চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ ধীরলয়ে বাড়ছে। শেষ ৪৮ ঘণ্টায় মোট ২ হাজার ১৫০ নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত ১৮৩ জন। চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত ২১ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃত্যু ৩০১ জন। একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যু আবার বেড়েছে। গত ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর প্রতিদিন গড়ে ২০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের সপ্তাহে মৃত্যুর গড় ২০ এর নিচে নেমেছিল। এছাড়া গত সপ্তাহে সংক্রমণ ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ৯২৩ জন। সংক্রমণ ৪ লাখ ৭ হাজার ৬৮৪ জন।
জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, দেশে করোনার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এর মধ্যে শীতকালে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা সরকার ও বিশেষজ্ঞদের। এখনো করোনাভাইরাসের টিকা কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বিশ্বব্যাপী কয়েকটি দেশে টিকার ট্রায়াল চলছে। কবে টিকা পাওয়া যাবে এখনো অনিশ্চিত। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ছাড়া এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন। সরকার থেকে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার বেশ কয়েকটি নির্দেশনা থাকলেও জনগণের মধ্যে এখনো সচেতনতা আসেনি। পরিবহন, মার্কেট, হোটেল রেস্টুরেন্ট ও দোকানে জনগণের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকার নির্দেশনা দিলেও স্থানীয় প্রশাসন এখনো নড়েচড়ে বসেনি। লোক সমাগম এড়িয়ে চলা, মাস্ক পরা, সকল স্থানে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলাÑএসব বিষয়ে প্রশাসন থেকে সতর্ক করে প্রচারÑপ্রচারণা কিংবা কঠোর হওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয় নয়। এখন সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। নানা অনুষ্ঠানাদিও হচ্ছে নিয়মিত কিন্তু এটা সত্য যে সর্বত্র কড়াকড়িভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালিত হচ্ছে না।
চট্টগ্রামে বিদেশি নাবিকরা আসছেন, বিদেশ থেকে নানা যাত্রী আসছেন বিমানে, ট্রেনে, বাসে, তাই এ ক্ষেত্রে দেশিÑবিদেশিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা অতীব প্রয়োজনীয়। চট্টগ্রাম বন্দর, শাহআমানত বিমান বন্দর, রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও অন্যান্য জনসমাগম স্থলে পরীক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
ইউরোপে দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রবল অভিঘাত চলছে। সংক্রমণ বাড়ায় ইংল্যান্ডে মাসব্যাপী লকডাউন জারি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। লকডাউন করা হচ্ছে পুরো বেলজিয়াম, গ্রিস আংশিক লকডাউন করেছে। ফ্রান্সের পরিস্থিতিও নাজুক। আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ তীব্র হতে পারে এমন আশঙ্কা জনস্বাস্থ্যবিদদের। সে অনুসারে আমাদের প্রতিরোধ প্রস্তুতি অপর্যাপ্ত। সংক্রমণের ঢেউ তীব্র হওয়ার আগেই জেলাÑউপজেলায় স্বাস্থ্যসেবার প্রস্তুতি এখন থেকেই নেওয়া প্রয়োজন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সকল প্রকার সুরক্ষা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত থাকা চাই। চট্টগ্রামে করোনার জন্য নির্দিষ্ট হাসপাতালগুলি প্রস্তুত রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। নগরীর সকল প্রান্তে টেস্ট এর সুবিধা রাখতে হবে। করোনার র্যাপিড টেস্টের জন্য সরকার থেকে অ্যান্টিজেন টেস্ট অনুমোদন দিলেও এখনও তা শুরু হয়নি। এতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সংবাদ মাধ্যমে কিট না পেলে কিভাবে টেস্ট শুরু হবে মর্মে মন্তব্য করেন। কিট আমদানি এখনো প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে, এ ধরণের বিলম্ব রোগ প্রতিরোধ প্রস্তুতির জন্য বিরাট প্রতিবন্ধক। স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আমলা নির্ভরতা বিপদ ডেকে আনতে পারে। সকল স্তরের জনপ্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ, স্বেচ্ছাসেবকসহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিকে এ কাজে যুক্ত করা প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখতে হবে সকলকে নিয়েই প্রতিরোধ প্রস্তুতি, আর প্রয়োজন স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা, সতর্ক এবং সচেতন হওয়া।
মতামত সম্পাদকীয়