বর্তমান সরকারের আমলে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাইলফলক হিসেবে প্রশংসার দাবি রাখে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থায় দ্রুত চলাচলের বিষয়টি এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন সবক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট সময় ধরে চলাচলকে প্রাধান্য দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ একজন ব্যবসায়ী বা চাকরিজীবীর মতো ভ্রমণবিলাসীদেরও একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে গন্তব্যে ছুৃটে যাওয়া এবং ফিরে আসার তাগিদ রয়েছে। আর রেলপথে কক্সবাজার পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন সেক্ষেত্রে যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনকালে বলেছেন, পর্যায়ক্রমে সারাদেশের সঙ্গে কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণ করা হবে। তাছাড়া বর্তমানে এ রুটে চলাচলরত ট্রেনে ওয়াই-ফাই সংযোগসহ আধুনিক ডিজিটাল ব্যবস্থা সংযোজনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ রেলপথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি গত ৬ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা-কক্সবাজার রুটে আরও একটি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে ট্রেনটি চলাচল শুরু হবে।
মন্ত্রী জানান, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন এই ট্রেনটি কক্সবাজার থেকে ছাড়বে রাত ৮টায়। চট্টগ্রাম পৌঁছাবে ১০টা ৫০ মিনিটে। সেখানে ১৫ মিনিট বিরতি দিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে ১১টা ১৫ মিনিটে। ঢাকা পৌঁছাবে সকাল ৬টা ৪৩ মিনিটে। এর আগে, বিমানবন্দর স্টেশনে বিরতি দেবে। আর ঢাকা থেকে ছাড়বে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে। চট্টগ্রামে পৌঁছাবে ১১টা ২০ মিনিটে। সেখানে ২০ মিনিট বিরতি দিয়ে ১১টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যাবে এবং কক্সবাজার পৌঁছাবে বিকেল ৩টায়। এর মাঝে বিমানবন্দর স্টেশনে থামবে। এই ট্রেনে ১৬টি বগি থাকবে। এর মধ্যে দুইটি খাবার গাড়ি, ছয়টি এসি চেয়ার, একটি পাওয়ার কার, সাতটি শোভন চেয়ার থাকবে। মোট আসন থাকবে ৭৮০টি। এসব আসনের মধ্যে ৩৩০টি এসি চেয়ার ও ৪৫০টি শোভন চেয়ার থাকবে।
দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে একটি আন্ত:নগর ট্রেন এবং এই রুটের নয়টি স্টেশনে যাত্রা বিরতির ব্যবস্থাসহ একটি লোকাল ট্রেন চালু এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এ রেলপথ চালুর পর থেকে চট্টগ্রাম থেকে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও ভ্রমণপিপাসু যাত্রীদের একটি বড় অংশ এ অঞ্চল থেকে সরাসরি কক্সবাজার যাতায়াতের প্রতীক্ষায় রয়েছেন। কারণ তাদের পক্ষে ঢাকা-কক্সবাজার রুটের ট্রেনে যাত্রা বিরতিতে চলাচল, টিকিট সংগ্রহ খুব একটা সহজসাধ্য ব্যাপার নয় বলে মনে করেন।
পাশাপাশি দোহাজারী-কক্সবাজার রুটের নয়টি ষ্টেশন- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়ার সাহারবিল, ডুলাহাজারা, ঈদগাও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুমধুম এলাকায় বিপুল সংখ্যক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী রয়েছেন। যারা নিয়মিত কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম আসা-যাওয়া করেন। কাজেই এই রুটে একটি লোকাল ট্রেন চালু হলে তারা উপকৃত হবেন। সরাসরি চলাচলের নিশ্চয়তা পাবেন। বাস ও অন্যান্য যানবাহনে চড়ে চট্টগ্রামে আসা এবং ফিরে যাওয়ার নিত্য ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, যাত্রী পরিবহন ছাড়াও পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনা, লোকাল মেইল ও কমিউটার ট্রেন সার্ভিস পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ চালু হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী অন্তত এক হাজার নতুন জনবল প্রয়োজন। সেই চাহিদা পূরণে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নতুন জনবল কাঠামোর প্রস্তাব জমা দিয়েছে। আপাতত আউটসোর্সিং, অবসরে যাওয়া ব্যক্তিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন দপ্তর থেকে কক্সবাজারে ট্রেন সার্ভিস পরিচালনায় পদায়ন করা হবে।
আমরা আশা করি, সামগ্রিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামীতে কক্সবাজার রেলপথে যোগাযোগ একটি লাভজনক ও জনপ্রিয় রুটে পরিণত হবে।
এ মুহূর্তের সংবাদ