রাজিব শর্মা »
গত এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রামে এবার ৩৩ হাজার গবাদি পশু কম উৎপাদন হয়েছে। মূলত পশু খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে খামারিরা নিরৎসাহিত হয়ে পশুপালন থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। আর কাগজে কলমে এ ঘাটতির চিত্র উঠে আসলেও অর্থনৈতিক মন্দার কারনে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা ভাগাভাগি করে কোরবান করবেন। সে হিসেবে এই কম উৎপাদনের প্রভাব তেমনটা পড়বে না বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের কোরবানিতে চট্টগ্রাম জেলায় সম্ভাব্য কোরবানির পশুর চাহিদা ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৫টি। কিন্তু গরু, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বাসহ প্রস্তুত রয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯ টি। ফলে ঘাটতি রয়েছে ৩৩ হাজার ৪০৬টি।
জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় ১৫টি উপজেলা এবং চট্টগ্রাম শহরে কৃষকের খামারে মজুদ থাকা কোরবানিযোগ্য গবাদি পশুর মধ্যে মধ্যে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৭৫টি গরু, ৭১ হাজার ৩৬৫টি মহিষ, ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৩টি ছাগল, ভেড়া ৫৮ হাজার ৬৯২টি ও অন্যান্য পশু ৮৮টি। সে হিসেবে মোট পশু রয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজারের একটু বেশি। এবার সবচেয়ে বেশি পশুপালন করেছে সন্দ্বীপ উপজেলা। এ উপজেলায় পশু রয়েছে ৮২ হাজার ৮০৭টি। চাহিদা রয়েছে ৭৯ হাজার ৬৩৮টি।
গতবছর কোরবানির ঈদে গবাদি পশুর চাহিদা ছিল ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি। সে বছর বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও খামারে কোরবানিযোগ্য পশু উৎপাদন হয় ৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৩০টি। সেই বছরও প্রায় এক লাখের বেশি কোরবানির পশুর ঘাটতি ছিল। সে হিসেবে গত বছরের তুলনায় এবার পশু উৎপাদন কিছুটা বাড়লেও ঘাটতি ঠিকই রয়ে গেছে।
অতীতে এককভাবে কোরবানি দিতেন এমন কয়েকজন কোরবানিদাতার সঙ্গে কথা হয়। কোতোয়ালি এলাকার পাথরঘাটার মো. ফারুক সওদাগর বলেন, আগে আমার পরিবার এককভাবে কোরবানি দিতাম। এখন সবকিছুর দাম বাড়তি সে হিসেবে আয় বাড়েনি। এখন চাইলে এক লাখ টাকায় গরু একা কেনা সম্ভব না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি কয়েকজনে মিলে এবার কোরবানি করবো। আমার মতো অনেকেই এখন এককভাবে কোরবানি করতে পারে না। যার কারনে পশুর সরবরাহ যদিও কম থাকে তাহলে তার কোন প্রভাব পড়বে না।
নবাব সিরাজ-উদ-দৌল্লা রোডের বেসরকারি কর্মকর্তা মহসিন চৌধুরী বলেন, আমার বাবাদের দিনে এককভাবে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হলেও আমাদের দিনে এসে আর সম্ভব হচ্ছে না। এখন ১০ টাকা খরচ করতে হিসেব করতে হয়। একটা গরু ১ থেকে ২ লাখের নিচে পাওয়া যায় না। একক তো দূরের কথা, এখন পাঁচ পরিবারে মিলে একটা গরু কিনতে হিসেব করতে হচ্ছে। যেহেতু ধর্মীয় বিধান মানতে হয়। তাই প্রতিবছরের মতো এবারো ভাগাভাগি করে কোরবানি দিবো।
কর্ণফুলী মইজ্জারটেক ও বিবিরহাট গরুর বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, চট্টগ্রামে এ বছর আংশিক যে ঘাটতি আছে তা কোনভাবে প্রভাব পড়বে না। সবাই এককভাবে গরু কিনেনা। তাছাড়া টেকনাফ দিয়ে চোরাই পথে মিয়ানমারের গরু আসে। আর উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু খামার থেকে চট্টগ্রামে গরু আনা হবে। কাজেই বাজারে পশুর সংকট হবে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামে বেশি পশু কোরবানি হয়। এখানে সবাই এককভাবে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে যে ঘাটতিটা আছে তা পাশ্ববর্তী পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকে পশু এনে পূরণ করা হবে। তাছাড়া প্রতিবছর পাবনা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াসহ অনান্য জেলা থেকে গরু আসে। সবমিলিয়ে ঘাটতির প্রভাব চট্টগ্রামে পড়বে না।
উল্লেখ্য কয়েকবছর ধরে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ রয়েছে। যার ফলে স্থানীয়ভাবে দেশীয় উৎপাদিত পশু দিয়ে চট্টগ্রামের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে। দেশের বাজারে পশু খাদ্যের দামের পাশাপাশি শ্রমিক মজুরি বাড়ার কারনে গবাদিপশু লালন পালন অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়াতেই অনেক উদ্যোক্তা পিছিয়ে যাচ্ছে। সরকার ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ করে দেশের খামারিদের সুযোগ করে দিয়েছে। পাশাপাশি পশু খাদ্যের দাম যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে আগামিতে চট্টগ্রামের শতভাগ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি উদ্যোক্তা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।