সুপ্রভাত ডেস্ক »
বাহারি আল্পনা আর রঙিন সাজে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছে চট্টগ্রাম। মহামারীর দুই বছর পেরিয়ে নগরীর ডিসি হিল ও সিআরবি শিরিষ তলা আবারও মেতে উঠেছে ‘এসো হে বৈশাখ…’ গানে। জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও বেজেছে সেই সুর।
তবে এ বছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘সীমিত’ আকারে অনুষ্ঠানে আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেভাবেই অনুষ্ঠানমালা সাজান আয়োজকরা। রোজার মধ্যে লোক সমাগমও ছিল অন্য সময়ের তুলনায় বেশ কম। খবর বিডিনিউজের।
তিন দশকের বেশি সময় ধরে ডিসি হিলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে ‘সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ’। সকালে ডিসি হিলের ‘সংগীত ভবনে’ দলীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় ১৪২৯ কে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এরপর একে একে বিভিন্ন সংগঠন পরিবেশন করেন গান, নৃত্য ও আবৃত্তি।
শিশু কিশোররা বাবা-মায়ের সঙ্গে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। সাজ, পোশাক, ফুলের টায়রা আর গালে ‘পহেলা বৈশাখ’ এঁকে বর্ষবরণে মেতে ওঠে তারা।
বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের আয়োজনে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও তাতে অংশ নেয়। ঢোল বাজিয়ে নানা রকমের টেপা পুতুল, মুখোশ নিয়ে সবাই আনন্দে মেতে উঠে।
শোভাযাত্রাটি নগরীর মেহোদী বাগ কাজীর দেউড়ি হয়ে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়। আর নগরীর বাদশা মিয়া সড়কে আয়োজন করা হয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের মূল আয়োজন। এ ছাড়া নগরীর সিআরবি শিরীষ তলায় চতুর্দশবারের মত পুরনো বছরের বিদায় ও নতুন বছর অভ্যর্থনা জানানোর আয়োজন করে ‘নববর্ষ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম’। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার উপস্থিতি ছিল কম।
দুই বছর আগেও রোদের তীব্রতা উপেক্ষা করে নগরবাসী ছুটে যেত ডিসি হিল ও সিআরবির বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে। সব জীর্ণতা ও বাঁধা ডিঙিয়ে সব বয়সীরা মেতে উঠত নতুন বছরকে বরণ করে নিত। নেচে গেয়ে মুখে রঙ লাগিয়ে নানা রঙে সেজে ভেদাভেদ ভুলে একে অন্যের সঙ্গে মেতে উঠতেন আনন্দে।
কিন্তু এ বছরের আয়োজনে তেমন ভিড় দেখা যায়নি চট্টগ্রামের বড় দুই আয়োজনে। ডিসি হিলের অনুষ্ঠানে গেইট কেন্দ্রিক কিছু জটলা দেখা যায়। অন্য সড়কগুলো ছিল ফাঁকা। নববর্ষে এবার মেলাও বসেনি।
ডিসি হিলে নববর্ষের অনুষ্ঠানে আসা উন্নয়ন কর্মী ইসলাম আশি বিডিনিউজকে বলেন, পহেলা বৈশাখ ধর্ম-বর্ণ সবার সঙ্গে মিলিত হওয়ার একটা সময়। কিন্তু এবার সেই জৌলুস নেই।
‘বাঙালির জেগে ওঠার এ উৎসবকে স্তব্ধ করে দিতে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। হামলা হয়েছিল রমনা বটমূলের আয়োজনে। আগে যে আয়োজন চলত রাত পর্যন্ত, প্রশাসন তা বিকালের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধতা আনল। এ বছর আরও সীমিত করে তা দুপুরের মধ্যে শেষ করার অনুমতি দিয়েছে।’
বর্ষবরণ উপলক্ষে নগরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ডিসি হিল সড়কে প্রবেশ মুখে বিভিন্ন স্থানে বসানো হয় আর্চওয়ে।
সবাইকে সেই গেইটের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরিহিত সদস্যরাসহ সাদা পোশাকের সদস্যরাও নজরদারি করেছেন।