দেশের উৎপাদনশীল খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির ব্যবসায় খারাপ যাচ্ছে। নানামুখী সংকটে উৎপাদন ও বিক্রি কমে যাওয়ায় এসব কোম্পানি ভালো ব্যবসা করতে পারছে না। তবে কোনো কোনো কোম্পানির বিক্রি বাড়লেও উৎপাদন খরচ অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় তাদেরও মুনাফা কমে গেছে।
একটি জাতীয় দৈনিকের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সেবা ও শিল্প খাতের ২০৪টি কোম্পানির চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) সঙ্গে গত বছরের একই সময়ের আর্থিক প্রতিবেদনের পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০৪টি কোম্পানির মধ্যে ১১৯টিরই ব্যবসা গত বছরের তুলনায় খারাপ হয়েছে। ব্যবসায় ভালো করেছে ৮১টি, অপরিবর্তিত ছিল ৪টির। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত উৎপাদন ও সেবা খাতের কোম্পানি মোট ২৪১টি। এর মধ্যে ৩৭টি তাদের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করায় সেগুলোর ব্যবসা পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে যেসব খাতের ব্যবসার চিত্র বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, সিরামিক, প্রকৌশল, খাদ্য, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, পাট, পেপার ও প্রিন্টিং, ওষুধ-রসায়ন, সেবা ও আবাসন, চামড়া, টেলিযোগাযোগ, বস্ত্র এবং ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানি। শিল্প না হওয়ায় ব্যাংক, বিমা ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক খাত, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডকে এ পর্যালোচনায় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, দেশের বড় বড় করপোরেট শিল্পগোষ্ঠীভুক্ত কোম্পানিগুলোর ব্যবসাও খারাপ হয়ে গেছে। এসব করপোরেট শিল্পগোষ্ঠীর কোম্পানিগুলো আগের বছরের তুলনায় বেশি আয় করলেও মুনাফা কমেছে।
কোম্পানির উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তারা ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট, শিল্পের কাঁচামাল ও গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়াকে ব্যবসা খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেসব কোম্পানির উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ডলারের বিষয়টি জড়িত, সেসব কোম্পানির ব্যবসা বেশি খারাপ হয়েছে। পণ্যের দাম বাড়িয়েও এসব কোম্পানি বাড়তি খরচ সামাল দিতে পারছে না।
মুনাফা কমে যাওয়ায় কোম্পানিগুলো এখন নতুন করে বিনিয়োগে যাচ্ছে না। টিকে থাকাটাই বেশির ভাগ কোম্পানির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। কোম্পানির ব্যবসা খারাপ হলে তার প্রথম ধাক্কা লাগে মুনাফায়। আর মুনাফা কমতে থাকলে কোম্পানিগুলো খরচ বাঁচানোর নানা উপায় খুঁজতে থাকে। পণ্যমূল্য বাড়িয়েই বেশির ভাগ কোম্পানি মুনাফা ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানি খাতের কোম্পানিগুলো ভুগছে। আর দেশে মূল্যস্ফীতির কারণে চাহিদা সংকুচিত হচ্ছে। সামগ্রিক অর্থনীতির সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরাও একধরনের দুষ্টচক্রে পড়ে গেছেন। দেশের সামগ্রিক যে অবস্থা, তাতে উদ্যোক্তাদের সহায়তার ও সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে।
বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া খুব কঠিন হবে। আগামী বাজেটেই এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