সাধন সরকার :
অনু অন্যরকম এক আবেগী স্বভাবের মেয়ে। সে আবেগ পাথরের মতো ভারীও নয় আবার বাতাসের মতো হালকাও নয়। অনু গোলাপ ফুল ভালোবাসত। দেখতাম ওর খোঁপায় সব সময় একটি লাল গোলাপ থাকতো। প্রতি শুক্রবার আমাদের দেখা হতো। অনু একদিন আমাকে হঠাৎ করে বলল, ‘আজ তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।’ ওর কথা শুনে আমিও কিছুটা বিস্মিত হলাম বটে। তবে ওর এমন পাগলামি নতুন নয়। কেননা সারপ্রাইজ দেওয়ার কথা বলে পরে ভুলে যাওয়ার স্বভাব ওর আগে থেকেই ছিল। কিন্তু এবার তা হলো না। বিহ্বল হলাম বটে। এবারের সারপ্রাইজ হলো সোনালি কেশ। মাথার পুরোভাগে নয়, একাংশে সোনার মতো চকচক করছে মোহনীয় কেশ। মানে চুলে সোনালি রং। রোদ পড়ে পিছলে যাচ্ছে তাতে। ওর সোনালি কেশে যেন আলাদা একটা টান খেলা করছে। দু’জন যখন পাশাপাশি বসে থাকতাম তখন অবলোকন করতাম ওর সোনালি কেশের জাদুতে চারপাশ আবিষ্ট হয়ে থাকতো। ওর দিঘল কালো কেশ মানেই যেন ভালোবাসার অমোঘ বটিকা! একদিন অনু তার অতি দুঃখের কথা জানালো। হঠাৎ ওর ঢেউ খেলানো সোনালি কেশে কার যেন নজর পড়েছে। প্রতিদিন সোনালি কেশগুচ্ছ থেকে একটি একটি করে কেশ ঝরে পড়ছে। একথা শুনে আমি একটু অবাকই হলাম। ও প্রতিদিনই ওর সোনালি কেশ ঝরে যাওয়ার খবর শোনাতো আমাকে। আর আমার মনের গহীনে অজানা কষ্টগুলো আঁকিবুঁকি করতো। আহা রে! সোনালি কেশ নামক স্বপ্নগুলো কেন খসে পড়ছে?
অনুর সোনালি কেশ আমার কাছে অসম্ভব প্রিয় ছিল। এক একটি কেশ খসে পড়াটা আমার কাছে মনে হতো আকাশ থেকে এক একটি তারা খসে পড়ার মতো। ওকে একদিন বললাম, তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে! ওর এক একটি সোনালি কেশ ঝরে পড়ার দরুণ আমি ওর সোনালি কেশগুচ্ছে এক একটি গোলাপ গুঁজে দিতাম। ও বেশ খুশি হতো। এরপর থেকে আমরা প্রায় প্রতিদিনই দেখা করতাম। লক্ষ করলাম গোলাপ দেওয়ার কারণে কেন জানি আরো বেশি কেশ ঝরে পড়তে লাগলো। মনে মনে ভাবলাম, মাথা থেকে স্বাভাবিকভাবে মাঝে মাঝে কিছু কেশ ঝরে পড়ে বটে, তাই বলে এতো! তবে এটাও দেখতাম, ঝরে পড়া চুল দেখাতে পারলেই গোলাপ ফুল নিশ্চিত- এটা নিয়ে অনু বেশ তৎপর থাকতো। অনু একেক দিন একেক রকম খোঁপা করে আসতো। পরে জানতে পারলাম অনু গোলাপ পাওয়ার নেশায় একই ঝরে পড়া কেশ বারবার দেখাতো। যত বেশি সোনালি কেশ ঝরে পড়ে আমি তত বেশি গোলাপ ওর সোনালি কেশের খোঁপায় গুঁজে দিই। অনু বলতো, আমি যখন ওর সাথে থাকতাম না তখন নাকি গোলাপগুলো আমার হয়ে ওর সাথে কথা বলতো। একেই নাকি ভালোবাসা বলে!