চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) স্থগিত হওয়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৭ জানুয়ারি। আগের তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ মার্চ চসিক এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু করোনার কারণে তা স্থগিত করা হয়। নির্বাচন দফতর থেকে পাওয়া সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ভোটযুদ্ধে থাকবেন ২৩৭ জন প্রার্থী। মেয়র প্রার্থী ৭ জন, কাউন্সিলর ১৭৩ জন এবং সংরক্ষিত আসনে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ৫৭ জন। বর্তমান চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের ৬ মাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি।
নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপি প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের মধ্যে। ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম পদ্ধতিতে জনগণকে সচেতন করতে মক ভোটিং হবে ২৫ জানুয়ারি, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণও এর মধ্যে শেষ হবে বলে জানা গেছে। নির্বাচনে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা থাকবেন ১৭ হাজার।
ইতিপূর্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচনগুলিতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম। এতে নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ গণরায়ের যথার্থ প্রতিফলন ঘটেনি, অবশ্য এ রকম পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ পত্রÑপত্রিকায় এসেছে। আমরা আশা করবো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে, কেননা করোনার মধ্যেও বিভিন্ন জায়গায় লোকসমাগম, সভাÑসমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হাটবাজারÑমার্কেটেও জনগণের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জীবনÑজীবিকার সংগ্রাম এক সঙ্গে চালাতে হবে। এর মধ্যে নাগরিক অধিকার, দায়িত্ব যথাযথ পালন করে যেতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি পর্যায়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রধান প্রধান দলগুলি অংশ নিচ্ছে সুতরাং যার যার নাগরিক দায়িত্ব সচেতনতার সাথে পালন করে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং গণরায়ের সত্যিকারের প্রতিফলনের জন্য নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি অবশ্য কাম্য। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলির দায়িত্ব সমধিক। তাদের কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীরা যাতে ভোট কেন্দ্রে আসে সেজন্য নির্বাচনী পরিবেশ যেমন উত্তেজনা ও সহিংসতা মুক্ত হওয়া দরকার, তেমনি নির্বাচনী প্রচারণায় উৎসবমুখরতাও প্রয়োজন। এ জন্য প্রচারণায় বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। ভোটারদের বাসা/বাড়িতে যাওয়া, তাদের ভোটার স্লিপ দেওয়া, মোবাইলে এসএমএস দেওয়া এবং অন্যান্য প্রযুক্তির আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। তাহলে নির্বাচনী প্রচারণায় সংঘাত, বিশৃঙ্খলা এড়ানো সম্ভব হবে। করোনার কারণে সকলকে মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সমাবেশ, স্বাস্থ্যসম্মত আচারাদি পরিপালন বৃহত্তর জনস্বার্থেই প্রয়োজন। সেই সাথে কোনো অবস্থতাতেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করা উচিত হবে না। নির্বাচন কমিশন; স্থানীয় নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে এ ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। নির্বাচনের পূর্বাপর অপরাধী ও দুর্বৃত্তরা যাতে নগরে বিশ্ঙ্খৃলা ও সামাজিক শান্তি নষ্ট করতে না পারে সে ব্যাপারে কমিশন, রাজনৈতিক দল ও প্রশাসন দৃষ্টি রাখবেÑ এটি নগরবাসী আশা করে।
চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিকভাবেও চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, দেশিÑবিদেশি বিনিয়োগ, মেগা প্রকল্পÑএসব নিয়ে চট্টগ্রাম অতীব গুরুত্বপূর্ণ নগরী। সুতরাং নগরের জনপ্রতিনিধি যারা হবেন তাদের অবশ্যই একটি ন্যায্য ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক শৃঙ্খলাপূর্ণ সমাজ গঠনে ব্রতী হতে হবে।
মতামত সম্পাদকীয়