খেলাপির ঘাড়ে সওয়ার প্রভিশন ঘাটতি, বাড়ছে লাফিয়ে

সুপ্রভাত ডেস্ক  »

ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রভিশন সংরক্ষণ ঘাটতির পরিমাণও বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৩৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

তিন মাস আগে জুন শেষে ঘাটতি ছিল ২৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। তিন মাসে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ৩০ হাজার ৫৬৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। প্রভিশন হলো আমানতের এক ধরনের রক্ষাকবজ, যা খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে সংরক্ষণ করতে হয়। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রভিশন সংরক্ষণে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আরোপিত বাধ্যবাধকতাও বৃদ্ধি পায়। তিন ধরনের খেলাপি ঋণ— ব্যাড অ্যান্ড লস বা মন্দমান, ডাউটফুল বা মধ্যম মানের খেলাপি এবং সাসপেক্টেড বা প্রাথমিক মানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে যথাক্রমে শতভাগ, ৫০ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে বিতরণ না করে ওই অর্থ ব্যাংকগুলোকে সংরক্ষণ করতে হয়। এর ফলে প্রভিশনের অর্থ থেকে কোনো মুনাফাও আসে না। খবর বাংলানিউজ।

সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণস্থিতির (আউটস্ট্যান্ডিং) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এক লাখ ৮১ হাজার ৫৯১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো সংরক্ষণ করেছে এক লাখ ২৬ হাজার ২১৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার ৩৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ঘাটতি প্রভিশনের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ৪০ হাজার ২০৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা; বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১৫ হাজার ৮৩১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ঘাটতি ২৩৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। একই সময়ে দেশে ব্যবসারত বিদেশি ব্যাংকগুলো বাড়তি প্রভিশন রয়েছে। তিন মাস আগে চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রভিশন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ১৬৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলো প্রভিশন রেখেছিল ৮৯ হাজার ৩৫৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৪ লাখ ৮১০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে প্রভিশন সংরক্ষণকে লাগাম হিসেবে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঋণ খেলাপি হয়ে পড়লেই ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারে টান পড়বে। শেয়ারহোল্ডারদের মাঝে মুনাফা বিতরণ না করে খেলাপি ঋণের বিপরীতে সংরক্ষণ করতে হয়, যাতে আমানতকারী চাইলেই দিতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রায় সব ব্যাংকসহ অনেক ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়। আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বড় বড় গ্রাহকদের অনেকে জেলে, অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন এবং অনেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। অনেক গ্রাহকের প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক অসন্তোষ থাকায় শেষ তিন মাসের ঋণের কিস্তি দিতে পারেননি। অনেকে ইচ্ছা করেও দিচ্ছেন না। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে অনেকে ঋণ পরিশোধ করতে চাচ্ছেন না। তাদের এই প্রবণতা মন্দ ঋণের বোঝা আরও বাড়াতে পারে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের বড় অংশ অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে। ফলে এসব ঋণ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব কারণে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতি।