সাইফুল্লাহ কায়সার »
অনিক পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি পড়েছে।
সে বাবা-মায়ের সঙ্গে শহর থেকে গ্রামে নানার বাড়ি বেড়াতে এসেছে। গ্রামটা অনিকের খুব ভালো লাগে। এখানে নেই যানজট, নেই হর্নের শব্দ। চারদিকে সবুজ গাছ, খোলা মাঠ আর পাখির গান। অনিক ভাবে- এ যেন এক শান্তির রাজ্য!
নানার বাড়ির সবাই অনিককে খুব ভালোবাসে।
একদিন দুপুরে ক্রিকেট খেলে সে ক্লান্ত হয়ে গেল। রোদে গা পুড়ছে, গরমে হাঁপাচ্ছে। তখন পুকুরপাড়ের এক বটগাছের নিচে গিয়ে বসল। মিষ্টি বাতাস বইছে, মনে হলো- মায়ের কোলে বসে আছি!
হঠাৎ কে যেন মিষ্টি গলায় ডেকে উঠল-
অনিক!
অনিক চমকে উঠল। চারপাশে কেউ নেই! ভয়ে দৌড়ে বাড়ি ফিরে গেল সে। পরের দিন আবার এলো বটগাছের নিচে, এবার সঙ্গে তার মামাতো ভাই হৃদয়।
হঠাৎ আবার সেই ডাক- অনিক!
অনিক জিজ্ঞেস করল, তুই শুনছিস কিছু?
হৃদয় বলল, না তো!
তখন এক কোমল কণ্ঠ ভেসে এলো-
আমার কথা হৃদয় শুনবে না। আমি গাছ বলছি। তুমি একা এলে কথা বলব।
পরের দিন অনিক একা বটগাছের কাছে গেল। গাছ বলল, কেমন আছো অনিক?
অনিক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
তুমি আমার নাম কীভাবে জানলে?
গাছ হেসে বলল, আমরা হাওয়ার সঙ্গে কথা বলি।
হাওয়াই আমাদের জানায় সবার নাম।
অনিক কৌতূহল ভরে বলল,
তুমি কি গাছেদের রাজা?
গাছ হাসল, হ্যাঁ, আমি গাছেদের রাজা। এই গ্রামের সব গাছ আমার কথা শোনে।
অনিক বলল, তুমি বললে তারা সত্যিই শোনে?
গাছ বলল, তুমি বিশ্বাস করছো না? দেখো!
তারপর বটগাছ বলল,
ডাব গাছ! অনিককে একটা ডাব দাও।
হঠাৎই এক ডাব টুপ করে পড়ে গেল অনিকের সামনে!
অনিক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
গাছ বলল, দেখলে তো! এখানে যত গাছ আছে, সবাই আমার বন্ধু। আজ থেকে তারা তোমারও বন্ধু।
তুমি তাদের সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলতে পারবে।
অনিক খুশি হয়ে গোলাপ গাছের কাছে গেল। গোলাপ গাছ মিষ্টি গলায় বলল,
কেমন আছো অনিক?
অনিক বলল, ভালো আছি।
তুমি খুব সুন্দর, কী মায়াবী তোমার ফুলগুলো!
তখন ফুলগুলো যেন হেসে উঠল, সুগন্ধে ভরে গেল চারদিক।
অনিক আবার বটগাছের নিকট এলো। চুপচাপ বসে জিজ্ঞেস করল,
তোমরা কি সবসময় সুখে থাকো?
বটগাছ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-
না রে বন্ধু, আমরা সুখী হই তখনই, যখন মানুষ আমাদের যত্ন নেয়।
কিন্তু তারা আমাদের কেটে ফেলে, টাকার লোভে বন উজাড় করে দেয়। তারা জানে না, এতে তারাই বিপদে পড়ে। গাছ না থাকলে বাতাস নেই, জীবনও নেই।
এই সময় কোকিল আর চড়ুই উড়ে এসে বলল,
গাছ আছে বলেই আমরা গান গাই, গাছই আমাদের ঘর। তারপর তারা মিলেমিশে গান ধরল-
‘গাছের ছায়ায় হাসে জীবন, সবুজে ভরে মন।’
অনিকের মন ভরে গেল আনন্দে।
সে প্রতিদিন বটগাছের কাছে যাওয়া শুরু করল। পাখিদের জন্য দানা আনত, গাছের সঙ্গে গল্প করত।
ছুটি শেষে শহরে ফিরে এসে জানালার পাশে কয়েকটা গাছের টব রাখল। প্রতিদিন পানি দেয়, পাখিদের ডাকে হাসে। অনিক ভাবে-
আমি গাছ ও পাখির বন্ধু।