নিজস্ব প্রতিবেদক »
অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ওয়াহিদ মালেক বলেন, আজকের এই হাসপাতাল চট্টগ্রামবাসীর জন্য দীর্ঘ এক পরিকল্পনার অংশ। চট্টগ্রামবাসী যেন ঘরের দুয়ারেই বিশ্ব মানের চিকিৎসা পায়, তার জন্য আমাদের এ পরিকল্পনা। এক সময় মানুষ উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, ভারতসহ নানা দেশে যেতো। হৃদরোগ শুনলেই রোগীর পরিবার আতঙ্কে ভুগতো। আজ চট্টগ্রামেই দেশের সেরা চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব।
সোমবার ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের হার্ট বাইপাস সার্জারিতে সফলতা নিয়ে আয়োজিত অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালটির সিইও ড. অনান্থ এন রাও, হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ রউফ, কার্ডিওভাসকুলার এবং থোরাসিক সার্জারি বিভাগের চীফ কার্ডিয়াক সার্জন অ্যান্ড সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. জিয়াউর রহমান, সিনিয়র কলসালটেন্ট ডা. মো. সুমন সিকদার, ডেপুটি চিফ অফ মেডিক্যাল সার্ভিসেস ডা. ফজল-ই-আকবর এবং চীফ মার্কেটিং অফিসার অমিতাভ ভট্টাচার্য, হাসপাতালের বাইপাস সার্জারিতে সফল চিকিৎসা পাওয়া রোগীরা।
সিইও ড. অনান্থ এন রাও বলেন, আমরা চাই চট্টগ্রামবাসী যেন উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা সেবা সহজে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়ালে হাসপাতালে পান। আজ আমরা ১২৫ জনেরও বেশি হৃদরোগীদের বাইপাস সার্জারিতে সফল হয়েছি। তার জন্য এই হাসপাতালের প্রতিটা ডির্পাটমেন্টের চিকিৎসক, নার্সসহ সবার আন্তরিকতা, সাহস ও প্রেরণা রয়েছে। এটি চট্টগ্রামবাসীর জন্য গৌরবের। আমরা চাই কোন মানুষ যেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। প্রতিটা শিশু যেন সঠিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা পান। সেই লক্ষ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল কাজ করে যাচ্ছে। এ হাসপাতাল রোগীদের উন্নত সেবা দিতে সবসময় প্রস্তুত।
এসময় বাইপাস সার্জারিতে সফল রোগী, নার্স ও চিকিৎসকদের মাঝে বৃক্ষ, ক্রেস্টসহ নানা সম্মাননা উপহার প্রদান করা হয়।
হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিয়ে জানতে চাইলে অনুষ্টানে অংশ নেয়া বাইপাস সার্জরির ফেনী থেকে আগত প্রথম রোগী মো. সুরজ আলী সুপ্রভাতকে বলেন, আমি শুরু থেকে এই হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়েছি। এখানে চিকিৎসা সেবা খুবই ভালো। চিকিৎসার সেবার পর ফলো আপগুলোতেও আমি ভালো সহযোগিতা পেয়েছি। বলা যায় একজন রোগীর জন্য যতটা ভালো সেবা প্রয়োজন তা আমি এই হাসপাতালে পেয়েছি।
উল্লেখ্য উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যাওয়া বাংলাদেশি মানুষের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিদের এই বিদেশ যাত্রা কমাতে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে ৩৭৫ শয্যার বিশেষায়িত অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হসপিটাল লিমিটেডের (আইএইচএল) যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৫ জুন থেকে।
হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর নারায়ণা হেলথের চেয়ারম্যান ডা. দেবী শেঠি। সাত একর জমির মধ্যে ৫টি ভবন নিয়ে মোট ৬ লাখ ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গায় এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতালের নার্সেস এবং টেকনিশিয়ান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি স্থাপত্য সংস্থা এ হাসপাতালের মূল নকশা প্রণয়ন করেন। একটি ইউরোপিয়ান কনসালটেন্ট গ্রুপ নকশা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়নে প্রকৌশল, তথ্য প্রযুক্তি এবং বায়োমেডিকেল বিষয়ে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করেন।
এ হাসপাতালে রয়েছে সার্বক্ষণিক ইমার্জেন্সি সেবা এবং কার্ডিয়াক, ট্রান্সপ্ল্যান্ট, নিউরো, অর্থোপেডিক ও গাইনি অবস্ ইত্যাদি সম্বলিত ১৪টি মডিউলার অপারেশন থিয়েটার; আছে ১৬টি নার্স স্টেশন ও ৬২টি কনসালটেন্ট রুম সম্বলিত বহির্বিভাগ এবং আধুনিক গুণগত মানসম্পন্ন ৬৪টি ক্রিটিকাল কেয়ার বেড; নবজাতকদের জন্য ৪৪ শয্যাবিশিষ্ট নিওনেটাল ইউনিট এবং ৮টি পেডিয়াট্রিক আইসিইউ। রোগী ও তার সাথে আগত স্বজনদের জন্য হাসপাতাল পরিধির মাঝে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের জন্য ১০ শতাংশ শয্যা সংরক্ষিত আছে। হাসপাতালে ৮৮টি সিঙ্গেল, ৭৬টি ডাবল কেবিন, ৮টি পেডিয়াট্রিক আইসিইউ, রোগীর স্বজনদের থাকার জন্য ৪০টি রুম এবং ২৭১ জন থাকার ডরমেটরি রয়েছে। বলা যায় বেসরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামে সবচেয়ে বড় হাসপাতাল এটি।