ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিরোধ
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এবার মানববন্ধনের ডাক
নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে (চমেক) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ বাড়ছে । দুই ছাত্রলীগ নেতার ওপর হামলার ঘটনায় ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে। ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (আইডিবি) এ কর্মসূচির আয়োজন করলেও মূলত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই এ কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। গত ১৩ আগস্ট রাতে চমেক ছাত্রলীগের দুই সহসভাপতি ডা. উসমান গনি ও হানি হাসনাইন প্রান্তিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। উসমান গণি চমেক হাসপাতাল ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক। আর হানি হাসনাইন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও ছাত্র সংসদের নেতা। তারা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা কলেজ ছাত্রলীগের বিগত কমিটির পদবঞ্চিত কর্মী ও বহিরাগত বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আল আমিন ইসলাম শিমুল। তিনি অভিযোগ করেন, এসব ব্যক্তিরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পরিচয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা সৃষ্টি করছেন। ওই হামলার ঘটনায় পুলিশ ১১ জনকে আটক করে। কিন্তু তারা একদিনের মাথায় আদালত থেকে জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন।
এ ঘটনায় ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (আইডিবি) শনিবার চমেক হাসপাতালে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। ওই দিন রাতে কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা এই কর্মসূচি স্থগিত করেন। এরপর কলেজ ছাত্রলীগ ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্তৃপক্ষের কাছে দুই দফা দাবি উত্থাপন করেন।
দুই দফা দাবিগুলো ছিল-হামলার ঘটনায় জড়িত বাকি ১১ জনকে গ্রেফতার ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মেডিক্যালের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া। সোমবার দুপুরে কর্তৃপক্ষ দুই দফা দাবি নিয়ে তাদের বৈঠক করেন। বৈঠকে তাদের দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয়।
কিন্তু বৈঠক শেষে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন। আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় কলেজ ক্যাম্পাসে এ কর্মসূচি পালন করবে তারা। এতে কলেজ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদও অংশ নেবে বলে জানা গেছে। প্রতিপক্ষকে ক্যাম্পাসে হুঁশিয়ার করতে এটা এক ধরনের শোডাউন হবে বলে জানিয়েছেন কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতা।
প্রশাসন দাবি মেনে নেওয়ার পরও কেন আবার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ডা. তাজওয়ার রহমান খান অয়ন সুপ্রভাতকে জানান, প্রশাসন এখনো অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় আনেননি। এছাড়া হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত আরো ১১ আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি। তারা যেকোনো সময় ক্যাম্পাসে এসে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমরা কর্মসূচির ডাক দিয়েছি।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ন কবীর সুপ্রভাতকে বলেন, আমরা ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাথে বৈঠক করে তাদের দুই দফা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছি। তারা বৈঠকে আমাদের এই পদক্ষেপে খুশিও হয়েছেন। এখন তারা এ ঘটনায় হঠাৎ করে আবার কেন ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করছেন তা আমার বোধগম্য নয়।
কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন ইসলাম শিমুল সুপ্রভাতকে বলেন, ১০ আসামি জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে রাস্তায় ঘোরাফেরা করছে। তারা যেকোনো মুহূর্তে ক্যাম্পাসে এসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমরা অভিযুক্তদের শাস্তির আওতায় না আনা পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করে যাবো।
দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের হাতে ছিল। সম্প্রতি ছাত্রলীগের অপর একটি অংশ ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। তারা ক্যাম্পাসে নিজেদের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে গত ১৪ জুলাই নওফেল ও সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী চমেক হাসপাতালে বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী দিতে যান। তারা বেরিয়ে যাওয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। সেদিন দুই পক্ষের কয়েকজন আহত হন। পরে এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলাও হয়। জানতে চাইলে ছাত্রলীগের অপর অংশের নেতা অভিজিৎ দাশ বলেন, চমেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি একপক্ষের হাতে বন্দি। আর কাউকে সেখানে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে দেওয়া হয় না। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে ব্যক্তি আ জ ম নাছির উদ্দিনের স্বাক্ষরে এখানকার কমিটি দেওয়া হয়। আমরা এই বলয়ের বাইরে গিয়ে ক্যাম্পাসে মুক্তভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে চাই।