হুমাইরা তাজরিন »
‘সবার চোখে যেটা সত্য, সেটা সত্য নাও হতে পারে’ ওসি হারুনের এমন সব ডায়লগে বুঁদ হয়ে আছে ভারত ও বাংলাদেশের দর্শকেরা। সম্প্রতি (২০ এপ্রিল ২০২৩) ভারতীয় ওটিটি (ওভার দ্যা টপ) প্ল্যাটর্ফম হইচইতে মুক্তি পেয়েছে চট্টগ্রামের ছেলে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুনের ওয়েব সিরিজ মহানগর-২। মুক্তির পর থেকেই আবারও আলোচনায় মহানগর-২।
প্রথম মৌসুমে (২৫ জুন ২০২১) ‘মহানগর -১’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘মহানগর-২’ তৈরি জন্য দর্শকেরা দাবি জানাতে থাকেন। অসংগতিপূর্ণ সমাজের সৃষ্ট ব্যবস্থায় পড়ে নিরপরাধ মানুষের হয়রানি এবং এর কোণায় কোণায় থাকা সুবিধাভোগীদের দৌরাত্ম্যের বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে মহানগরে। এবার মহানগরের (ওয়েব সিরিজ) অলিগলি নিয়ে নির্মাতা আশফাক নিপুন কথা বলেছেন সুপ্রভাতের সঙ্গে।
‘মহানগর-৩’ কবে আসছে ?
‘মহানগর-৩’ এর ঘোষণা তো এক প্রকার আনঅফিসিয়ালভাবে এসেছে। মানে অর্নিবাণ (অর্নিবাণ ভট্টার্চায) থেকে এসেছে ডিরেক্টলি, হইচই থেকে আসেনি। হইচই থেকে আসলে নিশ্চয়ই জানতে পারবেন। আসলে পরেরটা আসবে কিনা সেটা অনেকটা নির্ভর করে দর্শকদের ওপর। আমি যখন ‘মহানগর -১’ করলাম মানুষজন দেখে কথা বললো; তারপরই ‘মহানগর-২’ হয়েছে।
মহানগর-৩ কার ডিমান্ডে এগোবে ?
অবশ্যই আমার ডিমান্ডে এগোবে, দর্শকদের ডিমান্ডে না। দর্শকদের চাপ থাকে। আমি যখনই কোনো কাজ করি, দর্শকদের ডিমান্ড চিন্তা করে করিনা। দর্শকদের চাপ থাকে সবসময়। কিন্তু গল্প যেটা চায় আমি সেটাই করি। যেমন ‘মহানগর -১’ এ এমন অনেক চরিত্র ছিলো যেগুলো দর্শকেরা পছন্দ করেছে কিন্তু গল্পের প্রয়োজনে ‘মহানগর -২’ তে সেগুলোকে আমি কন্টিনিউ করিনি। দর্শকদের প্রত্যাশা থাকতে পারে চিন্তা করেও আমি চরিত্রগুলোকে আনিনি।
আগে থেকে স্ক্রিপ্ট তৈরি না থাকলে তাৎক্ষণিক নির্মাণে কি সমস্যা থাকে ?
গল্প আসলে সবসময় আমার মাথায় থাকে। গল্প নিয়ে আমার মাথায় চর্চা চলতে থাকে। অন্যথায় আমিতো আর্টিস্ট কল দিতে পারবোনা। মহানগরে দেখা গেছে অনেকবার স্ক্রিপ্ট পাল্টেছে, প্রতিদিন গল্প বদলেছে। কারণ আমি নির্মাতা হিসেবে ওপেন থাকতে পছন্দ করি। একটা লিখেছি মানে সেটাই যে দৃশ্যায়ন হবে এমন না। পরবর্তীতে আমার যদি মনে হয় যে বিষয়টা এমন না হয়ে আরেকরকম হলে ভালো হতো,তাহলে আমি সেটাই করি। আমি নিজেই গল্পটাকে খুঁজি। আর এভাবেই কাজ করতে পছন্দ করি।
চরিত্রগুলো কি বাস্তব ঘটনা থেকে নেওয়া ?
চরিত্রগুলো পুরোপুরি আমার কল্পনাপ্রসূত। দর্শকদেরও এক প্রকার কল্পনা শক্তি থাকে। যখন কোনো নির্মাতা তার কল্পনা শক্তি দিয়ে দর্শকদের কল্পনা শক্তিকে ছুঁতে পারে তখনই দর্শকদের কাছে সেটাকে কল্পনার চেয়েও অনেক বড় সত্য বলে মনে হয়।
মহানগরের লড়াই কি শাসক-শোষিতের লড়াই নয় ?
অবশ্যই, সিস্টেম তো এটা। সিস্টেমের অনেক ফাঁক-ফোঁকর থাকে। সিস্টেমের অনেক সুবিধাভোগীও থাকে। অন্যায়ভাবে সিস্টেমের সুবিধা নেয়। এই কারণে আমার ওই ডায়লগটা ,‘ সিস্টেমের কোণায় কোণায় ‘ভূত’। এই ভূতেদের সাথে পাল্লা দেওয়ার গল্পটাই হচ্ছে মহানগর। অর্থাৎ আমি যা বলার আমার গল্পতেই বলে দিয়েছি।
‘ভূতেদের’ কতোটা ভয় পান আশফাক নিপুন?
মহানগরের ‘ভূতেদের’ কথা বলছেন? আমি আসলে মহানগরের ‘ভূতেদের’ ভয় পাই না। ভয় পাইনা আসলে এই একটা কারণে, আমরা অনেক বড়ো বড়ো ‘ভূতদের’ পরাস্ত করে এই স্বাধীন বাংলাদেশটা পেয়েছি। আমাদের ইতিহাসেই তো আছে, আমরা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এসেছি এবং জিতে এসেছি। আমরা স্বাধীন একটা জাতি। অনেক বড়ো বড়ো বিদেশি ‘ভূতদের’ তাড়িয়ে এ দেশটা পেয়েছি। সুতরাং আমার দেশি ‘ভূতেদের’ ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নাই।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে নির্দিষ্টভাবে এমন কাজ হয়নি, চট্টগ্রামের ছেলে হওয়ায় কি সাহসটা করলেন?
চাটগাঁইয়া ছেলে হওয়াতে হয়তো একটু সাহস বেশি। পাহাড় সমুদ্রের মাঝে বেড়ে ওঠায় প্রকৃতিগতভাবে অন্যদের তুলনায় আমার তেজটা একটু বেশি। তারপরও দিনশেষে এটা তো একটা রাজনৈতিক গল্প। এই গল্প নির্মাণের সাহসটা পেয়েছি আমাদের সংবিধান থেকে।