নিজস্ব প্রতিবেদক »
আন্দোলন সংগ্রামে অদম্য কণ্ঠস্বর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক চট্টল বীর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে নগর আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টায় চশমা জামে মসজিদ এর পার্শ্বস্থ মরহুমের কবর জিয়ারত, পুষ্পমাল্য অর্পন, সকাল সাড়ে ১০টায় খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল ও বেলা ১১টায় আলোচনা সভা কাজির দেউড়ির ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি।
মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজান গহিরা গ্রামে বক্স আলী চৌধুরী বাড়ির রেল কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং বেদুরা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে এসএসসি পাশ করেন। রাজনীতির হাতেখড়ি হয় জহুর আহমদ চৌধুরীর হাত ধরে। স্কুল জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
বাবার আদেশে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোর্সে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানের পাট না চুকিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। সেখানেও তিনি মনস্থির রাখতে না পেরে চলে যান কমার্স কলেজে। সিটি কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাস করেন। আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং আইন কলেজে ভর্তি হলেও লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে উত্থান-পতন ও নানা ঘটনাপ্রবাহে চট্টলবীর-এ পরিণত হয়েছিলেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। সাংসারিক জীবনে দুই ছেলে ও চার কন্যা সন্তানের জনক তিনি। মহিউদ্দিন চৌধুরী নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করলেও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তাঁর মনোবল ও সাহস ছিল অটুট।
১৯৬৮ ও ৬৯ সালে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মহিউদ্দিন একাত্তরে গঠন করেন ‘জয় বাংলা’ বাহিনী। বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে সাড়া দিয়ে পাকবাহিনীর হাতে অসংখ্যবার গ্রেফতার ও নিপীড়িত হন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে গিয়ে আইএসআই (পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থা) চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমি সদর দফতরের কাছ থেকে আটক হয়ে চার মাস অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেন। তিনি শহীদ হয়েছেন ভেবে ফাতেহা দিয়েছেন বাবা। এরই মাঝে মানসিক রোগীর অভিনয় করে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে পালিয়ে যান ভারতে। সেখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শেষে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন সম্মুখ সমরে। যুদ্ধ করেন ভারত-বাংলা যৌথবাহিনীর মাউন্টেন ডিভিশনের অধীনে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ পান। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধুর প্রিয়ভাজন। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তির অন্যতম সংগঠক বলে বিবেচিত হন সর্বমহলে।
চট্টগ্রামে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বন্দর রক্ষা আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
পাঁচ দশকের রাজনৈতিক জীবনে অনেক অর্জন থাকলেও ১৯৯৪ সালে প্রথমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী হয়েই মহিউদ্দিন চৌধুরী বিজয়ী হন। ২০০০ সালে দ্বিতীয় দফায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০০৫ সালে তৃতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তিন তিনবার নির্বাচিত হয়ে টানা ১৭ বছর তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ছিলেন। তাঁর আমলে নগরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সেবা এখনো চট্টলবাসী ভুলতে পারে না। ২০১৫ সালে আবার মেয়র প্রার্থী হলেও দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে তিনি মেয়র প্রার্থী থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। তবে বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। যে মাসে তাঁর জন্ম, সে বিজয়ের মাসে এই মহান বীরের মৃত্যু এখনো চিরস্মরণীয় হয়ে আছে চট্টলবাসীর মনে। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন।