সেবা সংস্থাগুলোর সাথে প্রথম সমন্বয় সভা
অতীতের সব দূরত্ব ঘুচিয়ে কাজ করছি: দোভাষ
৬০ লাখ মানুষের বাস টার্মিনাল না থাকায় সিএমপির আক্ষেপ
বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের নিচে চসিকের ডাস্টবিন নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়ায়: পিডিবি
আবাসিক সংযোগ দিতে প্রশাসককে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলার অনুরোধ কর্ণফুলী গ্যাসের
নিজস্ব প্রতিবেদক :
টেকসই সেবা নিশ্চিতে সকলের সহযোগিতা চাইলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবারের চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় সভায় তিনি এই আহ্বান জানান। একইসাথে তিনি আরো বলেন, সকল সংস্থার সমন্বয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিশ্চিত করা গেলে উপকৃত হবে ৬০ লাখ মানুষ।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক, সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী, কর্ণফুলী গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক, গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিকের (পশ্চিম) উপ-কমিশনার এবং বিআরটিএ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, নগরীর সব সেবা সংস্থার প্রধানদের আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু কিছু কিছু সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত না থেকে প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন এবং আবার কয়েকটি সংস্থার কেউ আসেনি। তবে সংস্থা প্রধানগণ উপস্থিত থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়।
সিডিএ ও সিটি করপোরেশন উভয় প্রতিষ্ঠানকে যমজ ভাই উল্লেখ করে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, উন্নয়ন ও সেবা সংস্থা একে অপরের পরিপূরক। আমরা দুই সংস্থা একইসাথে মিলেমিশে নগরীর উন্নয়নে কাজ করবো।
সমন্বিত কার্যক্রম প্রসঙ্গে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, আমরা অতীতের সব দূরত্ব ঘুচিয়ে সব শ্রেণি পেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। জলাবদ্ধতার মেগাপ্রকল্পের পাশাপাশি আউটার রিং রোড এর কাজ শেষ করা হচ্ছে। কবি নজরুল ইসলাম রোড থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ক ৬০ ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। কোথাও ৬০ ফুট না থাকলে প্ল্যানও দেয়া হচ্ছে না।
সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিকের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) জয়নুল আবেদীন বলেন, ৬০ লাখ জনসংখ্যার একটি শহরে বাস টার্মিনাল নেই। দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সব শহরে টার্মিনাল রয়েছে। কিন্তু এই শহরে নেই।
তিনি আরো বলেন, রাস্তায় পার্কিংয়ের কারণে আমরা গাড়ি চালকদের জরিমানা করি। কিন্তু প্রতিটি শপিং মল ও ভবনের নিজস্ব পার্কিং রাখার বিধান থাকলেও বাস্তবে তা নেই।
এই বক্তব্যের জবাবে খোরশেদ আলম সুজন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষকে উল্লেখ করে বলেন, সিডিএ চাইলে চট্টগ্রাম শহরে একটি বাস ও ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করতে পারে। সিটি গেইট এলাকায় গ্ল্যাক্সোর অফিসের পাশে বিরাট জায়গা খালি পড়ে রয়েছে। সেখানে প্রায় ১৫০টি বাসের একটি আধুনিক টার্মিনাল নির্মাণ করা যায়। আর তা করা গেলে আন্তঃজেলা গাড়িগুলো আর নগরের ভেতরে প্রবেশ করতো না এবং যানজট নিয়ন্ত্রণে থাকতো।
যত্রতত্র পার্কিং প্রসঙ্গে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, সিডিএ থেকে পার্কিং করা হবে বলে ভবন অনুমোদন নিয়ে পার্কিংকে ভিন্ন কাজে ব্যবহার করে। আর গাড়ি কোম্পানিগুলোর নিজস্ব কোনো গ্যারেজ বা রাখার জায়গা নেই। এই নগরের রাস্তাগুলো তাদের গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম নগরীর রাস্তাগুলো আজ ধুলোয় আচ্ছন্ন হওয়ার পেছনে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে দায়ী করে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক নুরুল্লাহ নূরী বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চলমান কাজে চারপাশে কোনো বেষ্টনি দেয়নি। এতে ধুলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। একইচিত্র পোর্ট কানেকটিং রোডে সিটি করপোরেশনের নির্মাণকাজেও। পরিবেশ দূষণের দায়ে তাদের জরিমানা করা হলেও দূষণতো বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাই তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
