ঘুড়ি আর হিংসুটে মেঘ

ওবায়দুল সমীর »

লাল-নীলে মেশানো ঘুড়িটা খোকার হাত ধরে প্রতিদিন আকাশে ওড়ে। প্রথমে উড়তে গেলে একটু কষ্ট হয়। এদিক ওদিক গোত্তা খেয়ে পড়ে যেতে চায়। কোনোভাবে একটু ওপরে উঠে গেলে আর চিন্তা নেই। লাল আর নীল ডানার ঘুড়িটাকে দেখে হালকা মিষ্টি বাতাস এসে ঘুড়িকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ভাসতে ভাসতে একেবারে আকাশে উঠে যায়।
মিষ্টি বাতাসের সাথে ঘুড়ির বন্ধুত্ব হয়ে যায়। প্রতিদিন উড়তে উড়তে ঘুরতে ঘুরতে অনেক কথা হয় দুজনের। উপর আকাশে এক টুকরো সাদামেঘ ঘুড়িটাকে ভালোবেসে ফেলে। ঘুড়ি আর বাতাসের খুনসুটি শুনতে শুনতে একটা পাখি ওদের পিছু নেয়। ঘুড়ি, সাদামেঘ, মিষ্টি বাতাস আর পাখিদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
একদিন আকাশ ছিলো নীল আর পরিস্কার। চার বন্ধু সাদামেঘ, পাখি, বাতাস আর ঘুড়ি মিলে আকাশে ঘুরতে বেরিয়ে পড়লো। মেঘ ছিলো সাদা নরম তুলোর মতো, পাখি ছিলো রঙিন ডানার স্বপ্নীল প্রাণী, আর ছিল মিষ্টি বাতাসে ভর করে উড়ন্ত কাগজের ঘুড়ি।
তাদের বন্ধুত্ব ছিলো অদ্ভুত এবং অনবদ্য। মেঘ সবসময় ছায়া দিতো পাখি আর ঘুড়িকে, পাখি তার রঙিন ডানার রূপকথার গল্প বলতো, আর ঘুড়ি তার ওড়ার কৌশল নিয়ে মজা করতো।
ঘুড়ি বলল, ‘বন্ধু বাতাস না থাকলে কোনদিন আকাশ দেখা হতো না। আর তোমাদের সাথে বন্ধুত্বও হতো না।’
মেঘ আর পাখিও বন্ধু মিষ্টি বাতাসের নিঃস্বার্থ উপকারের কথা বলে কৃতজ্ঞতা জানায়। মিষ্টি বাতাস এতো এতো প্রশংসা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
একদিন, মেঘ বললো, ‘আচ্ছা, তোমরা কি জানো? আকাশের ওপরে একটা রাজ্য আছে, যেখানে সবকিছু মেঘের মতোই নরম আর সুগন্ধি ফুলে ভরপুর।’
পাখি হাসলো এবং বললো, ‘আমি সেই রাজ্যের গল্প শুনেছি। শুনেছি সেখানকার ফুলেরা সাদা মেঘের মতোই নরম।
ঘুড়ি উৎসাহিত হয়ে বললো, ‘তাহলে চল, আমরা সেই রাজ্যে ঘুরে আসি!’
চার বন্ধু মিলে আকাশে উড়ে চললো। উড়তে উড়তে তারা অনেক মজার ঘটনা ঘটালো। ঘুড়ি কখনও মেঘের ফাঁক দিয়ে উড়ে গিয়ে মেঘকে হাসিয়ে তুললো, কখনও পাখি মেঘের শীতল পানির বিন্দুতে ডানা ঝাপটালো। মেঘ তাদের দিল ছায়া, আর বাতাস সবাইকে কাঁধে নিয়ে ভেসে চলল।
কিছুক্ষণ পর, তারা একটা রংধনু দেখতে পেলো। মেঘ বললো, ‘এই রংধনুর পথ ধরেই আমরা সেই মেঘরাজ্যে পৌঁছাবো।’
তারা রংধনুর পথ ধরে উড়তে শুরু করলো। রংধনুর সাত রং তাদের মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুললো। কিছুক্ষণ পর তারা দেখতে পেলো মেঘরাজ্যের দরজা। দরজার সামনে ছিলো একটা বিশাল সাদা ফুল। ফুলটি মিষ্টি স্বরে বললো,
‘স্বাগতম, বন্ধুরা! তোমরা মেঘরাজ্যের অতিথি। এখানে এসো, আনন্দ করো।’
চার বন্ধু মিলে মেঘরাজ্যে প্রবেশ করলো। সেখানে সত্যিই সবকিছু নরম আর সুগন্ধি ছিলো। তারা দেখলো, মেঘের ওপর বেলুনের মতো ফুলের বাগান, যেখানে হালকা বাতাসে ফুলেরা নাচছে। পাখি তার রঙিন ডানায় সেখানে উড়তে লাগলো, আর ঘুড়ি মেঘের সঙ্গীতে মগ্ন হয়ে গেল।
তারা দেখলো, মেঘরাজ্যের বাসিন্দারা সবাই খুবই বন্ধুসুলভ আর অতিথিপরায়ণ। তাদের চার বন্ধুকে নানা সুস্বাদু মেঘের মিষ্টি খেতে দিলো। পাখি তার গান গেয়ে মেঘরাজ্যের বাসিন্দাদের মন ভরিয়ে দিল, আর ঘুড়ি তার কৌশল দেখিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করলো।
চার বন্ধু সেই মেঘরাজ্যে অনেকক্ষণ ধরে আনন্দে মেতে রইলো। সূর্য ডোবার সময় হয়ে এলো, তাদের ফিরে আসার সময় হলো। মেঘরাজ্যের বাসিন্দারা তাদের বিদায় দিলো এবং বললো, ‘তোমরা আবার এসো, আমরা অপেক্ষায় থাকবো।’
চার বন্ধু মিলে মেঘরাজ্য থেকে বিদায় নিয়ে আকাশের পথ ধরে ফিরে আসতে লাগলো। তারা মনে আনন্দ আর কল্পনার রাজ্যের স্মৃতি নিয়ে দ্রুত নেমে আসছিল পৃথিবীর দিকে।
এমন সময় ঘটলো বড় অঘটন। কোত্থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো হিংসুটে কালো মেঘ। কালো মেঘ কখনই ওদের বন্ধুত্বকে ভালো চোখে দেখেনি। বারবার ঘুড়িকে ভিজিয়ে দিতে চেয়েছে। পারেনি। আজ বোধহয় আর বাঁচার উপায় নেই। সাদামেঘ ঘুড়িকে কালো মেঘ থেকে আড়াল করতে চাইল, পারলোনা। মিষ্টি বাতাস চাইলো ঘুড়িকে দ্রুত নিচে নামিয়ে আনতে। সে ও হেরে গেলো ঝড়ো বাতাসের কাছে। হিংসুটে কালো মেঘ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে ঘুড়িকে ভিজিয়ে দিল। ঝড়ো বাতাস পাখিকে আর ঘুড়িকে বিচ্ছিন্ন করে দিল পরস্পরের কাছ থেকে। কে যে কোথায় হারিয়ে গেল আর জানা হলো না।
সেই থেকে পাখিটা আজো উঁচু আকাশে ডানা মেলে বন্ধুদের খুঁজে বেড়ায়। তোমরা কেউ ওদের খোঁজ পেলে [email protected] এ মেইল করে জানিয়ে দিও।