একসময় চট্টগ্রামকে বলা হতো দুবাইওয়ালার দেশ। দুবাইওয়ালা বলতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে বোঝাতো সাধারণ মানুষ। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা রেমিটেন্স প্রবাহের একটি বড় অংশের যোগান দেয় চট্টগ্রামের প্রবাসীরা। কিন্তু কালক্রমে সে গতিতে ভাটা পড়েছে। কমে গেছে চট্টগ্রাম থেকে জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে প্রবাসী আয়ের ৩৫.২ শতাংশ আসে চট্টগ্রামের প্রবাসীদের মাধ্যমে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের গ্রামাঞ্চলের ১৬.৬ শতাংশ, সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৮.৭ শতাংশ এবং পৌরসভা ও মফস্বল শহর এলাকার প্রবাসীরা প্রেরণ করেন ১২.৫ শতাংশ অর্থ।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর কম মানুষ গেছেন। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাস ১৫ দিনে অর্থাৎ গত ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন দেশে গেছেন ৩৮ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৭৮৫ জন পুরুষ ও ৩৫৭ জন নারী। ওই সময়ে দেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১১ লাখ ২০ হাজার।
জনশক্তি ও কর্মসংস্থান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরব গেছেন ১৯ হাজার ৮১৭ জন। ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন ২১ হাজার ৭১৮ জন। আগের বছর যেখানে ওমানে গিয়েছিলেন ১৯ হাজার ৮৭০ জন, সেখানে এ বছর গেছেন মাত্র ৩ হাজার ৪৩০ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত বছর গিয়েছিলেন ১৩ হাজার ৫০০ জন, এবার গেছেন ৫ হাজার ৬৭২ জন। এছাড়া চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত কাতারে ৭ হাজার ৮৫৫ জন, কুয়েতে ১৩৪ জন, জর্দানে ৪৪ জন, লেবাননে ৩৪ জন, হংকংয়ে ৪ জন এবং অন্যান্য দেশে ১ হাজার ২৩১ জন জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে।
বাংলাদেশের অনেক বড় শ্রমবাজার হলেও বাহরাইন বহুদিন ধরে ভিসা বন্ধ রেখেছে। সৌদি আরবের মতো বড় বাজারেও বাংলাদেশি শ্রমিকদের কড়াকড়ির মুখে পড়তে হয়। ওমান, লিবিয়া, মিসর, ইয়েমেন, সিরিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশেও সমস্যা প্রকট। এসব দেশের অনেকগুলোতে যেসব বাংলাদেশি রয়েছেন তাদেরকেও নানা ঝামেলার মধ্যে টিকে থাকতে হচ্ছে।
এ পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সরকারের সরাসরি উদ্যোগ দরকার। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং বাজার সম্প্রসারণে যথাযথ ভূমিকা থাকলে চট্টগ্রামের প্রবাসীদের কর্মক্ষেত্র সম্প্রসারিত হতো। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশের ভিসা বন্ধ সেগুলো চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হলে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও উপকৃত হবে নিঃসন্দেহে।
এ মুহূর্তের সংবাদ