শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »
গণপরিবহনের চালকদের ইউটার্ন ও যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে নগরীর কয়েকটি রুটে যাত্রীদের বিড়ম্বনা বাড়ছে। এই দুইটি কাজ হচ্ছে চালকদের ‘ইচ্ছেমতো’। এতে যাত্রীদের যেমন গুনতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া, তেমনই পোহাতে হচ্ছে যানজটের ভোগান্তি। অন্যদিকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে না গিয়ে কিছু কিছু গণপরিবহন চলাচল করছে মর্জিমাফিক, এতে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, কর্নেলহাট সিডিএ ১ নম্বর থেকে ছেড়ে যায় তিনটি রুটের তিন চাকার মাহেন্দ্র গাড়ি। এরমধ্যে ১১ নম্বর রুটের গাড়ি যায় নিমতলা বিশ্বরোড পর্যন্ত। কিন্তু গাড়িটি এই রুটকে দুই ভাগে ভাগ করেছে বড়পোলকে কেন্দ্র করে। আর ১০ নম্বর রুটের গাড়ি যায় দেওয়ান হাট পর্যন্ত। কিন্তু এ গাড়িও এই রুটকে দুইভাগে ভাগ করেছে অলংকারকে কেন্দ্র করে। অন্যদিকে ১১ নম্বর রুটের গাড়ি যায় জিইসি মোড় এলাকা পর্যন্ত। কিন্তু সিডিএ কর্নেলহাট এলাকা থেকে একে খান মোড়ের দূরত্ব কম হওয়ায় এ রুটের গাড়ি সিডিএ’তে যায় না। একে খান থেকেই গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায় জিইসি মোড়।
আরও দেখা যায়, কর্নেলহাট সিডিএ ১ নম্বর থেকে ছেড়ে যাওয়া মেট্রোবাসের তিনটি রুট। একটি হলো ৪ নম্বর রুট, যার গন্তব্য কোতোয়ালী মোড়। কিন্তু গাড়িটি যায় নিউমার্কেট মোড় পর্যন্ত। অন্যটি হলো ১১ নম্বর রুট, যার গন্তব্য কাটগড় পর্যন্ত হলেও গাড়িটি যায় ফ্রি-পোর্ট অর্থাৎ ইপিজেড পর্যন্ত। আরেকটি গাড়ি সড়কে চলাচল করে সোনার বাংলা সার্ভিস নামে। এটি টিকেটের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করে থাকে এবং নির্ধারিত গন্তব্যে নির্ধারিত সময়ে চলাচল করে।
অন্যদিকে দেখা যায়, বারেক বিল্ডিং এলাকা থেকে গ্যাসচালিত টেম্পু চলাচলের শেষ গন্তব্য মুরাদপুর পর্যন্ত হলেও গাড়িটি চলাচল করে চকবাজার পর্যন্ত। আবার বড়পোল থেকে চকবাজার পর্যন্ত চলাচল করা লেগুনা টেম্পুগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে চলাচল করে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় এলাকাকে কেন্দ্র করে।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে দেওয়ান হাট এলাকায় শফিক নামের এক যাত্রী বলেন, ‘গ্যাসের গাড়িগুলো ওঠা-নামা ৫ টাকা করে নিলেও তেলের গাড়িগুলোতে ওঠা-নামাই ১০ টাকা। এই লাইনে তো গ্যাসের গাড়ি নাই। তেলের গাড়িতে অলংকার যেতে লাগে ১৫ টাকা, আর কর্নেলহাট সিডিএ যেতে লাগে ২০ টাকা। কিন্তু এখানের গাড়িগুলো অলংকারে একটা স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলেছে। তাই আমাদের অলংকার ১৫ টাকা দিয়ে তারপর আবার একই লাইনের অন্য গাড়িতে উঠে ১০ টাকায় যেতে হয় কর্নেলহাট সিডিএ। এসব পুলিশের সামনে হলেও তারা কিছু দেখে না।’
একই প্রসঙ্গে রিয়াজ নামের একজন চালক বলেন, ‘অতোদূরে আমরা যাই না। কারণ ওখানে তেমন একটা যাত্রী পাওয়া যায় না। খালি গাড়ি নিয়ে গিয়ে তেল পুড়িয়ে লাভ কি? এছাড়া যেতে এবং আসতে দেখা যাবে বড় বড় গাড়িগুলো যেখানে সেখানে পার্কিং করে আছে। এদের কারণে জ্যাম লেগেই থাকে। তাই যাওয়া-আসার সময় বাঁচিয়ে লাইনম্যান আর ট্রাফিককে খুশি করে দিলেই হয়ে যায়।’
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার মো. তারেক আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযান চালাই। এ ধরনের গন্তব্যে না যাওয়া গাড়িগুলোকে ইউটার্ন মামলা করি। অনেক ক্ষেত্রে দুই-চার দিনের জন্য কিছু গাড়ি আটকও করি; কিন্তু তাতেও তারা শুধরায় না। গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠনগুলোর সঙ্গেও আমরা এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু তারাও কথা দিয়ে কথা রাখে না। এছাড়া এই জায়গাটা খুব ঝামেলার। এখানে দীর্ঘদিন ধরে বাস কাউন্টারগুলোর অবস্থান। এদের তো বাস স্ট্যান্ড নাই। তাই রাস্তার একটা লাইনে তাদের পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে অন্য লাইনে সব ধরনের গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করতে হয়। এখন আমরা আর ছোট গাড়ি নামাতে চাই না। তাই নতুন করে কোনো গাড়ি নামছে না। আমরা গণপরিবহন হিসেবে বড় গাড়ি, বিশেষ করে বাস নামানোর পক্ষে।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পার্কিং সংক্রান্ত জটিলতা কমিয়ে আনতে নগরজুড়ে পে-পার্কিং চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। ঘণ্টা প্রতি দুই চাকা ১৫, তিন ও চার চাকা ৩০ টাকায় পার্কিং সুবিধা নগরজুড়ে করার আগে একটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে আগ্রাবাদে কাজ শুরু করেছে।
এ প্রসঙ্গে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘নগরের সবগুলো রাস্তার ফুটপাতকে অবৈধ দখলমুক্ত করে ওই জায়গায় সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঠিক অনুরূপভাবে নগরীর যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধে পে-পার্কিং এর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এতে যত্রতত্র পার্কিংয়ে যানজট হবে না। রাস্তায় গাড়ি চলাচল, ফুটপাতে মানুষ চলাচল ও পার্কিংয়ে শৃংখলা ফিরে আসবে। এজন্য সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করছি।