নগরবাসীর আবাসন সমস্যা সমাধানের ১৯৯৫ সালে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর পাড় ঘেঁষে কল্পলোক আবাসিক প্রকল্প গড়ে তোলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আবাসিক এলাকাটিতে বসবাসকারীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজারের মতো হবে। এলাকাটিতে খেলার মাঠের জন্য প্রায় এক একর জায়গা রাখা হলেও সেটি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন না বাসিন্দারা। বাসিন্দারের ভাষ্য, প্রায় পাঁচ বছর ধরে খেলার মাঠটি দখল করে আছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
মাঠের এক পাশে পাথর-বালির স্তূপ, অন্যপাশে ট্রাক ও লরির সারি। মাঝখানে রাখা হয়েছে দুটি সিমেন্ট মিশ্রণের যন্ত্র। এমনকি আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কবরস্থানের জায়গাটি পর্যন্ত দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে বাসিন্দারা।
বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীরা খেলার মাঠ দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে অবশেষে। কল্পলোক খেলার মাঠে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে একটি র্যালি বের করা হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কল্পলোক আবাসিক এলাকার খেলার মাঠটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘বিশ্বাস ট্রেডিং অ্যান্ড কন্সট্রাকশন’ অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। তারা মাঠে নির্মাণসামগ্রী রেখেছে। সিমেন্টের প্ল্যান্ট স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিশু-কিশোরদের সুস্থ বিনোদন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিশুরা জানায়, এলাকার একমাত্র খেলার মাঠটি বেদখল হওয়ায় তারা বিনোদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দ্রুত নির্মাণসামগ্রী অপসারণ করে খেলার মাঠ উন্মুক্ত করে দেয়ার আহবান জানায় তারা।
চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিকরা খেলার মাঠ দখলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। নগরীর খেলার মাঠে মেলা আয়োজন ও মাঠ বাণিজ্যিক লক্ষ্যে ব্যবহার করায় তরুণ-কিশোররা খেলাধুলা করা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এতে করে তরুণ-কিশোররা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। চট্টগ্রামের নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন আউটার স্টেডিয়ামের সে অবস্থা ছিল কিছুদিন আগেও, যে মাঠে অনুশীলন করে, খেলাধুলা করে সৃষ্টি হয়েছে নন্দিত ক্রিকেটার, ফুটবলার। সেই আউটার স্টেডিয়ামে খেলার বা অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছিল না খেলোয়াড়-শিক্ষার্থীরা। বাণিজ্যমেলা, বস্ত্রমেলা, বৃক্ষমেলা, হস্ত-কুঠির শিল্পমেলাসহ বিভিন্ন ধরনের মেলা-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হতো মাঠটি। খেলার দলগুলোর অনুশীলন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে ভালো খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছিল না। অবশেষে খেলার মাঠে কোনও মেলা হবে না বলে ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান মাঠগুলো উদ্ধার করে খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে নগরবাসীর ধন্যবাদার্হ হয়েছেন।
আমরা এবার আশা করব, কল্পলোকের মাঠ ও কবরস্থান দখলমুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদোগ নেওয়া হবে। বারবার মাঠের দাবিতেই কেন খেলোয়ার, শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের আন্দোলন ও মানববন্ধন করতে হবে? এটা তো সরকারেরই দায়িত্ব সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তোলার জন্য খেলার মাঠ এবং চিত্তবিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা।