নিজস্ব প্রতিবেদক »
চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। আক্রান্তের হার প্রতিদিন বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি নেই বললেই চলে। গণপরিবহন, শপিংমল, পর্যটনস্পটসহ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত সহস্রাধিক। নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১০২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
শুধুমাত্র জানুয়ারি মাসের প্রথম ২৩ দিনে করোনা শনাক্ত ৮ হাজারের কাছাকাছি। এর আগের তিনমাসে এতো রোগী শনাক্ত হয়নি। চিকিৎসকরা বলছেন নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে সংক্রমণ বাড়ছে। প্রাণঘাতী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টও সক্রিয় রয়েছে। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে বলে ইতিমধ্যে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। রোববার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের ৯টি ল্যাবে ২ হাজার ৬৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ১ হাজার ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে নগরের ৮২২ জন এবং উপজেলার ২০৪ জন। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে সর্বমোট ১ লাখ ১১ হাজার ১২৩ জনের করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে নগরের ৮১ হাজার ১৮৪ জন এবং উপজেলার ২৯ হাজার ৯৩৯ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় বি. আই. টি. আই. ডি. ল্যাবে ৭৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৪৩ জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ল্যাবে ৩২২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৪৫ জন এবং জেনারেল হাসপাতাল আর টি আর এল ল্যাবে ৪০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৭ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেছে।
প্রাইভেট হাসপাতালের মধ্যে ইমপেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে ২৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৭ জন, শেভরন হাসপাতাল ল্যাবে ৪৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১২৪ জন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ২৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৬ জন, মেডিক্যাল সেন্টার হাসপাতাল ল্যাবে ৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২০ জন, এপিক হেলথ কেয়ার ল্যাবে ৪৮১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৯০ জন এবং ল্যাব এইডে ৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
সারাদেশের চিত্র
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৫ হাজারের কম নমুনা পরীক্ষা করে ১০ হাজার ৯০৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে আরও ১৪ জনের।
তাতে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার দাঁড়াচ্ছে ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ, যা গত ২২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ।
শনাক্তের হার এর চেয়ে বেশি ছিল সর্বশেষ গত বছরের ২২ জুলাই, সেদিন প্রতি ১০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৩২ দশমিক ১৮টিতে কোভিড পজিটিভ আসে।
সে সময় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপটের মধ্যে দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ হাজারও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরপর সংক্রমণ কমে এলে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ডিসেম্বরে ২ শতাংশের নিচে নেমেছিল। জানুয়ারির শুরু থেকেই সংক্রমণের হার আবার হু হু করে বাড়ছে।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৫ হাজার ১৩৬ জনে। তাদের মধ্যে ২৮ হাজার ২২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনাভাইরাসে।
সরকারি হিসাবে গত এক দিনে দেশে সেরে উঠেছেন ৭৮২ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬১ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
এই হিসাবে দেশে এখন সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫২ জন। অর্থাৎ এই সংখ্যক রোগী নিশ্চিতভাবে সংক্রমিত অবস্থায় রয়েছে।
আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৯০ হাজার। ১৬ জানুয়ারি ছিল ৩৬ হাজার ৬৭৪ জন। অর্থাৎ, মাত্র এক সপ্তাহে সক্রিয় রোগী বেড়েছে প্রায় তিনগুন।
শনিবার নয় হাজার ৬১৪ জন নতুন রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে হিসাবে গত একদিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ২৯২ জন, বা ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
জানুয়ারির প্রথম দিনও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল চারশর নিচে, ৬ জানুয়ারি তা হাজার ছাড়ায়, ১৬ জানুয়ারি পেরিয়ে যায় ৫ হাজারের ঘর, এরপর মাত্র চারদিন পর ২০ জানুয়ারি তা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
মহামারীর মধ্যে সার্বিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। আর মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
গত এক দিনে শনাক্ত রোগীদের মধ্যে ৭ হাজার ২৯২ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের প্রায় ৬৬ শতাংশের বেশি।
গত কয়েক মাস ধরেই দৈনিক শনাক্ত রোগীর একটি বড় অংশ থাকে ঢাকার। তবে গত কয়েক দিন ধরে দেশের অন্যান্য জেলায়, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ছয়জন পুরুষ, আট জন নারী। তাদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগের দুইজন, খুলনা বিভাগের একজন, বরিশাল বিভাগের একজন, সিলেট বিভাগের দুইজন, রংপুর বিভাগের এক জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।