এ কথা সর্বজনবিদিত যে, মিনিকেট, নাজিরশাইল, কাজল প্রভৃতি নামে যেসব চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তা একই জাতের ধান থেকে তৈরি। এসব নামে ধানের কোনো জাত নেই বাস্তবে। ‘নাইজার শাইল’ নামে এক ধরনের ধান স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হলেও তা পরিমাণে এতই কম যে বাজারে খুব একটা পাওয়াও যায় না ।
আসলে ‘ব্রি-২৮’ ও ‘ব্রি-২৯’ ধানের চালই বাজারে বিক্রি হচ্ছে এসব নামে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে একই চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বস্তাবন্দি হচ্ছে আড়তগুলোয়। যে চাল কুষ্টিয়ায় ‘নাজিরশাইল’ হিসাবে বস্তায় ঢুকছে, ওই চালই হয়তো বগুড়ায় ‘মিনিকেট’ ও শেরপুরে ‘কাজল’ নামে বস্তাবন্দি হচ্ছে ভিন্ন কোম্পানির ব্র্যান্ডে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে উৎপাদিত চালের ৮৫ শতাংশই মোটা। আর মাত্র ১৫ শতাংশ চিকন চাল।
চালকল মালিকরা মোটা চাল চিকন করে মিনিকেট, নাজিরশাইল, কাজল নামে বাজারজাত করছেন। এতে মোটা চালের ভেতরের অংশ বেশি দামে কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা। এ ছাড়া চালের উপরিভাগে যে পুষ্টি থাকে তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন ভোক্তা। এতে স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। তাদের মতে, দেশে বোরো ও আমন মৌসুমে ব্যাপকভাবে চাষ হয় ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধান। অথচ এ নামে বাজারে কোনো চাল বিক্রি হয় না।
ক্রেতাদের ঠকানো বন্ধ করতে বস্তায় ধানের জাত, মিলের ঠিকানা ও দাম লেখা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে গত ২১ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে। এই নির্দেশনা পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে কার্যকর করতে বলেছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখনো সরকারের দেওয়া এই নির্দেশনা অন্তত চট্টগ্রামে কার্যকর হয়নি বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। তাতে বলা হয়েছে, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের চাক্তাইয়ে বেশ কয়েকটি রাইস মিল ও চালের গুদাম এবং চালের পাইকারি বাজার পাহাড়তলীতে ঘুরে কোথাও চালের বস্তায় ধানের জাত ও মিল গেটে চালের দাম লেখা দেখতে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে মিল মালিক ও চালের আড়তদারদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। দেশের কোথাও এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। চালের বস্তায় মিলের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর এই তিনটি লেখা থাকে। কিন্তু তারিখ ও মূল্য লিখতে গেলে আমরা চাল বিক্রি করতে পারব না। বাজারে চালের দাম ওঠানামা করায় বস্তায় মূল্য লিখতে পারছেন না বলে জানান তারা। তবে মিল মালিক ও চালের আড়তদারদের সঙ্গে একমত নন অনেক দোকানদার।
মিল মালিকদের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে দিনাজপুর থেকে আনা চাল ঢাকায় একদামে, চট্টগ্রামে একদামে, টেকনাফে আরেকদামে বিক্রি করতে হবে পরিবহন ব্যয়ের কারণে। এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না কারণ, কোনো কোম্পানি জায়গাভেদে দাম নির্ধারণ করে না। দাম নির্ধারণের সময়ই পরিবহন ব্যয়ের হিসাবটি সমন্বয় করে নেন।
আসলে বিষয়টি হচ্ছে এরা আইন মানছেন না। ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। কিন্তু সরকার তাদের আইন মানতে বাধ্য করতে পারছেন না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ যাদের পক্ষে কথা বলবার কেউ নেই।
এ মুহূর্তের সংবাদ