রোকন রেজা »
এরকম অঘটন ঘটে যাবে ভাবিনি।
রিনা আমার অফিসের রিসিপশনিস্ট। ইয়াং,র্স্মাট, আবেদনময়ী। যখন সে তার ফিনফিনে দু’ঠোঁটে মেরূনরঙের লিপিস্টিক দিয়ে আসে আমার ইচ্ছে করে জাপানি চকলেটের মতো চুষে চুষে খাই।
শুনতে পাচ্ছি সেই রিনা নাকি এখন আমারই অফিসের জুনিয়র অফিসার রাশেদের মোটরবাইকের পিছনে প্রতিদিন দোল খেয়ে বেড়াচ্ছে। সুন্দরী নারীরা বারবার আমাকে শুধু আঘাত দেয়।
রিনাকে চাকরিটা আমিই দিয়েছি। চাকরি দিয়েছি দুটো কারণে। এক, সে যথেষ্ট সুন্দরী। সুন্দরী মেয়েদের আমি সহজে এড়াতে পারি না। দুই. সে অভাবী। অভাবী মেয়েদের খুব সহজেই টাকা ধার দেয়া যায়। আর টাকা ধার দিলেই একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। আর সর্স্পক তৈরি হলেই …
রাশেদ আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আমি কি ওকে ট্রান্সফার করে দেবো! সেই ক্ষমতা আমার আছে। তার আগে রিনার সঙ্গে কথা বলা দরকার। রিনা এখনও আসেনি। তবে চলে আসবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ঝলমলে মেয়েটি পাখির ডানায় ভর করে উড়তে উড়তে চলে আসবে। আমার কেনো যেন মনে হয় এই বয়সের প্রতিটি মেয়েই পাখির ডানায় ভর করে উড়ে বেড়ায়। এতো জীবনীশক্তি এরা পায় কোথায়!
রিনাকে আমি আসতে বলিনি। ‘আসতে পারি স্যার’ এই শব্দটুকু ঠোঁটে ঝুলিয়ে সে আমার রুমে ঢুকে পড়ে। আমি যে মনে মনে তাকে খুঁজছি সে বুঝতে পেরেছে। সে যথেষ্ট চৌকস, বুদ্ধিমতী।
রিনা কলাপাতা রঙের একটা শাড়ি পরেছে। কলপাতাই তো! আমি ঠিকমতো রঙ চিনি না। তবে শাড়িটা ওকে অদ্ভুতভাবে মানিয়ে গেছে। কিছু কিছু মেয়ে শাড়ি পরলে অদ্ভুত মানিয়ে যায়। তখন শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে মোটরবাইকের পেছনে আমিও একটু ঘুরিয়ে আনি।
রিনার গলায় গোল্ডেন কালারের পাথর বসানো লকেট ঝিকমিক করছে। ওটা আমি আগে দেখিনি। রাশেদ কি ওকে এটা প্রেজেন্ট করলো! কে জানে! কারুকাজ করা সেই লকেটের গোল চাকতিটি এখন রিনার দু’স্তনের খাঁজ বরাবর ঝুলে আছে। ও কি ইচ্ছে করেই শাড়ির আঁচলটা একটু নামিয়ে রেখেছে! আমার চোখ বারবার আটকে যাচ্ছে রিনার বুকে সযতেœ পড়ে থাকা লকেট র্স্পশ করা বেহেস্তি সেই জমিনে।
রিনা এখন আমার সামনে বসে আছে। আমি কম্পিউটারের বাটন টেপা বন্ধ করে ওকে দেখছি আর মুগ্ধ হচ্ছি। যুবতী নারীর শরীরে কি চুম্বক বসানো থাকে! আমি বারবার চেষ্টা করেও আমার দৃষ্টিকে সরিয়ে নিতে পারছি না। ও তেমন অস্বস্তিবোধ করছে না। ও যেনো ধরেই নিয়েছে পুরুষমানুষ এ রকমই।
রিনা টেবিলের ওপর রাখা গোল পেপারওয়েটটি নিয়ে খেলা করছে। পেপারওয়েটটি টেরিলের স্বচ্ছ কাচের ওপরে লাটিমের মতো ঘুরছে। রিনার দৃষ্টি পেপারওয়েটের দিকে। আমার দৃষ্টি ওর বুকে।
স্যার, কিছু বলবেন বলছিলেন?
তেমন কিছু না। দুপুরে আজ আমার সঙ্গে লাঞ্চ করো।
আপনার সঙ্গে! সত্যি!
কেনো বিশ্বাস হচ্ছে না?
আগে কখনও তো বলেননি!
প্রতিদিনই মনে মনে ভাবি বলবো। কিন্তু আর বলা হয় না।
রিনা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসে। এ যেনো হাসি নয় যাদু। আমি মুগ্ধ না হয়ে পারি না।
লাঞ্চ শেষে আর অফিসে ফেরা হয় না। কৃষ্ণচূড়ার নিচে ওর পাশে-পাশে হাঁটতে থাকি। শরীরের গন্ধ নিই। অতি সন্তর্পণে ওর হাত ছুঁয়ে দিই। কি মিষ্টি নরম হাত!
সবকিছুই কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন মনে হয়। রিনা আমার সঙ্গে অনেক অনেক গল্প করে। ওর ছোটভাইটার দু’মাসের প্রাইভেট টিউটরের টাকা বাকি পড়ে গেছে। ওর পিঠাপিঠি বোন রিতার একটা জামা বানানো খুবই জরুরি। ওর মা’র বাতের ওষুধটা আজ না কিনলেই নয়।
কিন্তু রিনা আমার কাছে টাকা ধার চায় না। আমি ইচ্ছে করেই ওর হাতে এক হাজার টাকার দু’টো কড়কড়ে নোট গুঁজে দিই।