নুরুল্লাহ নূরী আরো বলেন, জেনারেল হাসপাতাল ও টেরিবাজার এলাকায় ডাস্টবিনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর তা বাড়ালে আবর্জনাগুলো রাস্তায় যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়বে না।
এদিকে নগরবাসী যখন ভাঙ্গা রাস্তা থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে যাচ্ছে তখনই চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ আবারো রাস্তা কাটার ঘোষণা দিলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম শহরে কোনো সুয়্যারেজ ব্যবস্থা নেই। একটি শহরে সুয়্যারেজ ব্যবস্থা নেই তা হতে পারে না। আমরা শিগগিরই তা করার জন্য হয়তো ব্যাপক হারে রাস্তা কাটা শুরু করতে পারি। পানির জন্য রাস্তা কাটায় কিন্তু নগরবাসী পানি দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেয়েছে। তবে নগরবাসীর সেই সময়ের দুর্ভোগের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
রাস্তার উপর বৈদ্যুতিক পোল থাকার কারণে উন্নয়ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এই বক্তব্যের জবাবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ইমাম হোসেন বলেন, প্রকল্প গ্রহণের আগে আমাদের তা জানালে পরিকল্পনা অনুযায়ী তা অপসারণ করা যায়। কারণ এক বা দুটি হলে হয়তো আমরা নিজেরা সরাতে পারি। কিন্তু পোলের সংখ্যা বেশি হলে তা প্রকল্প আকারে মন্ত্রণালয়ে উপস্থাপন করে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অনেক ডাস্টবিন বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের নিচে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডাস্টবিনের কারণে কাক এসে ট্রান্সফরমারের উপরে বসে এবং বিভিন্ন সময়ে ট্রান্সফরমার নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ওই এলাকার মানুষ যেমন কিছুদিন বৈদ্যুতিক দুর্ভোগ স্বীকার করে তেমনিভাবে ট্রান্সফরমার মেরামত করতে সরকারেরও অর্থের অপচয় হয়। তাই ট্রান্সফরমারের নিচ থেকে ডাস্টবিন সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্পের অধীনে এবং সিডিএ’র প্রকল্পের অধীনে রেগুলেটর নির্মাণ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, এসব রেগুলেটর নির্মাণ শেষে সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু এগুলো পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত জনবল সিটি করপোরেশনের প্রয়োজন। প্রকল্পের আওতায় তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর বলেন, রেগুলেটর নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সময়ে খালাসি নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসতে হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তা মেকানাইজড করতে হবে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে কোন রেগুলেটর দিয়ে কতটুকু পানি ছাড়া হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। অন্যথায় এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সাগরপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেদখলে থাকা জায়গা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা শিগগিরই জায়গাগুলো সীমানা দেয়াল দিয়ে ঘেরাওয়ের উদ্যোগ নিচ্ছি। একইসাথে অবৈধ দখলদারদেরও উচ্ছেদ করা হবে।
নগরবাসীকে গ্যাসের আওতায় আনতে কর্ণফুলী গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, ২৫ হাজার গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০ হাজার ডিমান্ড নোট জমা রয়েছে। নগরীতে দ্রুত আবাসিক সংযোগ দিতে প্রশাসককে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি কথা বলার অনুরোধ করেন তিনি। এছাড়া নতুন করে আরো ১ লাখ ৪০ হাজার প্রিপেইড মিটার লাগানো হবে বলে জানান