সুপ্রভাত ডেস্ক »
ঢাকা শহরের ৭১ শতাংশ ও চট্টগ্রাম শহরের ৫৫ শতাংশ বাসিন্দার শরীরের কোভিড-১৯ এর অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণাটির ফলাফলে বলা হয়, দুটি শহরের বস্তি ও বস্তির বাইরে বসবাসকারী ৩,২২০ জনের দেহে সার্বিকভাবে ৬৮ শতাংশ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের বস্তির বাসিন্দাদের প্রায় ৬৮ শতাংশ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে এক ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানায় আইসিডিডিআর,বি।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গবেষণাটি থেকে আরও জানা যায়, বস্তির বাইরের বাসিন্দাদের মধ্যে বস্তির বাসিন্দাদের তুলনায় সংক্রমণের হার কম। বস্তির বাইরের বাসিন্দাদের মধ্যে সংক্রমণের হার ৬২ শতাংশ।
এছাড়াও, নারীদের মধ্যে অ্যান্টিবডির হার ৭০.৬ শতাংশ ও পুরুষদের ৬৬ শতাংশ বলে জানা গেছে।
২০২০ সালের অক্টোবর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে উপস্থিত অ্যান্টিবডির পরিমাণে পার্থক্যও নগণ্য। প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে ৭০ শতাংশ ও শিশুদের দেহে ৬৫.৫ শতাংশ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
গবেষণায় অংগ্রহণকারীদের ৬৮ শতাংশদের মধ্যে শুধু ৩৫.৫ শতাংশের করোনার মৃদু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল।
আইসিডিডিআর,বি সম্প্রতি সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের বিস্তার নির্ণয়ের জন্য একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। গবেষণাটি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বস্তি এবং বস্তিসংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী সার্স-কোভ-২ এর উপসর্গযুক্ত এবং উপসর্গহীন ব্যক্তিদের ওপর করা হয়েছে। এই সমীক্ষার মাধ্যমে সেরোপজিটিভিটি (রক্তে সার্স-কোভ-২ এর উপস্থিতি) সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ফরেইন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও); এবং ইউনাইডেট নেশনস পপুলেশন ফান্ড (ইউএনএফপিএ); বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এই গবেষণায় অ্যাডভোকেসি পার্টনার হিসেবে কাজ করেছে।
এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল বস্তি এবং বস্তির বাইরে বসবাসকারীদের রক্তে কভিড-১৯ এর উপস্থিতি এবং তার সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় করা। যেসব সম্ভাব্য কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে সেগুলো হলো- শরীরে শ্বাসকষ্টজনিত অন্যকোনো ভাইরাসের উপস্থিতি, পুষ্টিগত অবস্থা (যেমন- ভিটামিন ডি, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম) এবং রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা।
সমীক্ষাটি ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি সময়ের মধ্যে পরিচালনা করা হয়। এটি ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরে বস্তি এবং বস্তিসংলগ্ন বাইরের এলাকায় বসবাসকারী মোট ৩ হাজার ২২০ জনের মধ্যে একটি আন্তঃবিভাগীয় গবেষণা হিসেবে পরিচালনা করা হয়। গবেষণায় গৃহস্থালী পর্যায়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ, রক্তচাপ ও শরীরের পুষ্টি পরিমাপ এবং রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণা থেকে প্রাপ্ত মূল তথ্য
১. ৩,২২০ জন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে চট্টগ্রামের তুলনায় ঢাকায় সেরোপজিটিভিটির হার বেশি। ঢাকায় যেটি ৭১ শতাংশ, চট্টগ্রামে তা ৫৫ শতাংশ। বয়স্ক ও তরুণদের সেরোপজিটিভিটির হার প্রায় সমান। মহিলাদের মধ্যে সেরোপজিটিভিটির হার ৭০.৬ শতাংশ, যা পুরুষদের (৬৬ শতাংশ) তুলনায় বেশি। যেসব অংশগ্রহণকারীদের (মোট ২২০৯) মধ্যে সেরোপজিটিভিটি পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে শুধুমাত্র ৩৫.৫ শতাংশের ক্ষেত্রে মৃদু উপসর্গ দেখা দিয়েছিল।
২. স্বল্প শিক্ষিত, অধিক ওজন, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রয়েছে যাদের, তাদের মধ্যে অধিক মাত্রায় সেরোপ্রিভেলেন্স (রক্তে কোভিড উপস্থিতির হার) দেখা গিয়েছে।
৩. বার বার হাত ধোয়ার প্রবণতা, নাক-মুখ কম স্পর্শ করা, বিসিজি টিকা গ্রহণ এবং মাঝারি ধরনের শারীরিক পরিশ্রম করা ব্যক্তিদের মধ্যে কম মাত্রার সেরোপ্রিভেলেন্স দেখা গেছে।
৪. সেরোনেগটিভ ব্যক্তিদের তুলনায় সেরোপজিটিভ ব্যক্তিদের মধ্যে সেরাম জিঙ্কের মাত্রা বেশি দেখা গেছে। এটিই হয়ত গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে রোগের মৃদু লক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত।