গবেষণা: এ সময়ের বেশিরভাগ শিশুরই ১০০ বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই

সুপ্রভাত ডেস্ক »
জে ওলশানস্কি মানুষের দীর্ঘায়ু নিয়ে বহু আগে থেকেই নানা মতামত প্রকাশ করে আসছেন। কয়েক দশক আগে তিনি ও তার সহকর্মীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আজকের শিশুরা গড়ে মাত্র ৮৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবেন। ওলশানস্কি শিকাগোর ইলিনয় ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ স্কুলের প্রফেসর। তার ধারণামতে, বর্তমান সময়ের শুধু ১ থেকে ৫ শতাংশ শিশুই ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচতে পারবেন। ওলশানস্কি বলেন, ‘১৯৯০ সালে আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম যে, মানুষের আয়ু বৃদ্ধির হার কমে যাবে। তখন বহু মানুষ আমাদের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করেছিলেন। কেননা তাদের মতে চিকিৎসাশাস্ত্র ও আয়ু বৃদ্ধিতে সহায়ক প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মানুষের আরও দীর্ঘায়ু হবে।’
ওলশানস্কির মন্তব্যের ৩৪ বছর পর যেন তার কথাই সত্য হতে যাচ্ছে। তিনি ও তার সহকর্মীরা গত সোমবার ন্যাচার এইজিং জার্নালে মানুষের আয়ু সম্পর্কিত একটি গবেষণা প্রকাশ করেছেন। যেখানে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, হংকং, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, সুইডেন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের আয়ু পর্যালোচনা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৯ সালে জন্ম নেওয়া মেয়ে শিশুদের ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচার সম্ভাবনা মাত্র ৫.১ ভাগ। আর ছেলে শিশুদের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা মাত্র ১.৮ ভাগ। ওলশানস্কি বলেন, ‘আমরা আমাদের অনুমানটি পরীক্ষা করার জন্য ৩০ বছর অপেক্ষা করেছি। এখন আমরা দেখাতে পেরেছি যে, মানুষের আয়ু দ্রুত বৃদ্ধির যুগ শেষ হয়ে গেছে। যেমনটা আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম।’ ওলশানস্কি আরও বলেন, ‘মানুষের আয়ু এখনও বাড়ছে। তবে আগের দশকের তুলনায় এর গতি তুলনামূলক ধীরে।’
সিএনএন-এর পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসা করা হয়, অনেকের ধারণা মানুষ শীঘ্রই ১২০ এমনকি ১৫০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচতে পারবে। আপনি কীভাবে এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলির সাথে আপনার গবেষণা ফলাফলের সমন্বয় করছেন? জবাবে ওলশানস্কি বলেন, ‘এই সংখ্যাগুলো সব বানানো। আয়ু বৃদ্ধির এই অতিরঞ্জিত দাবিগুলিকে পরীক্ষামূলকভাবে যাচাই করার কোন উপায় নেই। আমাদের গবেষণায় অতিরঞ্জন বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। কেননা এগুলো অপ্রত্যাশিত বৈজ্ঞানিক অনুমান। শুধু একজন নারী ১২২ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচেছেন।’
ওলশানস্কি আরও বলেন, ‘বার্ধক্য থামানোর বর্তমানে কোনো উপায় নেই। এটি আপনার কোষ, টিস্যু ও অঙ্গের ক্ষয় করছে যা বর্তমানে বন্ধ করার উপায় নেই।’
গত ৩০ বছরে স্থূলতা ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো রোগগুলি ব্যাপক হারে দেখা যাচ্ছে। সিএনএন-এর পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, আয়ু বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এগুলো কি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে? ওলশানস্কি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের মাঝে স্থূলতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি নানা অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। ২০০৫ সালে আমি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলাম। যেখানে বলেছিলাম এই প্রথম প্রজন্মের শিশুরা স্থূলতার কারণে তাদের পিতামাতার চেয়ে কম সময় বাঁচবে।’
মানুষ ১৫০ বছর কিংবা এরচেয়েও বেশি বয়স বাঁচবে; এমন কথাগুলো বলা হয় নানা প্রাণীর ওপর গবেষণা করে। ইঁদূর তো আর মানুষ না; এই কথা সত্য৷ সিএনএন-এর পক্ষ থেকে তবুও ওশানেস্কির কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, এইসব গবেষণা কী আপনাকে আশাবাদী করে?
জবাবে ওলশানস্কি বলেন, ‘আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে যে, দীর্ঘায়ু নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিপ্লব দেখা দিয়েছে। গবেষকরা মাছি, কৃমি, ইঁদুর ইত্যাদি প্রাণীর জৈবিক বার্ধক্য কমাতে সফল হচ্ছেন। যা মানুষের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে মানবজাতিকে পথ পরিবর্তনের দ্বিতীয় সুযোগ দিচ্ছে।’
ওলশানস্কি বলেন, ‘বার্ধক্য নিয়ে কাজ করার বিষয়টি অনেকটা এমনই। এক্ষেত্রে মৌলিক জৈবিক প্রক্রিয়া পরিবর্তনের দরজা আমাদের জন্য উন্মুক্ত। যাই হোক, কিছু গবেষক এই প্রাণীর মডেলগুলির ফলাফল হিসেবে নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তারা ধরে নিয়েছেন যে, আপনি যদি একটি ইঁদুরের আয়ুষ্কাল দ্বিগুণ বা তিনগুণ করতে পারেন তবে আপনি মানুষের জীবনকালও দ্বিগুণ বা তিনগুণ করতে পারবেন।’
‘আমার কোন সন্দেহ নেই যে, আমরা এই স্বল্পকাল জীবিত প্রজাতির আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারছি। তবে এমন কোন প্রমাণ নেই যে, এটি একইভাবে মানুষের আয়ুও সমান গতিতে বৃদ্ধি করতে পারে। কিন্তু আপনি যদি জিজ্ঞাসা করেন যে, এটা কি আমাদের আয়ু দীর্ঘ করতে পারে? উত্তর হবে, হ্যাঁ, পারে। তবে তা কতটুকু সেটা আমরা জানি না”, যোগ করেন তিনি। সূত্র: সিএনএন, অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান