বিগত ৪০ বছরে চট্টগ্রাম মহানগরীতে হারিয়ে গেছে ১২০টি পাহাড়। এরমধ্যে শুধুমাত্র একটি সড়ক নির্মাণে সরকারি সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কেটেছে ১৬টি পাহাড়। সবচেয়ে বেশি পাহাড় বিনাশ হয়েছে আবাসিক এলাকা নির্মাণে।
চট্টগ্রামে পাহাড় কেটে বানানো হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি। পাহাড় কেটে গড়ে তোলা স্থাপনায় আগে থেকেই রয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগ। আছে গভীর নলকূপ থেকে পানি তুলে পাইপলাইনের মাধ্যমে পৌঁছানোর ব্যবস্থা। এবার অবৈধ বসতিগুলোর বাসিন্দাদের যাতায়াত সুবিধার জন্য রাস্তা নির্মাণ করে দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
আকবরশাহ থানার বেলতলীঘোনা এলাকায় শুক্রবার পাহাড় কেটে রাস্তা করার সময় মাটি ধসে নিহত হন একজন। পাহাড়ে জনবসতি নিরুৎসাহিত করতে অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ উচ্ছেদের জন্য বারবার বলে আসছে জেলা প্রশাসন গঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। তা না করে উল্টো পাকা সড়ক নির্মাণের ফলে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতির সংখ্যা আরও বাড়বে।
পাহাড় কাটা বন্ধ করতে শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠিত হয়েছে। এ পর্যন্ত কমিটি ২৬টি সভা করেও পাহাড় কাটা বন্ধ করতে পারেনি। ফলে থামছে না পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল। নগরে অতীতে সংঘটিত পাহাড় ধসের বেশিরভাগই ঘটেছে ভারী বর্ষণের পর। অথচ কোনো বৃষ্টি ছাড়াই গত শুক্রবার আকবর শাহ থানার বেলতলী ঘোনায় পাহাড় ধস হয়েছে। এর কারণ ছিল পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ করা।
সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাহাড় কাটার কৌশল হিসেবে ছোট ছোট বসতি স্থাপনের মাধ্যমে প্রথমে পাহাড় দখল করা হয়। এরপর পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা হয় বসতি। পরে সুবিধাজনক অংশে এবং পাহাড়ের বিভিন্ন বসতির অন্তরালে বিরামহীনভাবে চলে পাহাড় কাটা। একসময় সেই অংশে পাহাড় কাটা শেষ হলে বসতি অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। আবার কোথাও কোথাও ভিন্ন পদ্ধতিতেও পাহাড় কাটা হচ্ছে। নির্দিষ্ট পাহাড় কাটার পূর্বে প্রথমে এর কিছু অংশে ৯০ ডিগ্রি খাড়াভাবে কাটা হয়। তারপর যেসব পাহাড় খাড়াভাবে কাটা হয়েছে তার চূড়ায় কিছু দূর অন্তর অন্তর খালের মতো করে কেটে ফেলা হয়, যাতে বৃষ্টির পানিতে পাহাড়ের মাটি সহজেই ধসে পড়ে।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় খোদ জেলা প্রশাসক বলেছেন, জনপ্রতিনিধিরাই পাহাড় কাটছেন। তাদের ছত্রছায়ায় চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো সাবাড় হচ্ছে। চট্টগ্রামের অস্তিত্বের স্বার্থে অবশিষ্ট পাহাড়গুলোকে রক্ষা করতে হবে। সিটি করপোরেশন ও সিডিএসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার। সবাইকে সচেতন হতে হবে। পাহাড় চট্টগ্রামের সৌন্দর্য। এই পাহাড় রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ


















































