সুপ্রভাত ডেস্ক »
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চলতি ২০২৪—২৫ অর্থবছরের বর্ধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে পরিকল্পনা জমা দিতে বলেছে আইএমএফ।
আইএমএফ (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) জানিয়েছে, পরিকল্পনা চলতি মাসের মধ্যেই পেতে চায় এটি। এ পরিকল্পনা আইএমএফের ওয়াশিংটনের পর্ষদে উপস্থাপন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) এনবিআরের আয়কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ বিষয়টি আলোচিত হয়। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআর—এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতে হলে আগের তুলনায় প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় করতে হবে।
‘কীভাবে এ অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহ করা হবে, তার পরিকল্পনা দিতে বলেছে আইএমএফ,’ বলেন তিনি।
তবে আয়কর শাখা থেকে নতুন করে চলতি অর্থবছরে কোনো কর রেয়াত বাদ দেওয়া বা করহার বাড়ানো কঠিন, কারণ বছরের মাঝামাঝি এসব পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়।
আবার আমদানি পর্যায়ে শুল্ক বাড়ালে তার প্রভাব মূল্যস্ফীতিতে সরাসরি পড়বে উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা এ বিষয়ে ভ্যাট শাখা কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন।
ভ্যাট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ‘কোন খাতের কর রেয়াত কমানো সম্ভব তা নিয়ে কাজ চলছে, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।’
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩—২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে তিন লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা (আইবাস—এর হিসাব অনুযায়ী), যা জিডিপির ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। খবর টিবিএস।
আইএমএফ—এর লক্ষ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের হার জিডিপির শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর কথা রয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাজস্ব আদায় কমতির দিকে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আদায় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ তথা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩১ হাজার কোটি টাকা কম।
এ অবস্থায় এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা কমানোর কথা ভাবছিল, কিন্তু বুধবারের সভায় লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে এনবিআর বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, বর্তমান বাস্তবতায় নতুন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়।
এনবিআরের সাবেক সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন সম্প্রতি বলেন, ‘জুলাই ও আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া আন্দোলন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা রাজস্ব আদায়ে বিঘ্ন ঘটিয়েছে, যা বর্তমান রাজস্ব পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনীতি স্থিতিশীল হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। এর আগে রাজস্ব আদায় প্রত্যাশা অনুযায়ী নাও হতে পারে।’
গত সোমবার (২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার—সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের এক সভায় এনবিআর—এর চেয়ারম্যানও স্বীকার করেন, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাস্তবসম্মত হবে না।