সবদিক থেকেই বঞ্চিত চট্টগ্রামের আরেকটি বঞ্চনার ইতিহাস হলো এখানে এখনও সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র গড়ে না তোলা। সামুদ্রিক মৎস্য খাতে উন্নয়নের জন্য সরকার দেশের উপকূলীয় ১৬ জেলার ৭৫ উপজেলায় সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। একই প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ১৮টি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার ও ফিশ হারবার নির্মাণের অনুমোদন ছিল। এর মধ্যে চট্টগ্রামের জন্য অনুমোদন ছিল ৪টি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টারের। এগুলো দক্ষিণ কাট্টলীর রাসমনি ঘাট এলাকায়, পতেঙ্গায়, সীতাকুণ্ডের কুমিরায় ও বাঁশখালী উপজেলায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু ভূমি সংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রামে একটিও ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার নির্মাণ হয়নি। দেশে বছরে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ হয় প্রায় ৭ লাখ মেট্রিকটন। আহরিত এসব সামুুদ্রিক মৎস্য দেশের উপকূলীয় বিভিন্ন পয়েন্টে খালাস করা হয়। এর মধ্যে বেশিভাগ মাছ বিপণনের জন্য ফিশিং বোট ও ট্রলার থেকে খালাস করা হয় চট্টগ্রামে। অথচ এখানে সরকারিভাবে নির্মাণ করা হয়নি আধুনিকমানের ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার। নগরের ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় বেসরকারিভাবে একটি ফিশ ল্যান্ডিং সেন্টার থাকলেও সেটি আধুনিকমানের নয়। নেই পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা।
দেশে সরকার অনুমোদিত বাণিজ্যিক ট্রলার রয়েছে ২৬৮টি। এর মধ্যে সাগরে নিয়মিত মৎস্য আহরণ করে ২৩৫টি। আহরণকৃত বাণিজ্যিক ট্রলারের মধ্যে মাত্র ৫টি উপকূলীয় জেলা খুলনায় মৎস্য খালাস করে। অবশিষ্ট ২৩০টি মৎস্য খালাস করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। একই চিত্র দেখা গেছে আর্টিসানাল বোটের ক্ষেত্রেও। দেশের উপকূলীয় ১৬ জেলার ৭৫ উপজেলায় সাগরে মৎস্য আহরণের জন্য অনুমোদিত ফিশিং বোট রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এর মধ্যে ৫ হাজার ৬৭৬টি বোট সাগরে আহরিত মৎস্য খালাস করে চট্টগ্রামে। কিন্তু সরকারিভাবে চট্টগ্রামে কোনো ফিশ ল্যাল্ডিং সেন্টার না থাকায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মৎস্য আহরণকারীরা। আধুনিক সুযোগ-সুবিধার অভাবে একদিকে যেমন মাছের গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
নগরের দক্ষিণ কাট্টলী রাসমনিঘাট এলাকার বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে সরকারি জায়গা। সেখানে প্রতিদিন সাগর থেকে আহরিত প্রচুর পরিমাণের সামুদ্রিক মাছ খালাস করা হয় ফিশিং বোট থেকে। কিন্তু সেখানে ফিশ ল্যাল্ডিং সেন্টার না থাকায় খালাসের সময় প্রচুর মাছ নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া সেখানে নেই কোন বরফকল। তাতে অনেক মাছ পচে যায়। এ অবস্থায় সেখানে প্রকল্প থেকে একটি ফিশ ল্যাল্ডিং সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ থাকলেও কার্যত সেটিও বাতিল হয়ে যায়।
দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরূপণ, আহরণ, বিপণন, নিয়ন্ত্রণ, নজরদারিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, গবেষণা, জেলেদের জীবনমান উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য আহরণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পটি গ্রহণ করে। বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পরে অবশ্য সেখান থেকে ৬০০ কোটি টাকা কাটছাঁট হয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামকে দ্বিতীয় রাজধানী অভিধায় অভিষিক্ত করা হলেও কার্যত তা ছেলেভুলানো ছড়ার মতোই। কোনোদিক দিয়েই চট্টগ্রাম তার প্রাপ্য সুযোগ ও অধিকার পাচ্ছে না। সামুদ্রিক মাছ আহরণ চট্টগ্রামে হলেও এখানে এখনও কেন সরকারি অবকাঠামো তৈরি হলো না তার জবাব কে দেবে?



















































