রাজিব শর্মা »
সরবরাহ বাড়ায় নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে শীতকালীন সবজির দাম কমলেও চাল ও তেলের বাজারে স্বস্তি ফিরে আসেনি। পাশাপাশি ব্রয়লারসহ মাছ-মাংসের দামও বাড়তি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার নগরীর অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার রেয়াজউদ্দিন ও বকসিরহাট ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি ও মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। যা ২৫ কেজি বস্তায় ১০০ থেকে ১৩০ টাকা বেড়েছে।
মুদি ব্যবসায়ী মো. আলী সওদাগর বলেন, ‘সবজির দাম কমে আসলেও ভোজ্যতেল, চাল, ডালের দাম না কমায় স্বস্তি প্রকাশ করছে না ক্রেতারা। চাল কিনতে আসা ক্রেতারা আমাদেরকে দোষারোপ করছে। এসব চালের দাম বাড়াচ্ছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের চালের আড়তদার ও মিল মালিকরা।’
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইজাম, লতা ও আটাশ জাতের মাঝারি মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৬ থেকে ৬২ টাকায়। আর স্বর্ণা, চায়না ও ইরি মানের মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। এসব চাল গত বছর এদিনে বিক্রি হয়েছিল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। হিসেবে বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে নাজিরশাইল ও মিনিকেট মানের চালের দাম না বাড়লেও বছরের ব্যবধানে বেশ বেড়েছে। বাজারে এসব মানের চাল বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮৪ টাকা। গত বছর যা বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৭৫ টাকা। সে হিসেবে বছরের ব্যবধানে সরু চালের দামে বেড়েছে ১০ টাকার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আমদানি হওয়া স্বত্ত্বেও চালের বাজারে লাগামহীন থাকায় ক্রেতাদের মধ্যে হা-হুতাশ বেড়েছে। বকসিরহাট বাজারে আসা ক্রেতা মো. জাফর বলেন, ‘সবজির দাম প্রতিবছর মৌসুমে কমে যায়। এসব সবজি পচন ধরে বলেই ব্যবসায়ীরা গুদামজাত করতে পারছে না, তাই দাম কমছে। বর্তমান চালের কেজি ৭০ থেকে ৮৫ টাকা। বাজার তদারকি নেই বললেই চলে।’
চালের বাজার নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে কোরবানিগঞ্জের রিকশাচালক মো. আলম বলেন, ‘সারাদিন রিকশা চালিয়ে চাল কেনার টাকা জোগাড় হয় না। মোটা চালের কেজি ৭০ টাকা।’
চাক্তাইয়ের আড়তদার মো. জামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘আমদানি করা চাল নিদিষ্ট ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছে। আমরা যেসব চাল দিনাজপুর, বগুড়া থেকে এনেছি তা খরচ বেশি পড়েছে। যার কারণে এসপ্তাহে বস্তাপ্রতি প্রায় ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে।’
আজিম অটোরাইচ মিলের মালিক মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘এবছর ধানের দাম বাড়তি। তার মধ্যে আমদানিতে খরচ বেড়েছে। যার কারণে চালের দাম ব্যবসায়ীরা কমাচ্ছে না।’
নির্ধারিত মূল্যের বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল
বাজারে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন। এসব সয়াবিন আগেই মজুদ করেছেন বলেও জানা যায়। বাজারে বর্তমান খোলা সয়াবিন বিক্রি করছে ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকায়, পাম তেল ১৫৫ থেকে ১৫৮ টাকায়, পাম তেল সুপার ১৫৯ থেকে ১৬২ টাকায়। আর বোতলজাত সয়াবিন ১৭৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করার ঘোষণা থাকলেও পূর্বের মজুদকৃত বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বলা যায় প্রতিটা বোতলজাত সয়াবিনে গায়ের মূল্যের চেয়ে ১০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি করছে। আর পাম তেলে লিটারে বাড়তি বিক্রি করছে ১২ থেকে ১৫ টাকা।
বাড়তি দর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বকসিরহাটের মো. ফারুক সওদাগর বলেন, ‘ভোজ্যতেলের ডিলারেরা আমাদেরকে বাড়তি দরে বিক্রি করছে। যার কারণে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে।’ একই কথা বলেন, নতুন চাক্তাইয়ের ‘তেলঘর’ নামে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজারও।
বাড়তি মুরগি, মাংস ও মাছের দাম
গত দুই সপ্তাহ ধরে বাড়তির দিকে ব্রয়লার মুরগির দাম। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গরু ও খাসির মাংসের দামও।
বাজারে সাইজভেদে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৯৫ থেকে ২০৫ টাকা, সোনালি ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, লাল লেয়ার ২৮০ টাকা, পাকিস্থানি কক ৩১০ টাকা ও দেশী মুরগি ৫৪০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা দরে। আর ডিম বিক্রি হয়েছে ডজনপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। বলা যায় আমিষজাত এসব খাবারে সপ্তাহের ব্যবধানে তেমন পরিবর্তন না আসলেও উর্ধ্ধমুখী প্রবণতা রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ‘পেল্ট্রিখাতে উৎপাদন সংকট থাকায় বেড়েছে দাম।’
গত সপ্তাহে কিছুটা কমলেও এ সপ্তাহে আবারও চড়া মাছের বাজার। বাজারে সাইজভেদে প্রতি কেজি রুই ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতল ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের কৈ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এছাড়া, প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এসব মাছ গত সপ্তাহে আরও কম দরে বিক্রি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
সরবরাহ বাড়ায় স্বস্তি সবজিতে
গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সবজির সরবরাহ আরও বাড়ায় দামও অনেকটা কমেছে। গত এক মাসের ব্যবধানে বাধাকপি, ফুলকপি, শিম, শালগমসহ প্রায়সব শীতকালীন সবজির দাম কেজি প্রতি কমেছে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা। বাজারে এসব সবজি বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকায়। আর কাঁচামরিচের দাম কমে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা, লতি ৭০ টাকা, কহি ৫০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা ও পটোল ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর দাম কমে পুরোনো আলু বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায় আর মুন্সিগঞ্জের নতুন আলু ও লাল আলু মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায়।
দাম কমেছে শাকের বাজারেও। বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০-১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০-১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।
সবজির দাম এভাবে কমাতে কৃষকরা বড় লোকসানে পড়তে পারেন বলে মন্তব্য করেন সবজির আড়তদারেরা।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের সবজি আড়তদার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর সবজির দাম অনেক কমতি। আর মাসের ব্যবধানে প্রায় সব সবজির দাম কমেছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। আর এভাবে দাম কমাতেই পচনশীল পণ্য হওয়ায় কৃষকরা সবজি চাষে আগ্রহ হারাবেন। তবে ক্রেতারা অনেকটা স্বস্তিতে সবজি কিনছে।’