রুমন ভট্টাচার্য :
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ফি ১৫ টাকা। কিন্তু রোগীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা। তবে কেউ প্রতিবাদ করলে বাড়তি টাকা ফেরত পাচ্ছে আর না করলে ওই টাকা ঢুকছে টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বরতদের পকেটে।
রোববার (৫ জুলাই) সরেজমিন বেলা ১২টায় জরুরি বিভাগের সামনে স্থাপিত টিকিট কাউন্টার ঘুরে ও হাসপাতালে আসা একাধিক রোগী ও স্বজনদের সাথে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন তথ্য ও চিত্র।
সরেজমিন দেখা যায়, কাউন্টারে বসা দুজন। সাদা শাট পরিহিত ব্যক্তি জরুরি বিভাগ ও ওয়ার্ডে ভর্তির টিকিট দিচ্ছেন। জরুরি বিভাগের টিকিট ১০ টাকা এবং ভর্তি ফি নিচ্ছেন ২০ টাকা। বাড়তি ৫ টাকা কাউকেই ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। কেউ জানতে চাইলে তাদের ভর্তি ফি ২০ টাকা বলা হচ্ছে। অনেকেই সরল বিশ্বাসে দাবিকৃত টাকা দিয়ে চলে যাচ্ছেন। কাউন্টারের বাইরে কাঁচের উপর সাদা কাগজে টিকিট ১০ টাকা ও ভর্তি ফি ১৫ টাকা লেখা থাকলেও সেটি কারো নজরেই পড়ছে না। কারণ এটি লাগানো হয়েছে একপাশে। ফলে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো কেউ দেখছেন না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন ৫ টাকা করে বাড়তি আদায় করছেন কর্তব্যরতরা।
দুপুর সাড়ে ১২টায় রাউজান গহিরা থেকে বোনকে নিয়ে আসা মো. ফজল করিম প্রথমে ১০ টাকায় একটি টিকিট কাটেন। পরে আবার জরুরি বিভাগ থেকে এসে ১০০ টাকার নোট দিলে তাকে ৮০ টাকা ফেরত দিয়ে আরেকটি টিকিট দেওয়া হয়। টিকিট নিয়ে তিনি ভিতরে চলে যান।
হঠাৎ কিছুক্ষণ পর তিনি উল্টো আবার টিকিট কাউন্টারে এসে ১৫ টাকার টিকিট ২০ টাকা কেন নেওয়া হল জানতে চান। তার এমন প্রতিবাদে হতভম্ব হয়ে পড়ে টিকিট কাউন্টারের কর্তব্যরত ও লাইনে দাঁড়ানো অনেকে। এছাড়া তিনি অন্যান্য রোগীদের কাছ থেকেও বাড়তি ৫ টাকা নেওয়ার কথা তুলে ধরলে
টিকিট কাউন্টারে বসা অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রতিবেদকের সামনে বলেন, ‘কারো থেকেই ৫ টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে না। ভাংতি ছিল না তাই। যারা বাড়তি দিয়েছেন তারা পরে এসে ফেরত নেবেন।’ শেষে ফজলের বাড়তি ৫ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন তিনি।
দুপুর পৌনে ১টায় সাতকানিয়া থেকে মামা শশুর আহমদ মিয়াকে নিয়ে আসা ইকবাল বলেন, ‘প্রথমে একটি টিকিট নিলাম ১০ টাকা এবং পরবর্তীতে আরেকটি নিলাম ২০ টাকা। সর্বমোট ৩০ টাকা নিল।’ ইকবাল জানেন না তার কাছ থেকে ৫ টাকা বাড়তি নেওয়া হয়েছে। কারণ কাচে লাগানো সাদা কাগজটি তার নজরে আসেনি বলে জানানা তিনি।
প্রায় একই কথা বললেন হাসপাতালে ভর্তি হতে আসাদের আরেকজন মৃদুল কান্তি বিশ্বাস। তিনি টিকিট কাউন্টারগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার দাবি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিকিট কাউন্টারে বাড়তি টাকা আদায়কারীর অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ নাসির। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করছেন নীরবে। শুধু দিনে নয়, রাতে একইভাবে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে রোগীদের কাছ থেকে। এর পিছনে আরো অনেকেই জড়িত। পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে একটি সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে হাসপাতালে। যারা করোনাকালীন সময়েও রোগীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে যাচ্ছেন নিয়মিত।
হিসাব করে দেখা যায়, হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ১০০ রোগী ভর্তি হলে প্রতি রোগীর কাছ থেকে যদি ৫ টাকা করে বাড়তি নেওয়া হয় তাহলে প্রতিদিন ৫০০ টাকা, মাসে ১৫ হাজার টাকা এবং বছরে প্রায় ২ লাখ টাকার কাছাকাছি আদায় করা হচ্ছে। যার পুরোটাই অবৈধ। বাড়তি পুরো টাকাটাই ঢুকছে সিন্ডিকেটের পকেটে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আফতাবুল ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সুপ্রভাতকে বলেন, ‘টিকিট ফি ১০ টাকা ও ভর্তি ফি ১৫ টাকাসহ সর্বমোট ২৫ টাকা। কেউ এই নির্দিষ্ট টাকার বাইরে বাড়তি নিলে সেটা অবৈধ ও অন্যায়। বিষয়টি যেহেতু জানতে পারলাম অবশ্যই খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এ মুহূর্তের সংবাদ