সুপ্রভাত ডেস্ক »
অনেক টানাপড়েন শেষে আজ শনিবারের সমাবেশের জন্য রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। ওই মাঠে মঞ্চ নির্মাণ এবং মাইক বসানোর জন্য বিএনপি নেতারা আনুষ্ঠানিক আবেদন করার পর ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক শুক্রবার বিকালে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।’ খবর বিডিনিউজের।
একই সময়ে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শনিবার বেলা ১১টায় সায়েদাবাদের গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করার অনুমতি তারা পেয়েছেন।
বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি আছে এমন সমমনা সব রাজনৈতিক দলকে সেই সমাবেশে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মোশাররফ বলেন, ‘মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের অন্যায় গ্রেফতারের নিন্দা জানানো ভাষা আমাদের নেই। আমরা এই সংবাদ সম্মেলন থেকে তাদের মুক্তি দাবি করছি।’
জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং দলীয় কর্মসূচিতে নেতা-কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে দেশের সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করছে বিএনপি। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে তাদের এ কর্মসূচি শেষে নতুন পদক্ষেপ ঘোষণা করার কথা রয়েছে। ঢাকার এ সমাবেশ ঘিরে গত কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে দেশের রাজনীতিতে। সহিংসতার শঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার তাদের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতাও জারি করেছে। বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দেয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যবহারের। এ নিয়ে অনড় অবস্থানে ছিল দুই পক্ষ।
এর মধ্যে বুধবার বিএনপি কর্মীরা নয়াপল্টনে জড়ো হলে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের মধ্যে আহত স্বেচ্ছাসেবক দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতার মৃত্যু হয় হাসপাতালে।
এরপর বিএনপি অফিসে অভিযান চালিয়ে হাতবোমা পাওয়ার কথা বলা হয় পুলিশের তরফ থেকে। গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তারপরও বলে আসছিলেন, ১০ ডিসেম্বর তাদের সমাবেশ ‘হবে’। তবে বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘সমঝোতা বৈঠকের’ পর অবস্থান বদলের ঘোষণা আসে।
বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রধান, দলটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, নয়া পল্টন বাদ দিলে তারা এখন কমলাপুরের ফুটবল স্টেডিয়ামে সমাবেশ করতে রাজি আছেন। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে মিরপুরের বাঙলা কলেজ মাঠে সমাবেশ করতে বলা হয়।
পরে ঠিক হয় দুটি স্থান পরিদর্শন করে শুক্রবার একটি স্থান চূড়ান্ত করা হবে। রাতেই দুটি স্থান ঘুরে দেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস জানান, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা, সেজন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না।
রাতের ওই বৈঠকে সমঝোতার ইংগিত আসার পর ভোর হওয়ার আগেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। ডিবি কার্যালয়ে রেখে দীর্ঘসময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
পরে শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, নয়া পল্টনে পুলিশের ওপর হামলা ও হাতবোমা নিক্ষেপের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পল্টন থানার মামালায় ফখরুল ও আব্বাসকে গ্রেফতার দেখাচ্ছেন তারা।
সন্ধ্যায় আদালতে হাজির করা হলে জামিন নাকচ করে ফখরুল ও আব্বাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
এদিকে দুই নেতাকে আদালতে তোলার আগেই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বিকালে ঢাকার পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশের জন্য গোলাপবাগ মাঠে মঞ্চ নির্মাণ এবং মাইক বসানোর আবেদন করেন। দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদও তার সঙ্গে ছিলেন।
বেরিয়ে এসে জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নয়া পল্টন না পেয়ে তারা কমলাপুর স্টেডিয়াম চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাতে সায় দেয়নি। সে কারণে তারা গোলাপবাগ মাঠের অনুমতি চেয়েছেন।
‘তারা আমাদেরকে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সেখানে আমাদেরকে সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’
ফখরুল ও আব্বাসকে গ্রেফতার করার পর বিএনপি কীভাবে সমাবেশ করবে প্রশ্ন করলে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘এটা পুলিশের দৈনিন্দন কার্যক্রমের অংশ। আমরা আইনগতভাবে মোকাবিলা করব।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সে সময় সাংবাদিকদের গোলাপবাগ মাঠের জন্য বিএনপি নেতাদের আবেদন তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অনুমতি পেলে নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতাও করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এর ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বিএনপির সংবাদ সম্মেলন থেকেও জানানো হয়, তাদের সমাবেশ গোলাপবাগ মাঠেই হবে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর থেকে আমরা আগামীদিনে এই সরকারের বিদায়ের জন্যে কতগুলো চার্টার অব ডিমান্ড বা দফা আমরা ঘোষণা করব। আমাদের সাথে যারা যুগপৎ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত- ইতিমধ্যে আমাদের সাথে আলোচনা হয়েছে।
‘আমরা আশা করি, তারা যুগপৎভাবে আমরা যে ১০ দফা প্রণয়ন করেছি, তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঘোষণা করবেন। যার যার অবস্থান থেকে তারা ভবিষ্যতে এই দফাগুলোর দাবিতে আন্দোলনকে শাণিত করে যুগপৎভাবে আন্দোলন আসবেন।’


















































