবতা।

 

শরৎরানি

নূরনাহার নিপা

হাওয়ার দোলায় নদীর ধারে
কাশফুলেরা হাসে
দলবেঁধে ওই মেঘ বালিকা
নীল আকাশে ভাসে।

নদীর বুকে পালতোলা নাও
উজান পানে ধায়
খোকাখুকু দেখবি যদি
আয়রে ছুটে আয়।

ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে পাখি
দিচ্ছে জলে ঘাই
এমন মজার দৃশ্য বলো
কোথায় গেলে পাই?
বকের সারি সাঁঝের বেলা
কোন সে দূরের গাঁয়
বাঁশবাগানে নিরাপদে
রাত কাটাতে যায়।

শিউলি ঝরা সকালবেলায়
ফুল কুড়ানোর ধুম
ছেলেমেয়ের চোখে দেখি
সত্যি যে নেই ঘুম।

শরৎরানির আগমনে
উঠলো জেগে দেশ
মৌ মৌ আহা গন্ধ ধানের
সত্যি লাগে বেশ।

 

 

শরৎ ছবি

সাদমান হাফিজ শুভ

শরৎ মানে হাসি-খুশি
রঙিন পরিবেশ,
ফুল-পাখিদের কলরবে
মেতে ওঠা দেশ।

সাদা মেঘের শাড়ি পরে
সাজে আকাশনীল,
উড়ছে দেখো বকের সারি
এ থেকে ও বিল।

কী অপরূপ কাশের সারি
ঢেউ খেলানো কেশ,
মেঘ ছুঁইছুঁই রংবেরঙের
ঘুড়ির সমাবেশ।

শিউলি-বেলি-শাপলা-জবা
হরেক ফুলের সাজ,
ঘাসের ডগায় হিম শিশিরের
দারুণ কারুকাজ।

রুম-ঝুমা-ঝুম ইলশেগুঁড়ি
নেচে ওঠে বন,
মিষ্টি-মধুর হাওয়ার গানে
সুরের আলাপন।

রাতের আকাশ জ্যোৎস্না ধোয়া
ঝিঁঝির গলে সুর,
শরৎ মানে ছবির মতো
একটা স্বপনপুর।

 

 

আশ্বিন এলে

এম আব্দুল হালীম বাচ্চু

আশ্বিন এলে মাঝে মাঝে আসে পুবাল ঝড়
মর্মর করে ভাঙতে থাকে গাছপালা আর ঘর।
আশ্বিন এলে মাঠে মাঠে দুলতে থাকে ধান
মনের সুখে গাঁয়ের কৃষক গাইতে থাকে গান।

আশ্বিন এলে দুপুরবেলা রোদের বাড়ে তাপ
বিকেল হলে উড়তে থাকে ভাপা পিঠার ভাপ!
আশ্বিস এলে বিল বাওরে লাফায় মাছের ঝাঁক
ডোবা থেকে কানে আসে কোড়া পাখির ডাক।

আশ্বিন এলে নৌকা বাইচ দেখি নদীর বুকে
রংবেরঙের বিনোদনে মানুষ থাকে সুখে।

 

ভয়

মোস্তাফিজুল হক

শুকর ছানা কাঁদছে বসে
ঝোপালো নির্জনে,
কাঁদিস কেন লক্ষ্মী ছাড়া
ভয় কী রে এই ক্ষণে.
হরিণছানার কথার শেষে
উঠল জোরে কেঁদে,
একটু থেমে বলল ভেবে
কাঁদছি কী আর সেধে?
শুনেছি বাঘ ঢুকে যাবে
সহসা এই বনে
তাইতো আমি কাঁদছি বসে
ভয় পেয়ে এককোণে।

 

 

একটি নদীর বিকেল

আনোয়ারুল হক নূরী

শেষ বিকেলে একলা একা
খরস্রোতা এক নদীর দেখা,
একটু শুধাই নদীর কাছে,
চলছ কবে বয়স কত,
ছুটছো দেখি অবিরত,
বলল নদী আমার কাছে,
বয়স কি ভাই আমি জানি,
কুলু কুলু বয়ে যাওয়া
কোন সুদুরে আমার পাওয়া,
সেটাই শুধু আমি মানি।
বলি তারে এমন করে ছলোছলো
আর কটা দিন করবে বলো,
একটু থামো একটু জিরাও,
তোমার গতি একটু ফিরাও,
বলল নদী আমি যদি একটু থামি,
থাকবে বল নদীর নামই?
ছলোছলো চলাই হল নদী।
বলল নদী, তোমার জন্য
একটু বসার বিকেল,
সোনা রোদের নিকেল,
থাকবে কি আর
হারিয়ে যাই যদি।