নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুরোনো ভবনে ৬টি লিফট রয়েছে। ইমার্জেন্সিতে ৪টি এবং মূল ফটকে ২টি। তার মধ্যে ইমার্জেন্সির তিনটি রোগীদের জন্য বাকি একটি লিফট ডাক্তার-নার্সদের জন্য ব্যবহার করা হয়। সেখান থেকে একটি লিফট পরিবর্তনের জন্য আড়াই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে রোগী আনা নেওয়াতে চরম ভোগান্তি পড়েন হাসপাতালে কর্মরত স্টাফ এবং রোগীর স্বজনরা। অবশেষে এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে। চলমান কাজ শেষ হওয়ায় দুয়েক দিনের মধ্যে লিফট চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ৩ হাজারের অধিক রোগী ভর্তি থাকে। অধিকাংশ ওর্য়াড এখনো পুরোনো ভবনে রয়েছে। যার কারণে প্রতিদিন ভবনটিতে রোগীর উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকে। ভবনটিতে বেশির ভাগ রোগী ইমার্জেন্সি বিভাগের লিফটে আনা-নেওয়ার করা হয়। সেখানে ১ নম্বর লিফট শুধু চিকিৎসক এবং নার্সদের জন্য ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে ১ ও ৪ ছোট এবং ২ ও ৩ নম্বর বড় লিফট। ছোট লিফটে হুইল চেয়ারে করে রোগী বহন করা গেলেও ট্রলি ব্যবহার করা যায় না। ১০-১৫ জনের ধারণ ক্ষমতাসমন্ন এ লিফটগুলো। বড় লিফট এক সাথে দুটো ট্রলি এবং ২০ থেকে ২৫ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। টেন্ডার হওয়ায় ডিসেম্বরের শুরুর দিকে লিফটের কাজ শুরু হয়। বন্ধ হয়ে যায় রোগী আনা-নেওয়া কাজ। সেই কাজ শেষ হওয়ায় আজ (রোববার) না হয় আগামীকাল রোগীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
দুই মাসের বেশি বন্ধ থাকায় ভোগান্তির প্রসঙ্গে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণি কর্মকর্তা মফিজ বলেন, ‘বড় লিফটটি প্রায় আড়াই মাস ধরে বন্ধ থাকায় ভোগান্তির কম ছিলো না। যারা উঠতে বসতে পারে না এমন রোগী ট্রলিযোগে আনা নেওয়া হয়। একটি লিফটে শুধু দুটো ট্রলি বহন করা যায়। যার জন্য লিফটে জায়গা পেতে পেতে দীর্ঘ সময় লাইন ধরে থাকতে হয়। এতে ইমার্জেন্সি রোগীদের ঠিক সময়ে ওর্য়াডে পৌঁছাতে না পারায় দুর্ঘটনা ঘটতো। লিফট দুটো চালু হলে আমাদের এবং রোগীদের সুবিধা হবে। নির্বিঘেœ রোগী বহন করা যাবে।’
রোগীর স্বজন সামসুল আলম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে আসি। ইর্মাজেন্সি রোগী হওয়ায় সাথে সাথে ট্রলি নিয়ে লিফটের কাছে নেওয়া হয়। কিন্ত সেটাতে আগে থেকে রোগী আর ট্রলিতে ভরা ছিলো। অনেক অনুরোধ করার পরও তারা আমার স্ত্রীকে নেয়নি। পরে সেই লিফট ফেরত এলে ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়। তখন খুবই টেনশনে ছিলাম।’
এ প্রসঙ্গে লিফট পরিবর্তনের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ার মোর্শেদুল আলম বলেন, ‘লিফটের কাজ প্রায় শেষ। রোববার বা সোমবার রোগীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। লিফটটি অনেক পুরোনো। যার কারণে রোগী আনা নেওয়াও ঝুঁকির মুখে পড়ে। অনেক সময় আটকেও থেকেছে। তাই সমস্যা সমাধানের জন্য টেন্ডার আসে। তবে এটা মেরামতও না। লিফট পরিবর্তন করা হয়েছে। সম্পূর্ণ নতুন যন্ত্রাংশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৫ নম্বর লিফট পরিবর্তন করা হবে।’
লিফট সুবিধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা অনেক নিরাপদ থাকবে। এটি কোনো জায়গায় আটকালে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, মানে লিফটটি ছিঁড়ে যাওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই। সব সিস্টেম অত্যাধুনিক। ’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, ‘হাসপাতালের দুটি লিফট ঝুঁকিতে থাকায় সেগুলো পরিবর্তন করা হচ্ছে। সেগুলো অত্যন্ত পুরোনো। দীর্ঘদিন ধরে সমস্যাও দেখা যায়। সেগুলো পরিবর্তন করা হচ্ছে। তবে দুই-আড়াই মাস কাজ চলায় রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তা আজ-কালের মধ্যে সমাধান হচ্ছে।’